সন্দেশখালি, 20 জানুয়ারি: সন্দেশখালি কাণ্ডে নাম জড়িয়ে যাওয়ার পর থেকেই বেপাত্তা শাহজাহান ঘনিষ্ঠ সরবেড়িয়া-আগারহাটি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান জিয়াউদ্দিন মোল্লা । 15 দিন পরেও তাঁর টিঁকিও ছুঁতে পারেনি পুলিশ। অথচ, তিনি নাকি গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন এলাকাতেই। এই পরিস্থিতিতে কার্যত লাটে উঠেছে পঞ্চায়েতের নাগরিক পরিষেবা। এর নেপথ্যেও রয়েছে সেই তৃণমূল প্রধান জিয়াউদ্দিন মোল্লার অনুপস্থিতি! ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলার ঘটনার পর থেকে তিনি আর পঞ্চায়েত মুখো হননি। তার জেরেই পরিষেবা পেতে গিয়ে প্রতি মুহুর্তে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সরবেড়িয়া, আগারহাটি এলাকার বাসিন্দাদের। না মিলছে প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা। আর না মিলছে পঞ্চায়েত প্রধানের সই! ফলে, সাধারণ মানুষকে খালি হাতেই ফিরে যেতে হচ্ছে পঞ্চায়েত অফিস থেকে।কবে এই সমস্যার সুরাহা হবে, তা কেউই স্পষ্টভাবে বলতে পারছেন না।
বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ সহ পাশ্ববর্তী বেশ কিছু অঞ্চল সুন্দরবন লাগোয়া। প্রান্তিক এই সমস্ত এলাকা মানুষের পরিষেবা অনেকাংশই নির্ভরশীল স্থানীয় প্রশাসন অর্থাৎ পঞ্চায়েতের ওপর! অথচ, দিনের পর দিন সেই নাগরিক পরিষেবায় পাচ্ছেন না সন্দেশখালি 1 নম্বর ব্লকের বাসিন্দারা। কারণ, প্রায় 15 দিন ধরে সরবেড়িয়া-আগারহাটি পঞ্চায়েতে আসছেন না সন্দেশখালি কাণ্ডের 'মাস্টারমাইন্ড' শেখ শাহজাহান ঘনিষ্ঠ পঞ্চায়েত প্রধান জিয়াউদ্দিন মোল্লা।
5 জানুয়ারি শাসকদলের দাপুটে নেতা শেখ শাহজাহানের সরবেড়িয়ার আলিশান বাড়িতে ইডি আধিকারিকদের হানা দেওয়া ঘিরে যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান ও তৃণমূল নেতা জিয়াউদ্দিন মোল্লা। সেদিনের ঘটনায় তাঁর উপস্থিতি এবং ভূমিকাও স্পষ্টত ধরা পড়েছে ভিডিয়ো ফুটেজে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকরা রক্তাক্ত হওয়ার পরও সেদিন বুক ফুলিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে জিয়াউদ্দিন মোল্লা দাবি করেন, "শেখ শাহজাহান কোনও অপরাধ করতে পারেন না। তিনি একজন জননেতা ৷" এমনকি, সেদিনের ঘটনার দায় পুরোপুরি কেন্দ্রীয় এজেন্সি এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘাড়ে চাপান শাহজাহান ঘনিষ্ঠ এই তৃণমূল নেতা।
এদিকে, ইডি'র অভিযোগের প্রেক্ষিতে ন্যাজাট থানার পুলিশ হামলার 'মাস্টারমাইন্ড' তৃণমূলের বাহুবলী নেতা শেখ শাহজাহান, সরবেড়িয়া-আগারহাটি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান জিয়াউদ্দিন মোল্লা-সহ তাঁদের ঘনিষ্ঠ একাধিক জনের নামে এফআইআর দায়ের করে। তারপর থেকেই কার্যত বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন শেখ শাহজাহান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ পঞ্চায়েত প্রধান জিয়াউদ্দিন মোল্লা। যেহেতু জিয়াউদ্দিন পঞ্চায়েত প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। সেহেতু তাঁর গরহাজিরা ঘিরে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়েছেন সরবেড়িয়া ও আগারহাটির প্রান্তিক এলাকার মানুষজন। শনিবারও তাঁর দেখা না পেয়ে খালি হাতে পঞ্চায়েত অফিস থেকে ফিরে যেতে হয়েছে অনেককেই।তাঁদেরই একজন সরবেড়িয়ার বাসিন্দা মল্লিকা সর্দার।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, "গত চারদিন ধরে পঞ্চায়েত অফিসে আসছি। অথচ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কারণ, পঞ্চায়েত প্রধান ঘটনার পর থেকেই আসছেন না। এর ফলে থমকে গিয়েছে নাগরিক পরিষেবা। ছ'মাস আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলাম। মোবাইলে মেসেজ এসেছে। কিন্তু, তারপরও টাকা ঢুকছে না আমার। কেন এই সমস্যা তা জানতেই এদিন পঞ্চায়েতে আসা। এসে তো দেখলাম তালা মারা। কেউ নেই।তাই, ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছি ৷" মেহবুর মোল্লা নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, "কেন আসছে না তা বলতে পারব না। তবে, সমস্যা তো হচ্ছেই ৷" অন্যদিকে, প্রধানের অনুপস্থিতিতে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান-সহ অন্যান্যদের তো নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার কথা ! তিনি না থাকলে কি পরিষেবা পাবেন না সাধারণ মানুষ ? উত্তর অবশ্য মেলেনি!
আরও পড়ুন: