কলকাতা, 2 নভেম্বর: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের বাংলা বিভাগের উত্তরপত্র হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে শাসক ও বিরোধী শিবিরের ছাত্র সংগঠন ৷ বাম সংগঠন এসএফআই যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত ইউজি কলেজগুলির বিরুদ্ধে গাফিলতি ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছে ৷ অন্যদিকে, এই ঘটনার সমস্ত দায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্তের দিকে ঠেলেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ৷
শুক্রবার অভিযোগ ওঠে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের বাংলা বিভাগের 120 জন পরীক্ষার্থীর খাতা হারিয়ে গিয়েছে ৷ মূলত, কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ ও দক্ষিণ 24 পরগনার মিলিয়ে মোট তিনটি কলেজের স্নাতকোত্তরের বাংলার 120টি উত্তরপত্র উধাও ৷ উত্তরপত্র মূল্যায়নের পর, তার নম্বর ও খাতা কোনোটাই বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা পড়েনি বলে অভিযোগ ৷ যদিও, একটি কলেজের উত্তরপত্র মূল্যায়নের পর নম্বর জমা দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ ৷
এই ঘটনায় ছাত্র সংগঠনগুলি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই দোষারোপ করছেন ৷ এসএফআই-এর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি তাজবুল হক বলেন, "কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহ্যবাহী ও এক বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৷ 86টি বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয় ৷ আজ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে কোনোদিন উত্তরপত্র হারিয়ে যায়নি ৷ কিন্তু, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত, যে সমস্ত ইউজি কলেজে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়, সেখানেই বাংলা বিভাগের 120 জন পড়ুয়ার উত্তরপত্র হারিয়ে গেল ৷ এই ঘটনা সংশ্লিষ্ট কলেজগুলির চরম দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতিকে সামনে এনে দিয়েছে ৷"
এসএফআই-এর কলকাতার সম্পাদক মাল্যবান গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলিতে অতিসাম্প্রতিক সময়ে পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রশ্নে কোনোরকম বেনিয়ম আমরা লক্ষ্য করিনি ৷ অথচ, একের পর এক কলেজগুলিতে কখনও গণটোকাটুকি, আবার কখনও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ এসেছে ৷ নতুন করে উত্তরপত্র হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা কলেজ কর্তৃপক্ষের আসল চেহারা সামনে এনে দিল ৷ নির্দিষ্টভাবেই আমাদের দাবি, হারিয়ে যাওয়া উত্তরপত্র খুঁজে বের করতে এবং যে সমস্ত কলেজে এই ঘটনা ঘটেছে, তার নাম প্রকাশ্যে এনে তদন্তপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এই তদন্তের ভিত্তিতে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে ৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই 120 জন পরীক্ষার্থীর দায়িত্ব নিতে হবে ৷ কলেজের গাফিলতির কারণে ছাত্রদের উচ্চশিক্ষায় কোনও দাগ পড়তে দেওয়া যাবে না ৷"
অন্যদিকে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অভিরূপ চক্রবর্তী বলেন, "যাঁদের পরীক্ষার খাতা হারিয়ে গেল, তাঁদের ভবিষ্যতের কী হবে ? এই ঘটনার দায় নিয়ে উপাচার্য শান্তা দত্তর পদত্যাগ করা উচিত ৷ বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই এরকম একাধিক ইস্যুতে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব আমরা ৷"
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 120 জন পরীক্ষার্থীর খাতা হারিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে এআইডিএসও-র কলকাতা জেলা সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বহু পরিশ্রমের পরে, পরীক্ষার খাতা এইভাবে হারিয়ে যাওয়া কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত গাফিলতি ও অবহেলার উদাহরণ ছাড়া আর কিছু না ৷ আমরা কর্তৃপক্ষের এহেন ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ৷ অবিলম্বে এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি ৷ হারিয়ে যাওয়া খাতার দ্রুত হদিস করার পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের স্বার্থে যথাযত ব্যবস্থা নিতে হবে ৷"