কলকাতা, 10 মার্চ: ব্রিগেডের সভা থেকে ইন্ডিয়া জোটকে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিল তৃণমূল। রাজ্যের 42টি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা হল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য আগেই ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যে কারও সঙ্গে জোট করবেন না। তারপরও বেশ কয়েকবার কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের আসন সমঝোতা নিয়ে কথা হয়েছে। শেষমেশ সেই জল্পনায় জল ঢালল রবিবারের বিগ্রেড।
2022 সালের মধ্যভাগ থেকে ইন্ডিয়া জোটের সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়। তবে নির্বাচন যতই এগিয়েছে ততই বদলেছে রাজনৈতিক সমীকরণ। তৃণমূল থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি বিরোধী দল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছে। প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেসে প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও। এরইমধ্যে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, জোটের শরিকদের প্রাপ্য সম্মান দেয় না কংগ্রেস। এমনই আবহে ইন্ডিয়া জোটের বেশ কয়েকটি সভা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় তৃণমূল। আরও পরে রাজ্যে একা লড়ার কথা ঘোষণা করেন মমতা। আজ সেই বৃত্ত সম্পন্ন হল।
ইন্ডিয়া জোটের সমীকরণে বড় বদল আনা ছাড়াও আরও কয়েকটি কারণে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা রাজনৈতিক মহলের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক অতীতে তৃণমূলের অন্দরে দলের প্রবীণ সাংসদ তথা লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সুদীপের বিরুদ্ধে তোপ দেগে দল ছেড়েছেন দীর্ঘদিনের বিধায়ক তাপস রায়। বেসুরো শুনিয়েছিল কুণাল ঘোষকেও। তবে সেই সুদীপের উপরেই ভরসা রাখলেন মমতা। এটা অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ।
তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় আরও একটি বড় দিক হল বিজেপি থেকে আসা নেতাদের প্রার্থী করা। 42টি আসনে এমন চারজন আছেন যাঁরা অতীতে বিজেপির সঙ্গে ছিলেন। বিপ্লব মিত্র বালুরঘাট থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। কৃষ্ণ কল্যাণী লড়ছেন রায়গঞ্জ থেকে। রাণাঘাট কেন্দ্রে মুকুটমণি অধিকারীর উপর ভরসা রেখেছে তৃণমূল। পাশপাাশি বিশ্বজিৎ দাসকে প্রার্থী করা হয়েছে বনগাঁ কেন্দ্র থেকে।
এবারের প্রার্থী তালিকায় আবারও বহরমপুর কেন্দ্রে চমক দিয়েছেন মমতা। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরির গড় বলে পরিচিত বহরমপুরে অতীতে ইন্দ্রনীল সেনের মতো গায়ক লড়াই করেছিলেন। এবার তৃণমূলের হয়ে লড়বেন প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কের মন মেতে দেশের এই প্রাক্তন ক্রিকেটারকে প্রার্থী করা যে নিসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ তা বুঝতে অসুবিধে হয় না।
এছাড়া গতবার লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারায় দল ছাড়েন অর্জুন। বিজেপিতে যোগ দিয়ে নিজের খাসতালুক ব্যারাকপুর থেকে জেতেন অর্জুন। তাঁকে এবারও প্রার্থী করেনি দল। রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপর ভরসা রাখা হয়েছে।
মিমি চক্রবর্তী থেকে শুরু করে নুসরত জাহান বাদ পড়েছেন। তবে তাতে প্রার্থী তালিকায় গ্ল্যামার যে কমেছে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। হুগলি থেকে লকেটের বিরুদ্ধে প্রার্থী হচ্ছেন রচনা বন্দ্য়োপাধ্যায়। সায়নী ঘোষ লড়ছেন যাদবপুর থেকে। এই কেন্দ্রে থেকে বিজেপির হয়ে লড়ছেন অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। তালিকায় নাম আছে জুন মালিয়ারও। 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর কেন্দ্রে জিতে আসা জুনকে এবার লোকসভায় পাঠাতে চায় তৃণমূল। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকেই লড়বেন। এই আসন থেকে গতবার জেতেন বিজেপির দিলীপ ঘোষ। এবার এখনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়নি। একইসঙ্গে মালা রায়ের মতো প্রবীণ নেত্রীর উপরই নিজের একসময়ের কেন্দ্র কলকাতা দক্ষিণ ছেড়েছেন মমতা।
প্রার্থী তালিকায় চমক হিসেবে কীর্তি আজাদের নামও বলতে হয়। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে। প্রত্যাশামতো নাম আছে আসানসোলের সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহারও। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে জিতে প্রথমবার এই আসনে ঘাসফুল ফোটান বলিউডের বিশ্বনাথ। এবারও তাঁর উপরই ভরসা রাখল তৃণমূল।
এর পাশাপাশি বলতে হয় আরও দুটি কেন্দ্রের কথা। ঘাটাল এবং বিষ্ণপুরেও আকর্ষণীয় লড়াই হতে চলেছে । ঘাাটাল থেকে এ নিয়ে তৃতীয়বার প্রার্থী হলেন দেব। এর আগেই বিজেপি হিরণকে প্রার্থী করেছে । মানে এই কেন্দ্রে নায়ক বনাম নায়কের লড়াই। অতীতে নির্বাচনী ময়দানে নায়ক বনাম ভিলেনের লড়াই দেখেছে রাজ্য । এবার নায়ক বনাম নায়ক। এছাড়া বিষ্ণপুরের বর্তমান সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা। 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনেও সুজাতা প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু জিততে পারেননি। তবে 2019 সালের ভোটের সময় আইনি জটিলতায় বিষ্ণুপুরে সৌমিত্র নিজের হয়ে প্রচার করতে পারেননি। তাঁর বদলে প্রচার করেন সুজাতাই। এবার প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রীর সম্মুখ সমর দেখবে বাঁকুড়ার এই প্রাচীন জনপদ।
আরও পড়ুন