ETV Bharat / state

কাটা মুণ্ডু কোথায়? দত্তপুকুর-কাণ্ডে মূল অভিযুক্তকে জেরায় হদিস পেল পুলিশ - DUTTAPUKUR MURDER CASE

দত্তপুকুর থানায় নিয়ে যাওয়ার পর জম্মু থেকে এরাজ‍্যে নিয়ে আসা জলিলকে দফায় দফায় জেরা করেন জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা। আর তাতেই জট খোলে ৷

DUTTAPUKUR MURDER CASE
দত্তপুকুর খুন কাণ্ড (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 16, 2025, 11:01 AM IST

দত্তপুকুর, 16 ফেব্রুয়ারি: দত্তপুকুর-কাণ্ডে রহস্যের জট খোলা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা পুলিশের ৷ দেহ উদ্ধারের 13 দিন পরেও ব্যক্তির কাটা মুণ্ডুর খোঁজ না-মিললেও ধৃত মূল অভিযুক্ত জলিলকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সেই কাটা মুণ্ডু কোথায় রেখেছে সে ৷

এই সংক্রান্ত তথ্যও উঠে এসেছে বারাসত জেলা পুলিশের হাতে। সূত্রের খবর, দত্তপুকুর ও তার আশেপাশের কোনও এলাকাতেই জলিল হজরতের কাটা মুণ্ডু লুকিয়ে রেখেছে। তাই, পুলিশের আশা দু-এক দিনের মধ্যেই উদ্ধার হয়ে যাবে ব্যক্তির কাটা মুণ্ডু। এদিকে, শনিবার রাতে ট্রানজিট রিমান্ডে জম্মু থেকে এরাজ‍্যে নিয়ে আসা হয় দত্তপুকুর-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত মহম্মদ জলিল গাজিকে। এরপর দত্তপুকুর থানায় নিয়ে যাওয়ার পর তাকে দফায় দফায় জেরা করেন জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা। আর তাতেই জট খোলে বলে জানা যায় ৷

HEADLESS BODY RECOVERED
নিহত ব্যক্তি হজরত লস্কর (ইটিভি ভারত)

এবিষয়ে বারাসত জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খাড়িয়া বলেন, "সাত দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে মূল অভিযুক্ত জলিলকে জম্মুর সাম্বা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে বাংলায়। তাকে জেরা করে কাটা মুণ্ডুর বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই তা বলা সম্ভব নয়। আশা করছি, দ্রুত ব্যক্তির কাটা মুণ্ডুর খোঁজ পাওয়া যাবে। পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে ধৃতকে আজ, রবিবার তোলা হবে বারাসত জেলা আদালতে।" ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হলে ব্যক্তি খুনে আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলে আশাবাদী তিনি।

সূত্রের খবর, পুলিশের প্রাথমিক জেরায় ইতিমধ্যে ধৃত জলিল খুনের কথা স্বীকার করেছে। তদন্তকারীদের সে জানিয়েছে, ঘাস কাটার হেসো দিয়ে এক কোপে হজরতের মুণ্ডু ধড় থেকে আলাদা করে দিয়েছে। এমনকী, ব্যক্তির পরিচয় লুকাতে সেই মুণ্ডু নিয়ে চলে যায় জলিল। যার হদিশ এখনও মেলেনি। দেহ উদ্ধারের পর প্রথমে পুলিশের ধারণা হয়েছিল, ঘটনাস্থলের কাছে বাজিতপুর খালে হয়তো ফেলে দেওয়া হয়েছে ব্যক্তির কাটা মুণ্ডু!কিন্তু, ডুবুরি নামিয়ে টানা দু'দিন ধরে খালে তল্লাশি চালিয়েও মেলেনি মুণ্ডু।

এরপরই তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়ে যান, অন্য কোথাও কাটা মুণ্ডুটি লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু কে রাখল? এই প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছে, তখনই পুলিশের সামনে আসে মহম্মদ জলিল গাজির নাম। পুলিশ জানতে পারে, গত 3 ফেব্রুয়ারি থেকে বামনগাছির ভাড়া বাড়ি থেকে উধাও সে। এরপর, তদন্তকারীরা বামনগাছি, শিয়ালদা-সহ একাধিক রেল স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেন। আর তখনই কলকাতা স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে মহম্মদ জলিলের গতিবিধি ধরা পড়ে।

দেখা যায়, ওই দিন সে জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠছেন। তার পরেই বারাসত জেলা পুলিশের একটি টিম জলিলের খোঁজে পাড়ি দেয় জম্মুর উদ্দেশে। সেখান থেকে 40 কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী সাম্বা গ্রাম থেকে হাতেনাতে পাকড়াও করা হয় খুনের এই মাস্টারমাইন্ডকে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাম্বা থেকে 10 কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে ভারত-পাকিস্তান বর্ডার। সেই বর্ডার টপকে একসময় পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পরিকল্পনাও নিয়েছিল মহম্মদ জলিল। কিন্তু, বর্ডারে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা থাকায় সে সাহস আর হয়নি। শেষে পুলিশে চোখে ধুলো দিতে সীমান্তবর্তী সাম্বা গ্রামে ভাঙাচোরা লোহা লক্করের দোকানে কাজ নেয় সে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বুধবার সেখান থেকেই ধরা পড়ে যান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত 3 ফেব্রুয়ারি দত্তপুকুরের ছোট জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের মালিয়াকুর এলাকার একটি চাষের জমি থেকে বছর চল্লিশের বছরের এক ব্যক্তির মুণ্ডুহীন দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রমাণ লোপাটে দেহটি'র হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। যৌনাঙ্গও ছিল ক্ষতবিক্ষত। হাড়হিম করা সেই ঘটনার দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিল গোটা মালিয়াকুর গ্রাম। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা মদের গ্লাস, চিপ্সের বেশ কিছু প্যাকেটও খুঁজে পেয়েছিল পুলিশ। ঘটনার দু'দিনের মাথায় ব্যক্তির বাঁ-হাতের ট‍্যাটু ও পোশাকের ছেঁড়া অংশের সূত্র ধরে পরিচয় মেলে ব্যক্তির।

জানা যায়, নিহত ব্যক্তির নাম হজরত লস্কর। আদতে তিনি দক্ষিণ 24 পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা হলেও বছর খানেক ধরে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গাইঘাটার আঙুলকাটা গ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন। খুনের আগের রাতে সেখান থেকেই তাঁকে ফোনে ডেকে আনেন জলিল। তারপর হজরতকে নিয়ে আসা হয় বামনগাছিতে। জলিলের ভাড়া বাড়িতে আনার পর সেখানেই খুনের যাবতীয় পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে হজরতের মামাতো ভাই ওবায়দুল গাজি, প্রাক্তন প্রেমিকা ও তাঁর পরিচিত বান্ধবীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খুনে ব‍্যবহৃত অস্ত্রটিও বাজেয়াপ্ত হয়েছে জলিলের ভাড়া বাড়ি থেকে। পাশাপাশি, সেখান থেকে মিলেছে পোড়া গেঞ্জি এবং মাথার চুলও।

দত্তপুকুর, 16 ফেব্রুয়ারি: দত্তপুকুর-কাণ্ডে রহস্যের জট খোলা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা পুলিশের ৷ দেহ উদ্ধারের 13 দিন পরেও ব্যক্তির কাটা মুণ্ডুর খোঁজ না-মিললেও ধৃত মূল অভিযুক্ত জলিলকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সেই কাটা মুণ্ডু কোথায় রেখেছে সে ৷

এই সংক্রান্ত তথ্যও উঠে এসেছে বারাসত জেলা পুলিশের হাতে। সূত্রের খবর, দত্তপুকুর ও তার আশেপাশের কোনও এলাকাতেই জলিল হজরতের কাটা মুণ্ডু লুকিয়ে রেখেছে। তাই, পুলিশের আশা দু-এক দিনের মধ্যেই উদ্ধার হয়ে যাবে ব্যক্তির কাটা মুণ্ডু। এদিকে, শনিবার রাতে ট্রানজিট রিমান্ডে জম্মু থেকে এরাজ‍্যে নিয়ে আসা হয় দত্তপুকুর-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত মহম্মদ জলিল গাজিকে। এরপর দত্তপুকুর থানায় নিয়ে যাওয়ার পর তাকে দফায় দফায় জেরা করেন জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা। আর তাতেই জট খোলে বলে জানা যায় ৷

HEADLESS BODY RECOVERED
নিহত ব্যক্তি হজরত লস্কর (ইটিভি ভারত)

এবিষয়ে বারাসত জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খাড়িয়া বলেন, "সাত দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে মূল অভিযুক্ত জলিলকে জম্মুর সাম্বা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে বাংলায়। তাকে জেরা করে কাটা মুণ্ডুর বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই তা বলা সম্ভব নয়। আশা করছি, দ্রুত ব্যক্তির কাটা মুণ্ডুর খোঁজ পাওয়া যাবে। পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে ধৃতকে আজ, রবিবার তোলা হবে বারাসত জেলা আদালতে।" ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হলে ব্যক্তি খুনে আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলে আশাবাদী তিনি।

সূত্রের খবর, পুলিশের প্রাথমিক জেরায় ইতিমধ্যে ধৃত জলিল খুনের কথা স্বীকার করেছে। তদন্তকারীদের সে জানিয়েছে, ঘাস কাটার হেসো দিয়ে এক কোপে হজরতের মুণ্ডু ধড় থেকে আলাদা করে দিয়েছে। এমনকী, ব্যক্তির পরিচয় লুকাতে সেই মুণ্ডু নিয়ে চলে যায় জলিল। যার হদিশ এখনও মেলেনি। দেহ উদ্ধারের পর প্রথমে পুলিশের ধারণা হয়েছিল, ঘটনাস্থলের কাছে বাজিতপুর খালে হয়তো ফেলে দেওয়া হয়েছে ব্যক্তির কাটা মুণ্ডু!কিন্তু, ডুবুরি নামিয়ে টানা দু'দিন ধরে খালে তল্লাশি চালিয়েও মেলেনি মুণ্ডু।

এরপরই তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়ে যান, অন্য কোথাও কাটা মুণ্ডুটি লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু কে রাখল? এই প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছে, তখনই পুলিশের সামনে আসে মহম্মদ জলিল গাজির নাম। পুলিশ জানতে পারে, গত 3 ফেব্রুয়ারি থেকে বামনগাছির ভাড়া বাড়ি থেকে উধাও সে। এরপর, তদন্তকারীরা বামনগাছি, শিয়ালদা-সহ একাধিক রেল স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেন। আর তখনই কলকাতা স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে মহম্মদ জলিলের গতিবিধি ধরা পড়ে।

দেখা যায়, ওই দিন সে জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠছেন। তার পরেই বারাসত জেলা পুলিশের একটি টিম জলিলের খোঁজে পাড়ি দেয় জম্মুর উদ্দেশে। সেখান থেকে 40 কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী সাম্বা গ্রাম থেকে হাতেনাতে পাকড়াও করা হয় খুনের এই মাস্টারমাইন্ডকে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাম্বা থেকে 10 কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে ভারত-পাকিস্তান বর্ডার। সেই বর্ডার টপকে একসময় পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পরিকল্পনাও নিয়েছিল মহম্মদ জলিল। কিন্তু, বর্ডারে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা থাকায় সে সাহস আর হয়নি। শেষে পুলিশে চোখে ধুলো দিতে সীমান্তবর্তী সাম্বা গ্রামে ভাঙাচোরা লোহা লক্করের দোকানে কাজ নেয় সে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বুধবার সেখান থেকেই ধরা পড়ে যান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত 3 ফেব্রুয়ারি দত্তপুকুরের ছোট জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের মালিয়াকুর এলাকার একটি চাষের জমি থেকে বছর চল্লিশের বছরের এক ব্যক্তির মুণ্ডুহীন দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রমাণ লোপাটে দেহটি'র হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। যৌনাঙ্গও ছিল ক্ষতবিক্ষত। হাড়হিম করা সেই ঘটনার দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিল গোটা মালিয়াকুর গ্রাম। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা মদের গ্লাস, চিপ্সের বেশ কিছু প্যাকেটও খুঁজে পেয়েছিল পুলিশ। ঘটনার দু'দিনের মাথায় ব্যক্তির বাঁ-হাতের ট‍্যাটু ও পোশাকের ছেঁড়া অংশের সূত্র ধরে পরিচয় মেলে ব্যক্তির।

জানা যায়, নিহত ব্যক্তির নাম হজরত লস্কর। আদতে তিনি দক্ষিণ 24 পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা হলেও বছর খানেক ধরে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গাইঘাটার আঙুলকাটা গ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন। খুনের আগের রাতে সেখান থেকেই তাঁকে ফোনে ডেকে আনেন জলিল। তারপর হজরতকে নিয়ে আসা হয় বামনগাছিতে। জলিলের ভাড়া বাড়িতে আনার পর সেখানেই খুনের যাবতীয় পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে হজরতের মামাতো ভাই ওবায়দুল গাজি, প্রাক্তন প্রেমিকা ও তাঁর পরিচিত বান্ধবীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খুনে ব‍্যবহৃত অস্ত্রটিও বাজেয়াপ্ত হয়েছে জলিলের ভাড়া বাড়ি থেকে। পাশাপাশি, সেখান থেকে মিলেছে পোড়া গেঞ্জি এবং মাথার চুলও।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.