দার্জিলিং, 7 সেপ্টেম্বর: মাটিগাড়ায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় দোষীর ফাঁসির সাজা দিলেন বিচারক। শনিবার বিকেলে সাজার ঘোষণা করেন শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক অ্যান্ড সেশনস ফাস্ট কোর্টের বিচারক অনিতা মেহেরোত্রা মাথুর। ফাঁসির সাজা ঘোষণা হতেই আদালতে চত্বরেই উল্লাসে ফেটে পরে নির্যাতিতার পরিবার ও এলাকাবাসীরা। আদালতের এই রায় আরজি কর-কাণ্ডের মাঝে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করছে বুদ্ধিজীবীমহল।
22 জন সাক্ষী এবং একাধিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ওই ঘটনায় দোষী মহম্মদ আব্বাসকে এদিন ফাঁসির সাজা দেন বিচারক। সরকারি আইনজীবী বিভাস চক্রবর্তী বলেন, "লড়াইয়ের অবসান হল। দু'টো ধারায় দোষীর ফাঁসির সাজা হয়েছে। একটি পকসো ধারায় ও অন্যটি 302 খুনের ধারায়। এই মামলাটিকে আদালত বিরলতম ঘটনা বলে মনে করে দোষীর মৃত্যুর সাজা ঘোষণা করেন। পুলিশ খুব ভালো কাজ করেছে। তারপর কাজ হল আইনজীবী ও বিচারব্যবস্থার। আইনজীবী যদি চান মামলা তাড়াতাড়ি শেষ করবেন, সঠিক তথ্য প্রমাণ আনাবেন তা এই আইনেই সম্ভব। কারণ মামলা দেরি হয় আদালতে এসে। পুলিশ করে না। যেহেতু পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলার কাজে ব্যবস্থা থাকে সেজন্য সবসময় তদন্ত সঠিকভাবে হয় না। এটা থাকা বাধ্য।"
তিনি আরও বলেন, "গত 3 জানুয়ারি থেকে মামলার শুনানি শুরু হয়। এই মামলা মার্চ মাসেই শেষ হত। কিন্তু বিপক্ষের আইনজীবী হাইকোর্টে যায়। তাঁর যুক্তি ছিল মামলা কেন এত তাড়াতাড়ি হচ্ছে সরকারি আইনজীবীর তরফে। যদিও আদালত তা গুরুত্ব দেয়নি। মাঝখান থেকে দু'তিনটে মাস আমাদের নষ্ট হয়। না-হলে এই মামলা তিন থেকে চারমাসের মধ্যে শেষ হয়ে যেত।"
প্রসঙ্গত, 21 অগস্ট 2023 সালে মাটিগাড়ার মোটাজোতে একটি পরিত্যক্ত জমির ভিতরে একটি ঘরে স্কুল ইউনিফর্মে থাকা এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা ঘটে। তদন্তে নেমে মহম্মদ আব্বাস (31) নামে মাটিগাড়ার লেনিন কলোনির পালপাড়ার বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে খালাসির কাজ করত বলে জানা গিয়েছে। আরও জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাইকেলে তোলে অভিযুক্ত। এরপর তাকে ওই পরিত্যক্ত জমিতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
কিন্তু নাবালিকা বাধা দিলে সেখানে থাকা একটি ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে তাকে খুন করা হয়েছিল। খুনের পর সেখান থেকে মুখে রুমাল বেঁধে পালিয়ে যায় ওই যুবক। শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এনিয়ে বলেন, "আমি ধন্যবাদ জানাব শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার তথা তদন্তকারীদের যে তাঁরা দ্রুত তদন্ত শেষ করেছে। পাশাপাশি বিশেষ সরকারি আইনজীবীকে যে তিনিও খুব গুরুত্বর সঙ্গে এই মামলাটি লড়েছেন।" নির্যাতিতার মা বলেন, "আমার মেয়ের আত্মা এতদিনে শান্তি পেল। আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা আর কোনও মায়ের সঙ্গে যেন না-হয় এটাই চাইছিলাম। এবার আমি শান্তি পেলাম।"