কলকাতা, 27 জুলাই: প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রয়াত আরএসপি নেতা বিশ্বনাথ চৌধুরীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে স্মৃতিচারণা করলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা বিমান বসু ৷ সেখানই উঠে এল যে জনসংযোগ বাড়াতে বিশ্বনাথ চৌধুরীর সাইকেল-রিকশায় ঘোরার কথা ৷
দীর্ঘদিন ধরে তিনি ক্য়ান্সারে আক্রান্ত ছিলেন ৷ শনিবার সকালে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে তিনি প্রয়াত হন ৷ রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরীর মরদেহ আরএসপির রাজ্য দফতরে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য শায়িত রাখা হয় দুপুর সাড়ে 3টে পর্যন্ত । দুপুর আড়াইটে নাগাদ আরএসপির রাজ্য দফতরে এসে শ্রদ্ধা জানান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু । তার পর বামফ্রন্টের সদ্য প্রয়াত সতীর্থকে নিয়ে নানা কথা শোনা যায় বিমান বসুর মুখে ৷
তিনি বলেন, "অত্যন্ত মিশুকে মানুষ ছিলেন বিশ্বনাথ চৌধুরী । মানুষের সঙ্গে মিশতে ভালোবাসতেন । বালুরঘাটে তাঁর সঙ্গে বহুবার দেখা হয়েছে । একবার বালুরঘাটে দেখা হয় । তাঁকে সাইকেল নিয়ে ঘুরতে দেখি । আমি অবাক । মন্ত্রী কেন গাড়ি ছাড়া সাইকেলে ঘুরছেন ? প্রশ্ন করতেই বিশ্বনাথ বললেন, সাইকেল-রিকশায় ঘুরলে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো থাকে । গাড়িতে ঘুরলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুরত্ব তৈরি হয় । একারণেই কলকাতা ছাড়া নিজের এলাকায় থাকলে সাইকেল-রিকশায় ঘুরে বেড়াতেন তিনি ।"
পাশাপাশি আরএসপি-র একাধিক নেতা ও পরিবারের সদস্যদের থেকে খোঁজখবর নেন বিমান বসু । আক্ষেপ প্রকাশ করে তাঁকে বলতে শোনা যায়, "এখনই তো চলে যাওয়ার কথা ছিল না ।" বিমান বসু ছাড়াও সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায়, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী প্রমুখ আরএসপির অফিসে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিশ্বনাথ চৌধুরীকে ।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, "রাজ্যের বাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা, বামফ্রন্ট সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী কমরেড বিশ্বনাথ চৌধুরীর জীবনাবসানে গভীর শোক প্রকাশ করছি । বামফ্রন্ট সরকারের জনমুখী কর্মকাণ্ড ও বামপন্থী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁর অবদানের কথা সকলেই স্মরণে রাখবেন । প্রয়াত কমরেডের পরিবার ও আরএসপির সহকর্মীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি ।"
উল্লেখ্য, অবিভক্ত পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বাম-গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা নেতৃত্ব ও পরে আরএসপি-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক, বামফ্রন্ট সরকারের কারা ও সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন বিশ্বনাথ চৌধুরী । ছাত্র জীবন থেকেই তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি । বালুরঘাট কলেজে পিএসইউ-এর আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন । ওই কলেজে তিনবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ।
পরবর্তীতে জেলার বাম ও গণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন । 1977 সালে তিনি বালুরঘাট বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক হন । 1977 থেকে 2011 পর্যন্ত দীর্ঘকাল তিনি বালুরঘাটের বিধায়ক ছিলেন । পরে 2016 থেকে 2021 সাল পর্যন্ত বিধায়ক ছিলেন । 1987 সাল থেকে 2011 সাল পর্যন্ত দীর্ঘকাল তিনি বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন । 2019 সাল থেকে 2022 সাল পর্যন্ত তিনি আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন ।