মালদা, 24 অক্টোবর: সময়মতো খবর পেয়ে গণপিটুনির হাত থেকে এক যুবককে উদ্ধার করল ইংরেজবাজার থানার পুলিশ ৷ বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ইংরেজবাজার ব্লকের কোতওয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের নমো জোত গ্রামে ৷ আহত ওই যুবক বর্তমানে মালদা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে ৷
অভিযোগ, কিছুদিন ধরেই এলাকায় বসছে মদের আসর ৷ সেই আসরে ভিড় করছে বহিরাগত যুবকরাও ৷ এলাকায় চুরির ঘটনাও বাড়ছে ৷ বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় ছিলেন নমো জোত গ্রামের বাসিন্দারা ৷ বুধবার রাতে গ্রামের আজগুবি শিব মন্দিরে এক সন্দেহভাজন যুবককে দেখতে পান কয়েকজন গ্রামবাসী ৷
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁরা মন্দিরের কাছে গিয়ে দেখেন, ওই যুবক মন্দিরের সমস্ত সামগ্রী তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ৷ তাঁরা যুবককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন ৷ সেই খবর চাউর হতেই গ্রামের সবাই মন্দিরে ছুটে আসেন ৷ এরপরেই ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা ওই যুবককে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে বেধড়ক মারধর শুরু করেন ৷ পরিস্থিতি বুঝে গ্রামেরই একজন ফোন করে ইংরেজবাজার থানায় খবর দেন ৷ দ্রুত ঘটনাস্থলে চলে আসে পুলিশ ৷ গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে ওই যুবককে গণপিটুনির হাত থেকে রক্ষা করে তুলে নিয়ে যান পুলিশকর্মীরা ৷
এই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে রাজি হননি গ্রামের কেউ ৷ এক বাসিন্দা সাগরী দাস শুধু বলেন, “হঠাৎ গ্রামে চোর চোর রব ওঠে ৷ শুনলাম, শিবমন্দিরে চোর ধরা পড়েছে ৷ সে মন্দিরে ঠাকুরের সব জিনিস নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল ৷ খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা সবাই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় ৷ পুলিশও সেখানে চলে আসে ৷ পুলিশকর্মীরা চোরকে নিয়ে গিয়েছেন ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামের একটি আমবাগানে কিছুদিন ধরেই মদের আসর বসছে ৷ অনেক ছেলে সেখানে মদ্যপান করে ৷ চারদিকে কাচের বোতল ভেঙে ছিটিয়ে রাখে ৷ সকালে মর্নিং ওয়াক করার সময় পায়ে কাচ ঢুকে যায় ৷ মদ্যপদের ভয়ে সন্ধেয় কেউ হাঁটাচলা করতে পারে না ৷ মেয়েরা নদীতে স্নান করতে কিংবা সন্ধেয় মন্দিরে আসতে ভয় পান ৷ আমরা চাই, পুলিশ এই মদের আসর বন্ধ করুক ৷ এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে দিক ৷”
ইংরেজবাজার থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই যুবক এখনও কথা বলার মতো অবস্থায় নেই ৷ তাঁর চিকিৎসা চলছে ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ তবে বারবার চোর সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা চিন্তায় ফেলেছে পুলিশকে ৷ মানুষকে আরও অনুভূতিশীল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুলিশকর্মীরা ৷
(গণপিটুনি একটি সামাজিক ব্যাধি। আমরা জানি হিংসা কোনও সমস্যার সমাধান নয়। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। কোনও গুজবে প্রভাবিত হবেন না। কোথাও কোনও সমস্যা হলে সরাসরি পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সুরক্ষিত থাকুন। সমাজকে সুরক্ষিত রাখার ভার আপনারও।)