কলকাতা, 15 এপ্রিল: দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট কাটতে প্রয়োজন পড়ে পরিচয়ত্রের ৷ কিন্তু দূরপাল্লার বাসের ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র না থাকলেও মেলে টিকিট ৷ সেই কারণেই ট্রেনের বদলে বাসযাত্রাকেই নিরাপদ মনে করেছিল দুই জঙ্গি ৷ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বাসেই ঘোরাঘুরি করেছে বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফেতে বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই অভিযুক্ত ৷ এনআইএ-র সূত্র থেকে তেমনই খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে ধর্মতলার একটি নামী বেসরকারি পরিবহণ সংস্থা এখন এনআইএ-র তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে ৷
গত 1 মার্চ বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফেতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে ৷ সেই ঘটনায় দুই অভিযুক্ত আবদুল মাথিন আহমেদ ত্বহা ও মুসাভির হুসেন শাজিব পশ্চিমবঙ্গে এসে আত্মগোপন করেছিল ৷ কলকাতা ও বাংলার বিভিন্ন স্থানে তারা পরিচয় লুকিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে ৷ ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি সূত্রের খবর, তারা মূলত পর্যটকের ছদ্মবেশে ঘুরেছে বিভিন্ন জায়গায়৷ কলকাতার বেশ কয়েকটি জায়গায় তারা থেকেছে ৷ আবার উত্তরবঙ্গ, পুরুলিয়া, কাঁথির মতো জায়গায় গিয়েছে ৷
এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ হোক বা অন্য কোনও জায়গা, তারা দূরপাল্লার বাসেই যাতায়াত করেছে ৷ ট্রেন তারা একেবারেই ব্যবহার করেনি ৷ কারণ, দূরপাল্লার ট্রেনে টিকিট সংরক্ষণ বা টিকিট কাটার জন্য প্রয়োজন পড়ে বিভিন্ন পরিচয় পত্র বা আইডি-র । কিন্তু দূরপাল্লার বাসের টিকিট কাটার জন্য কোনও আইডি-র প্রয়োজন পড়ে না । ফলে সে ক্ষেত্রে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিরাপদে পাড়ি দেওয়াও সম্ভব হয় । এছাড়াও নিজের পরিচয়ও প্রকাশ পায় না । তার জন্যই জঙ্গিরা দূরপাল্লার ট্রেনের বদলে বেছে নিয়েছিল দূরপাল্লার বাস পরিষেবাকে ।
কলকাতার ধর্মতলা থেকে একটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার বাসে উত্তরবঙ্গে গিয়েছিল ত্বহা ও শাজিব ৷ আপাতত ওই বেসরকারি পরিবহণ সংস্থা এনআইএ-র তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে ৷ সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলা হবে ৷ বাসে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে, তার ফুটেজও দেখা হবে ৷ সেই সময় ওই দুই জঙ্গির সঙ্গে আর কেউ ছিল কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে চায় এনআইএ ৷
বেঙ্গালুরুর বিস্ফোরণের ঘটনায় মুজ়াম্মিল শরিফ নামে একজন আগেই গ্রেফতার করে এনআইএ ৷ তাকে চেন্নাই থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৷ ওই শরিফও বাংলায় এসেছিল ৷ মূলত, ত্বহা ও শাজিবকে টাকা দিতেই সে কলকাতায় আসে ৷ তার পরই চেন্নাইতে সে গ্রেফতার হয় ৷ তাকে জেরা করেই ত্বহা ও শাজিবের বিষয়ে জানতে পারেন তদন্তকারীরা ৷ তার পরই এই দু’জনের খোঁজ শুরু হয় ৷ শেষে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় ৷
তদন্তকারীদের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, ত্বহা ও শাজিব, দু’জনেই আইএস-এর ‘আল হিন্দ’ মডিউলের সদস্য । সন্দেহ করা হচ্ছে যে সীমান্ত টপকে বাংলাদেশ পালানোর ছক ছিল ত্বহা ও শাজিবের । তাই তারা বাংলায় আত্মগোপন করেছিল ৷ তাই তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন বাংলাদেশে পালানোর জন্য কার সাহায্য নিত তারা ! তদন্তকারীদের প্রশ্ন, আইএস-এর ‘আল হিন্দ’ মডিউলের কোনও গোষ্ঠী কি বাংলায় সক্রিয় ? এই প্রশ্নের উত্তরই আপাতত খুঁজছে এনআইএ ৷
আরও পড়ুন: