কলকাতা, 20 মে: আইনি চিঠি পাওয়ার পরও কার্তিক মহারাজকে নিশানা করা থেকে পিছু হঠছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সোমবার বিষ্ণুপুরের সভা মঞ্চ থেকে তিনি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার ভারত সেবাশ্রম সংঘের কার্তিক মহারাজের প্রতি আক্রমণের ঝাঁজ আরও বাড়িয়েছেন ৷ মমতার অভিযোগ, মুর্শিদাবাদে দাঙ্গা করিয়েছেন এই কার্তিক মহারাজ ৷
বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আইনি চিঠি পাঠিয়েছেন বেলডাঙার ভারত সেবাশ্রম সংঘের কার্তিক মহারাজ । মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে তাঁর ‘সম্মানহানি’ হয়েছে, একইসঙ্গে ভারত সেবাশ্রম সংঘেরও বদনাম করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি । তাঁর মন্তব্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে আগামী 84 ঘণ্টা মধ্যে ক্ষমা চেয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করতে হবে বলেও চিঠিতে দাবি করেন কার্তিক মহারাজ ৷ চারদিনের মধ্যে আইনি চিঠির উত্তর না-দিলে আইন অনুয়ায়ী পরবর্তী পদক্ষেপেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি ৷
তবে এই চিঠি বা মহারাজদের নিয়ে তাঁর মন্তব্যের জন্য কোনও সমালোচনাকে তোয়াক্কাই করছেন না বলে সোমবার বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ এ দিন বিষ্ণুপুরের সভা থেকে ফের সরাসরি কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি ৷ বলেন, "আমি রামকৃষ্ণ মিশনের বিরুদ্ধে নই...গঙ্গাসাগরে ভারত সেবাশ্রম সংঘের এরটি আশ্রম আছে । ওরা খুব ভালো ৷ ওরা সত্যি আমাকে খুব ভালোবাসে আর মানুষের জন্য কাজ করে । আমি একটি লোকের নাম করে বলেছিলাম ৷ তাঁর নাম কার্তিক মহারাজ । তিনি আমাদের এজেন্ট বসতে দেননি । ভোটের দু'দিন আগে মুর্শিদাবাদে যে দাঙ্গাটা করিয়েছিলেন তার হোতা ছিলেন উনিই । আমি সেই জন্যই বলেছিলাম। এবং এটা বলে যাব । উনি বিজেপি করেন ।"
কার্তিক মহারাজের বিজেপি করা উচিত বলে তোপ দেগে মমতা বলেন, "এলাকায় গিয়ে গিয়ে ধর্মের নামে আপনি বিজেপি করে বেড়ান । আমি বলছি, আপনি তা করুন । কিন্তু বিজেপির চিহ্নটা বুকে লাগিয়ে রেখে সেটা করুন । লুকিয়ে লুকিয়ে করছেন কেন ? আমি যেটা বলি, আমি প্রমাণ ছাড়া কিছু বলি না ।"
যদিও কার্তিক মহারাজের দাবি, সন্ন্যাস বা সন্ন্যাসীদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ন্যূনতম জ্ঞান নেই’। আর সেই কারণেই তিনি ওই মন্তব্য করেছেন । মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন তা সম্পূর্ণ ‘মিথ্যা’ বলেও দাবি করেছেন মহারাজ । আইনি চিঠিতে কার্তিক মহারাজ জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কথায় তিনি ‘ব্যথিত’। একইসঙ্গে, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য মহারাজের অনুগামীদের ভাবাবেগেও আঘাত করেছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি ৷ কার্তিক মহারাজের আইনি চিঠিটি মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য ও আইনজীবী অনীশ মুখোপাধ্যায় ৷
এ বিষয়ে আইনজীবী অনীশ মুখোপাধ্যায় বলেন, "কার্তিক মহারাজ ভারত সেবাশ্রম সংঘের একজন মহারাজ । তাঁর সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী যে দাবি করেছেন তা সারবত্তাহীন । ভিত্তিহীন । কোথাও মহারাজ ওই ধরনের মন্তব্য করেননি । মুখ্যমন্ত্রী যে বক্তব্য উল্লেখ করেছেন তার জন্য তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে । না-হলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে ।"
উল্লেখ্য, শনিবার হুগলির গোঘাটে একটি নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সব সাধু সমান হয় না । সব স্বজন সমান হয় না । আমাদের মধ্যেও কি আমরা সবাই সমান ? এই যে বহরমপুরের একজন মহারাজ আছেন । আমি শুনেছি অনেক দিন ধরে, কার্তিক মহারাজ । ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম । আমার শ্রদ্ধার্ঘ্যের তালিকায় তারা দীর্ঘ দিন ধরে আছে । কিন্তু যে লোকটা বলে, তৃণমূলের এজেন্ট বসতে দেব না, সেই লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না । তার কারণ, সে ডাইরেক্ট পলিটিক্স করে দেশটার সর্বনাশ করছে ।’’
রবিবার রাজ্যে ভোটের প্রচারে এসে মমতার এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । পুরুলিয়া এবং বিষ্ণুপুরের জনসভা থেকে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সাধুসন্তদের অপমান করার অভিযোগ তুলে মোদি বলেন, ‘‘তৃণমূল সাধুসন্তদের গালিগালাজ করছে । ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সংঘ বিভিন্ন সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে । কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, সাধুরা এবং এই সংগঠনগুলি দেশকে নষ্ট করছে । আসলে এখানকার মুখ্যমন্ত্রী মুসলিম কট্টরপন্থীদের চাপে ভোট পেতে আমাদের সাধুদের এবং মহান সংগঠনগুলিকে গালিগালাজ করছেন । ভোটব্যাংকের জন্য সাধুদের অপমান করা হচ্ছে ।"
রাজ্যের শাসকদলের তরফে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে সমর্থন করে জানানো হয়েছে যে, তিনি কারওকে অসম্মান করার জন্য এই ধরনের মন্তব্য করেননি । আর মুখ্যমন্ত্রী নিজেও ভারত সেবাশ্রম সংঘ, রামকৃষ্ণ মিশনকে শ্রদ্ধা করেন । সেখানে সহযোগিতা করেন । আর যে কেউ আইনি পদক্ষেপ করতেই পারেন ।"
সেই একই সুরে এ বার এই ইস্যুতে জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও ৷ নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেও কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে আক্রমণ যে তিনি থামাচ্ছেন না, তা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী ৷
আরও পড়ুন: