কাটোয়া, 3 অক্টোবর: সাপে কামড়ে মৃত্যু হল পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রের ৷ নাম ইন্দ্রজিৎ মাঝি (12)। কাটোয়ার কোশিগ্রাম ইউনিয়ন ইনস্টিটিউটের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল । এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে স্কুলে চড়াও হয় গ্রামবাসীরা । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ ।
স্থানীয় ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার ওই ছাত্রটি স্কুলে আসে । সেদিন তার পায়ে কিছুতে কামড়ে দেয় বলে জানায় । স্কুলের এক শিক্ষক তার পায়ে ডেটল ও বরফ লাগিয়ে দেয় । পরে স্কুল ছুটি হলে অন্যান্য দিনের মতো বাড়ি গিয়ে ভাত খেয়ে টিউশন পড়তে চলে যায় । টিউশন পড়তে গিয়ে তারা মাথা ঘুরতে থাকে । ফলে ছুটি দিয়ে দেন গৃহশিক্ষক । এরপর বাড়ির লোক তাকে নিয়ে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে যায় । তখন তারা দেখে পায়ে একটা ছোট্ট কাটা দাগ আছে । সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে । তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাত্রটির মৃত্যু হয় ।
ইন্দ্রজিতের পরিবারের অভিযোগ, ছাত্রটির পায়ে কিছুতে কামড়ালেও স্কুলের শিক্ষকরা সেটাকে গুরুত্ব দেয়নি । এমনকি বাড়িতে খবর দেওয়া কিংবা তাকে ছুটিও দেয়নি । তাদের গাফিলতির জন্যই ছাত্রটির মৃত্যু হয়েছে । যদিও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রকে যদি স্কুলে কিছুতে কামড়াত তাহলে তো স্কুলের কোনও না কোনও শিক্ষক শিক্ষিকা কিংবা ছাত্রছাত্রীদের কেউ না কেউ তো জানত ৷ তাহলে তো তারা চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন । তবে ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক । আজ বৃহস্পতিবার স্কুল খুললে অভিভাবক ও গ্রামবাসীরা স্কুলে চড়াও হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়ে ভাঙচুর চালায় ৷ তারা প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করার দাবি জানায় । পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যায় । পরে পুলিশ প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করে ।
এই বিষয়ে মৃতের আত্মীয় কার্তিক মাঝি বলেন, "স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে আসে । তখন দেখি পায়ে কাটা দাগ । ও বলেছিল কাটা জায়গায় স্কুলে বরফ লাগিয়ে দিয়েছে । স্কুলছুটির পরে বাড়িতে এসে ভাতও খায় । এদিকে তার পায়ে জ্বালা করছিল । পরে আবার টিউশন পড়তে যায় । সেখানে মাথা ঘুরে যায় । তখন একটা ছেলে ওকে বাড়িতে দিয়ে চলে যায় । তারপর তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই । সেখানেই মারা যায় ।"
মৃতের কাকা বিশ্বজিৎ মাঝি বলেন, "স্কুলে খেলা করতে করতে পায়ে কিছুতে কামড়ে দেয় । স্কুলে একজন মাস্টারমশাই পায়ে ডেটল ও বরফ লাগিয়ে দেয় । তাকে বাড়িও পাঠিয়ে দেয়নি আবার ফোন করেও জানায়নি । ফলে আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি । স্কুল ছুটি হলে সে বাড়ি আসে । ভাত খায় । তারপর ফোন ঘাঁটছিল । এরপর ছেলেটা প্রাইভেট পড়তে চলে যায় । আমিও কাজে চলে যাই । প্রাইভেট পড়তে গিয়ে সেখানে তার মাথা ঘুরছিল বলে তাকে ছুটি দিয়ে দেয় । আমি বাড়ি থেকে ফোন পেয়ে বাড়িতে এসে স্থানীয় একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই । দেখি পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে । স্কুলের প্রধান শিক্ষকের শাস্তি চাই আমরা ।"
স্কুলের প্রধান শিক্ষক পূর্ণেন্দু কর্মকার বলেন, "সারাদিন স্কুলে ছিলাম । সন্ধের পরে ফোনে জানতে পারি একটা ছেলে হাসপাতালে মারা গিয়েছে । পরে জানতে পারি সাপে কামড়ে মৃত্যু হয়েছে । কিন্তু স্কুলে যদি কিছুতে কামড়ায় তাহলে কেউ জানতে পারল না । স্কুলে এত শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাত্রছাত্রী আছে তারা কেউ কিছু জানতে পারল না । খুবই মর্মান্তিক ঘটনা । বলা হচ্ছে কেউ ডেটল লাগিয়ে দিয়েছে কিন্তু কে লাগিয়ে দিয়েছে সেটা জানি না । এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা । এদিন কিছু গ্রামবাসী স্কুলে ঢুকে ভাঙচুর করে । তবে তাকে সাপে কখন কামড়ালো সেটা আমরা কেউ জানি না ।"