বোলপুর, 1 ডিসেম্বর: বিশ্বভারতীর কলাভবনে চলছে শৈল্পিক নন্দনমেলা । প্রখ্যাত শিল্পী নন্দলাল বসুর নামানুসারে এই মেলা 51তম বর্ষে পা দিল ৷ প্রতি বছরের মতো 2 ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই মেলা ৷ সেখানে বসেছে কলাভবনের ছ'টি বিভাগের সারা বছরের শিল্পকর্মের পসরা ৷ 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' শান্তিনিকেতনে এই শিল্পমেলায় এবারের মূল আকর্ষণ 'ঘোড়ার ডিম'। এই নামে মিষ্টি বিক্রি করছেন পড়ুয়ারা ৷ নাম-মাহাত্ম্যে তা খাওয়ার ও ছবি তোলার জন্য উপচে পড়ছে ভিড় ৷
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন শিল্পী নন্দলাল বসু ৷ কবির ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে বিশ্বভারতীতে কলাভবন প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রণী । 3 ডিসেম্বর শিল্পী নন্দলাল বসুর জন্মদিন ৷ তাই 1 ও 2 ডিসেম্বর তাঁকে স্মরণ করে কলাভবনে 'নন্দনমেলা'র আয়োজন করা হয় ৷ এবার এই মেলা 51তম বর্ষে পা দিল ৷
'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' শান্তিনিকেতন, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রকৃতির মাঝে শৈল্পিক মেলা । নানা অনবদ্য শিল্পকলায় সেজে উঠেছে কলাভবন চত্বর ।
পড়ুয়াদের মধ্যে শেখ মুত্তাকিমা, বিনিতা খণ্ডেলওয়ালরা বলেন, "অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা । কলাভবনের সব বিভাগের স্টল দেওয়া হয়েছে ৷ সারা বছর আমাদের তৈরি হাতের কাজ রয়েছে । সবাই মিলে খুব আনন্দ করছি, মজা করছি ।"
মেলায় উপস্থিত দর্শক শ্রেয়সী রাকা দাস চেটেপুটে উপভোগ করছেন নন্দনমেলার অ্যাম্বিয়েন্স ৷ তবে তিনি নিজে খাদ্যরসিক হওয়ায় ফুড স্টলের দিকেই তাঁর বেশি নজর ৷ তিনি বলেন, "এই মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকি ৷ এবারও অনেক নতুন নতুন ছেলেমেয়েরা তাঁদের কাজ নিয়ে এসেছেন ৷ খুবই ভালো লাগছে ৷ আমি একটু ফুডি, তাই খাবারের স্টলেও ঘুরছি ৷ আশা করি, আগামী দিনেও এই মেলার মান বজায় থাকবে ৷"
প্রসঙ্গত, এই মেলার সূচনার ঠিক আগের বছর কলাভবনে বীরেন বোরা নামে এক অসমীয়া ছাত্রের পা গুরুতর ভাবে কেটে গিয়েছিল । তাঁর চিকিৎসার খরচ জোগাতে সেই সময় হিমসিম খেতে হয় পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের ৷ সেই ঘটনা থেকেই স্থির হয়েছিল, মেলায় যা শিল্পকর্ম বিক্রি হবে, তার একটা লভ্যাংশ কলাভবনের কোষাগারে সংরক্ষিত হবে ৷ সেটাই হবে 'স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফান্ড'। দুঃস্থ পড়ুয়াদের সহযোগিতা করার স্বার্থে আজও এই রীতি চলছে ।
তাই নন্দনমেলায় নান্দনিকতার পাশাপাশি রয়েছে একটি সেবামূলক দিকও ৷ আর সেই সেবার মধ্যে দিয়েই মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া ৷ গুরুদেবই তো দেখিয়েছেন সেই পথ..."মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে/মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই/এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে/জীবন্ত হৃদয়-মাঝে যদি স্থান পাই ।"