কলকাতা, 8 সেপ্টেম্বর: সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি ৷ তার আগে রবিবার প্রতিবাদ মিছিল ও বিচারের দাবিতে স্লোগানে সরগরম হয়ে উঠল মহানগর ৷ একদিকে এদিন আরজি করের নির্যাতিতার হয়ে বিচার চাইতে রাজপথে নামলেন রিকশা-শ্রমিকেরা ৷ অন্যদিকে, পথে নামলেন কুমোরটুলির শিল্পীরাও ৷ 'আমার দুর্গা বিচার পাক', এই স্লোগানকে সামনে রেখে চলল তাঁদের প্রতিবাদ মিছিল ৷ দুর্গা প্রতিমার চোখ এঁকে প্রতিবাদ জানালেন সনাতন দিন্দার মতো শিল্পীরা ৷
সপ্তাহের আর পাঁচটা দিনের থেকে রবিবার রিকশা চালকদের কর্মব্যস্ততা থাকে অনেক বেশি । তবে ছুটির দিনে বাড়তি রোজগারের সুযোগ ছেড়ে প্রতিবাদে সরব হলেন তাঁরাও । এদিন আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে বিচার চেয়ে পথে নামতে দেখা গেল প্রায় 20 জন রিকশা চালককে । এদের অধিকাংশের বাড়ি বিহারে । বাংলা খুব কষ্ট করে বলতে হয় তাঁদের । তবে এঁরাও বুঝেছেন, বাংলার মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি । এই কারণেই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন তাঁরাও । রিকশা চালকেরাও চান নির্যাতিতা বিচার পাক ।
রবিবার উত্তর কলকাতার হেঁদুয়া থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত মিছিল করেন রিকশা চালকেরা । এই মিছিলের পুরো ভাগে ছিলেন রিকশা শ্রমিকেরা । আর পশ্চাদভাগে ছিলেন নির্যাতিতার জন্য বিচার চাওয়া সাধারণ মানুষ । রিকসা শ্রমিকদের পেছনে মানববন্ধন করে তারাও এই প্রতিবাদে সামিল হন । প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেওয়া অধিকাংশেরই কোনও রাজনৈতিক পরিচয় নেই । তবে সকলের একটাই দাবি, সঠিক বিচার ৷ পাশাপাশি আর কোনও মায়ের যেন শূন্য না হয় ।
এ দিন রিকশা শ্রমিকদের অন্যতম রাজু যাদব বলেন,"আমাদের ঘরেও মেয়ে আছে । আমরা চাই মেয়েদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুক সরকার। আর সে কারণে আজ পথে নামা । আরজি করের ঘটনা গোটা দেশের মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে । আমরা চাই সরকার মেয়েদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুক । অপরাধীরা যেন কোনও ভাবেই ছাড়া না পায় ।"
অন্যদিকে, সামনেই দুর্গাপুজো ৷ এখন চরম ব্যস্ততা কুমোরটুলির শিল্পীদের ৷ সেই ব্যস্ততাকে দূরে সরিয়ে রেখেই রবিবার দুপুরে আরজি করের ঘটনার বিচার চেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পথে নামলেন কুমোরটুলির প্রতিমা শিল্পী থেকে কারিগররা । সেই মিছিলেই পা মেলালেন সনাতন দিন্দা, সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ দে, পার্থ ঘোষ, মিন্টু পালের মতো খ্যাতনামা শিল্পীরাও । তাঁদের সঙ্গ ছিলেন প্রখ্যাত গায়িকা লগ্নজিতা চক্রবর্তীও ।
এ দিনের মিছিলে অরিজিৎ সিংয়ের গাওয়া 'আর কবে' গান গেয়ে প্রতিবাদ করতে শোনা গেল গুটি কয়েক নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের। প্রতিবাদ মঞ্চের সামনেই রাখা ছিল দুর্গার মাটির মুখ । তাতে চক্ষুদান করে কাঁদালেন খোদ সনাতন দিন্দা । সপরিবারে একাধিক শিল্পী পরেছিলেন 'কুমোরটুলি দিচ্ছে ডাক আরজি কর বিচার পাক' লেখা টি-শার্ট ।
এই প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছিল মৃৎশিল্পীরা । তবে সেই মিছিল কার্যত জন অরণ্যের সৃষ্টি হয় । বাগবাজার মুখে যখন মিছিলের প্রথম অংশ তখনও মিছিলের শেষ ভাগ ছিল কুমোরটুলি আর্ট গ্যালারির কাছে । স্লোগান ওঠে, 'সব দুর্গার আঁতুড়ঘর জাস্টিস ফর আরজি কর'। গলা মেলান শিল্পী থেকে শুরু করে মিছিলে পা মেলানো পরিবারের সদস্যরা । কারও সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী তো কারও আবার মেয়ে ।
এ দিন প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেওয়া খ্যাতনামা শিল্পী সনাতন দিন্দা থেকে মিন্টু পালরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন যে তাঁদের একটাই দাবি, বিচার চাই আরজি করের ঘটনায় । তাঁরা বলেন, "আমরা দুর্গা গড়ি । সেই দুর্গা কলকাতার বুকে ধর্ষণ ও খুন হচ্ছেন । আমরা কী করে বসে থাকি । বিবেকের তাড়নায় পথে নেমেছি । দুর্গাদের জন্য ব্যস্ত সময়ে থেকেই কিছু সময় থাক ৷"