কলকাতা, 17 সেপ্টেম্বর: বাংলায় যে আন্দোলন চলছে তার কাছে এবং বাংলার মানুষের কাছে হেরে গেলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর এমনটাই মত বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের । তবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, শুধু কয়েকজন আধিকারিককে সরিয়ে দিলেই হবে না, আরজি কর-কাণ্ডে যাঁরা প্রমাণ লোপাট করেছেন, তাঁদের গ্রেফতার করতে হবে ৷ গ্রেফতার করতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে ৷
এক্স হ্যান্ডেলে শুভেন্দু বৈঠকের কার্যবিবরণী পোস্ট করে লিখেছেন, "বৈঠকের কার্যবিবরণী দেখে মনে হচ্ছে যে, অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে উভয় পক্ষই সমঝোতা করেছে । তবে ন্যায়বিচারের জন্য শুধুমাত্র কয়েকজন আধিকারিকের বদলি যথেষ্ট হবে না । সাক্ষ্য বিকৃতিতে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের কারাগারে ঢোকাতে হবে । নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য যা কিছু ঘটেছে, তাতে শুধু কয়েকজন আধিকারিকের হাত রয়েছে এটা হতে পারে না । সকলেই জানেন যে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদেশ/নির্দেশ এবং সম্মতি ছাড়া একটি পিন বা হাতি সরানোর ঘটনাও ঘটে না । তাই এই পুরো পরিস্থিতির জন্য স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়ী । তাঁর শুধু পদত্যাগই নয়, পুরো বিষয়টিতে তাঁর ভূমিকার সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত ।"
শুভেন্দু আরও লিখেছেন, যাঁরা রাজ্যজুড়ে, দেশজুড়ে এবং বিশ্বজুড়ে 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' এবং 'জাস্টিস ফর আরজি কর' স্লোগান তুলেছেন, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষাে করুন ৷ কারণ তারাই আমাদের প্রয়াত ডাক্তার বোনের জন্য আশা এবং ন্যায়বিচারের শেষ অবলম্বন ।"
এদিকে, রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মতে, গতকালের বৈঠকে হার হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ৷ তবে তাঁর কথায়, "রাজার বাড়ির ভোজ না-আঁচানো পর্যন্ত বিশ্বাস নেই ।" রাজ্যে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলি বাস্তবায়িত না-হওয়া পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশ্বাস করতে পারবেন না বলে জানান তিনি ।
উল্লেখ্য, 35 দিন পর অবশেষে সোমবার রাতে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক হয় মুখ্যমন্ত্রীর । দীর্ঘ সময় আলোচনার পর পুলিশ ও স্বাস্থ্য প্রশাসনে বেশ কয়েকটি রদবদল করবেন বলে ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । নগরপাল বিনীত গোয়েল এবং ডিএমই ও ডিএইচএস-কে সরানোর দাবিগুলিও মেনে নেয় রাজ্য সরকার ।
এই বিষয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন, "সারা রাজ্য তথা সারা দেশে নির্যাতিতার বিচার চেয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার চাপে পড়ে ও জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিবাদের চাপে পড়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । এই আন্দোলন বাংলার দশ কোটি মানুষের । তবে রাজ্য সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলি যতক্ষণ না বাস্তবায়িত হচ্ছে ততক্ষণ মানুষ সরকারকে বিশ্বাস করতে পারছি না ।"
কয়েকটি দাবি মেনে নিলেও কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে বলে মত সুকান্ত মজুমদারের । তিনি বলেন, টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পরে এটা স্পষ্ট যে, আরজি করের ঘটনার তথ্য লোপাটের পেছনে নগরপাল বিনীত গোয়েলের হাত ছিল । আজ নগরপালকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরিয়ে দিলেন শুধুমাত্র তাঁকে আড়াল করার জন্য, তাঁকে বাঁচাবার জন্য । কিন্তু বিনীত গোয়েলকে বাঁচানো যাবে না । তাঁকে জেলে যেতেই হবে ।"
সুকান্ত আরও বলেন, "বাংলার মানুষের কাছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হেরে গেলেন । তবে শুধু এঁরাই নন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পদত্যাগ করতে হবে । তিনি নিজেই বলেছিলেন যে মানুষের স্বার্থে তিনি পদত্যাগ করতে রাজি । কারণ এই ব্যবস্থাটা পুরোটা ঘুন ধরে গিয়েছে ৷ তাই এই কয়েকজনকে সরিয়ে বলি কা বখরা বানিয়ে তিনি বাঁচতে পারবেন না । কারণ বাংলার মানুষ আর বলি কে বখরা নয় ।"