কলকাতা, 27 নভেম্বর: বাংলাদেশে সনাতনী নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সরগরম এপার বাংলা ৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বুধবার সাতজন বিজেপি বিধায়কের একটি দল ডেপুটেশন দিলেন বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে ৷ এই ইস্যুতে পেট্রাপোলে অবরোধ-সহ একগুচ্ছ কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে বঙ্গ বিজেপি ৷ বাংলাদেশিদের ভিসা সম্পূর্ণ বন্ধ করার দাবিতে সরব হন শুভেন্দু ৷ তাঁর দাবি, "মেডিক্যাল ভিসাও বন্ধ করে দিতে হবে । চিকিৎসা করাতে করাচি, লাহোরে যান, এখানে আসবেন না ।"
একই দাবিতে আজ বালিগঞ্জ ইসকন মন্দির থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশন পর্যন্ত প্রতিবাদী মোমবাতি মিছিল করে প্রদেশ কংগ্রেস ৷ এদিকে, সনাতনী নেতার গ্রেফতারির নিন্দা করেছে তৃণমূল কংগ্রেসও ৷ তবে আন্তর্জাতিক এই বিষয় নিয়ে বাংলায় কেন প্রতিবাদ হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ ৷
কুণাল এদিন বলেন, "আমরা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলতে পারি না ৷ কারণ এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা ৷ আমাদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে তাঁর মতামত স্পষ্ট করেছেন । পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য এই নিয়ে কিছু করতে পারে না ৷ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দেশের বিদেশমন্ত্রক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে । তাই এখানে প্রতিবাদ না করে বঙ্গ বিজেপির উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের আবেদন করা । আমরা ইসকন নেতার গ্রেফতারির নিন্দা করছি ৷ কিন্তু বিজেপি এই নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে ।"
বাংলাদেশে সনাতনীদের উপর অত্যাচার ও বাংলাদেশের হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষার অন্যতম মুখ বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আজ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে স্মারকলিপি জমা দেন বিজেপি বিধায়করা ৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, "ডেপুটি হাইকমিশনের আধিকারিকরা পুরো বিষয়টা ওই দেশে দূতাবাসকে জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ৷ তবে এর থেকে বেশি বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের আর কিছু করার নেই ।"
সনাতনী নেতার গ্রেফতার প্রতিবাদে এদিন একগুচ্ছ কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে বঙ্গ বিজেপি । আগামী সোমবার পেট্রাপোলে সকাল 10টা থেকে পণ্যবাহী গাড়ি অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে । সেই কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন বিরোধী দলনেতা । তবে যাত্রীবাহী গাড়ি বা অন্যান্য গাড়ির কোনও রকম অসুবিধা না করেই এই কর্মসূচি চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে ।
এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারির সুরে শুভেন্দু বলেন যে, আগামী 48 ঘণ্টা নজর থাকবে বাংলাদেশের উপর । মন্দিরের সুরক্ষা, চিন্ময় প্রভুর মুক্তি এবং সনাতনীদের উপর মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে হবে । প্রয়োজন হলে 16 ডিসেম্বর অর্থাৎ বিজয় দিবসের দিন বিজেপি কলকাতায় মহাসমাবেশ ডাকারও উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানান শুভেন্দু ৷
এদিন এই নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও তোপ দেগে বিরোধী দলনেতা বলেন, "এখানে ব্যারিকেড লাগিয়েছে এক হাজার পুলিশ এবং আটজন আইপিএস রেখেছে । মহম্মদ ইউনুস যার জোরে ওখানে এইসব করছেন তাদেরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে লালিত পালিত করছেন । সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর বক্তব্য শুনেই বোঝা যাবে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাদের নিয়ে বাংলাকে চালাচ্ছেন । হিন্দুদের উপর আক্রমণ হলে এরা তাঁদের সুরক্ষা দেবে না । একমাত্র নরেন্দ্র মোদিই এদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন ।" তাহলে কি এখন এদেশ হিন্দুরাষ্ট্র হওয়ার সময় এসেছে ?এই প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু বলেন যে, "500 বছর পর রামমন্দির হয়েছে, তাই প্রয়োজন হলে সবকিছুই হবে । তাই তো ভারতের নাম হিন্দুস্থান ।"
এদিকে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভুর অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে এদিন মিছিল করে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি ৷ সেই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার । তিনি বলেন, "বাংলাদেশে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ইসকনের পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভুর সাম্প্রতিক গ্রেফতার আতঙ্কজনক । তিনি ভক্তি আন্দোলন অন্তর্ভুক্তি ও অহিংসার প্রচার করেন । এই কারণেই রাহুল গান্ধির মতো নেতারা সর্বদা সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মহাত্মা গান্ধির অহিংসার নীতিগুলিতে মনোনিবেশ করেন । ধর্মনিরপেক্ষতা সব ধর্মের জন্য সমান এবং সর্বোচ্চ সম্মান নিশ্চিত করে । ধর্মীয় অনুরাগ এবং আনুগত্যের জন্য কারওকে শাস্তি দেওয়া উচিত নয় ।"
এদিন এ প্রসঙ্গে বিজেপিকেও একহাত নিয়ে শুভঙ্কর বলেন, "বাংলাদেশে হিন্দুদের সঙ্গে এবং ভারতে মুসলমানদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকার যে আচরণ করেছে তা হতাশাজনক । আমি বাংলাদেশে ইসকনের পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভুকে গ্রেফতারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নিন্দা জানাই এবং সম্ভলের সাম্প্রদায়িক হিংসার জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকারেরও নিন্দা জানাই ।"
বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে শুভঙ্কর আরও বলেন, "বিজেপি হিন্দুত্বের ধারক-বাহক বলে দাবি করে । কিন্তু বাস্তবে তারা সবসময় হিন্দুদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয় । কারণ, তারা বুঝতে পারে না যে ধর্মের সুরক্ষা কেবল ধর্মনিরপেক্ষতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার মাধ্যমেই সহজতর হতে পারে । এই ঘটনা বিজেপির বিদেশ নীতি এবং বহিরাগত বিষয়ে ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে । আমি আশঙ্কা করছি যে, বিদেশনীতিতে তাদের ব্যর্থতা থেকে মনোযোগ সরাতে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করবে ।"