কলকাতা, 4 নভেম্বর: এবার থেকে রেশনে খাদ্যদ্রব্য নেওয়ার সময় উপভোক্তারা ভর্তুকির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন ৷ উপভোক্তাদের যে পরিমাণ খাদ্যশস্য দেওয়া হবে, তার পাশাপাশি সেই খাদ্যশস্যের পিছনে কেন্দ্র এবং রাজ্যের খরচের শেয়ার কতটা, তারও উল্লেখ থাকবে । কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা আসার পরই এ বিষয়ে নয়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাজ্যের খাদ্য দফতরের তরফে ৷
সাধারণত খাদ্যশস্য রেশন থেকে উপভোক্তাদের দেওয়ার পর এই খাদ্যশস্যের পরিমাণ ই-পস মেশিনের স্লিপের মাধ্যমে উপভোক্তাকে জানিয়ে দেওয়া হয় । এবার সেই স্লিপেই দেওয়া থাকবে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার লোগো । কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এই লোগো ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ।
একইসঙ্গে, এই স্লিপে উল্লেখ রাখতে বলা হয়েছে যে, এক কেজি চালের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের খরচ হয় 37 টাকা 46 পয়সা এবং প্রতি কেজি আটার জন্য কেন্দ্রের খরচ হয় 27 টাকা 9 পয়সা । রাজ্য সরকারকে এই হিসেব উপভোক্তাদের স্লিপে রাখতে বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে । কেন্দ্রীয় সরকার এমনও দাবি করেছে যে, অন্য রাজ্যগুলি ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে । তাই পশ্চিমবঙ্গকেও এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে ।
এই মুহূর্তে রেশন দোকান থেকে যে সমস্ত সামগ্রী দেওয়া হয়, তার জন্য কোনও অর্থমূল্য নেওয়া হয় না । ইতিমধ্যেই রাজ্যে ফ্রি রেশন চালু রয়েছে । কেন্দ্রীয় সরকারও প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার মাধ্যমে গরিব মানুষকে ফ্রিতে রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে । তাই ই-পস মেশিন থেকে বের হওয়া বিলে কোনও অর্থের উল্লেখ থাকে না । তার বদলে সেখানে থাকে কোন খাদ্যশস্য কী পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে সেই তথ্য । কিন্তু এখন প্রতি কেজিতে ফ্রি রেশন দেওয়ার জন্য তাদের কত খরচ করতে হচ্ছে, তা লিখিতভাবে উল্লেখ করার কথা বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ তাই লোগো সহকারে চলতি মাস থেকেই তা সরাসরি গ্রাহকদের হাতে দিয়ে দেওয়া হবে ।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই খাদ্যদ্রব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার যৌথভাবে ব্যয় বহন করে । রাজ্য প্রশ্ন তুলছে, তাহলে কেন কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয়ের উল্লেখ এককভাবে এই বিলে থাকবে । সেই জায়গা থেকেই রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এবার থেকে উভয়ের খরচের পরিমাণ স্লিপে উল্লেখ করা হবে ।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার সমস্ত খরচ কেন্দ্রীয় সরকার এককভাবে বহন করে এ কথা সত্যি নয় । এক্ষেত্রে রাজ্যকে রেশন ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটারদের কমিশন এবং পরিবহণ খরচ বহন করতে হয় । এর পাশাপাশি আরকেএসওয়াই ওয়ান এবং আরকেএসওয়াই টু-এর অধীনে যে খাদ্যশস্য উপভোক্তাদের দেওয়া হয়, এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে সমস্ত খরচ বহন করতে হয় । রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনার সমস্ত খরচ বহন করে রাজ্য । আর সে কারণেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে কেন্দ্রীয় খরচের খতিয়ান যেমন স্লিপে থাকবে, একইভাবে রাজ্য সরকার উপভোক্তাদের জন্য কত টাকা খরচ করছে, তার হিসাবও দেওয়া থাকছে সেখানে ।"
তিনি জানিয়েছেন, চলতি মাস থেকে রাজ্যজুড়ে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে । খাতায়-কলমে আজ সোমবার থেকে এই প্রক্রিয়া চালু হওয়ার কথা থাকলেও সোমবার রেশন দোকান বন্ধ থাকায় আগামিকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে । ফলে রেশন দেওয়ার ক্ষেত্রে কত টাকা কেন্দ্রীয় সরকার খরচ করে, কতটা রাজ্যকে খরচ করতে হয়, এর থেকে একটা আন্দাজ সাধারণ মানুষ পেতে পারবেন ।
প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে রাজ্যে আট কোটি একাশি লক্ষ মানুষ ফ্রিতে রেশন পান, যার মধ্যে 6 কোটি 1 লক্ষ উপভোক্তা রেশন পান জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের (AAY ও PHH) আওতায় এবং 2 কোটি 88 লক্ষ উপভোক্তা রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনার (RKSY-1 ও RKSY-2) আওতায় রয়েছেন ।