বারাসত, 25 জুলাই: ইটিভি ভারতের খবরের জের ! বারাসতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দখল করা সরকারি জমি পুনরুদ্ধারে এবার এগিয়ে এল পুর-প্রশাসন । তাঁদের উদ্যোগে নতুন করে ফের শুরু হল জমি জরিপ । তবে, আগেও একবার জেলা প্রশাসনের নির্দেশে পুরসভার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই জমির মাপজোক করা হয়েছিল ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের তরফে । কিন্তু, তাতে ত্রুটি ছিল বলেই অভিযোগ ।
এই নিয়ে, ঘনিষ্ঠমহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পুর পারিষদ (রাস্তা) অরুণ ভৌমিক । সেই ক্ষোভের আঁচ পেয়ে জেলা প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন পুরসভার এক্সিকিউটিভ আধিকারিক-কে । সেই মতো বৃহস্পতিবার পুরসভার দুই প্রতিনিধি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সরকারি জমির দখল করা অংশে মাপজোক করতে আসেন । স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দখল করা জমির পুরোটাই পদ্ধতি মেনে ফিতে দিয়ে মেপে দেখা হয় । এরপর তা লিপিবদ্ধ করা হয় খাতায় কলমে । এখান থেকে পাওয়া তথ্য পুরসভার এক্সিকিউটিভ আধিকারিকের কাছে রিপোর্ট আকারে পেশ করা হবে বলে জানা গিয়েছে ।
উত্তর 24 পরগনার বারাসত নবপল্লী বয়েজ স্কুলের ঠিক পাশেই পুরসভার এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমির অধিকাংশই দখল করে সেখানে দিনের পর দিন রমরমিয়ে চলছিল দোকানপাট ও বাজার । এর ফলে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল পুরসভার সামগ্রিক উন্নয়ন । গত 14 জুলাই সেই খবরই প্রকাশিত হয়েছিল ইটিভি ভারতে । সেই খবরের প্রতিবেদনে স্পষ্টত বলা হয়েছিল, সেখানে মোট 14 কাঠা জমি থাকলেও মাত্র সাড়ে তিন কাঠার জমির উপর গড়ে উঠেছে পুরসভার এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি । বাকি জমির অংশ দখল করে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা ।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও কেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সরকারি জমি পুনরুদ্ধার করছে না জেলা প্রশাসন ? তা নিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পুর পারিষদ তথা তৃণমূল কাউন্সিলর অরুণ ভৌমিক যে সরব হয়েছিলেন সেই কথাও তুলে ধরা হয়েছিল ইটিভি ভারতের ওই প্রতিবেদনে । শুধু তাই নয়, সেখানকার দোকানিদের নিয়ম মেনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দখল করা সেই জমি স্বাস্থ্য পরিষেবায় ব্যবহার হোক, সেটাও দাবি করেছিলেন তিনি ।
সেই খবরের জেরে নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। মহকুমাশাসকের নির্দেশে সম্প্রতি ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের ইন্সপেক্টর সরজমিনে খতিয়ে দেখেন বিষয়টি । অভিযোগ, তিনি জমির ভিতরে প্রবেশ না করে বাইরে থেকেই কয়েকটি দোকান দেখিয়ে নিজের মতো করে রিপোর্ট পেশ করেন প্রশাসনের কাছে । যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন পুর পারিষদ অরুণ ভৌমিক । তিনি তাঁর ক্ষোভের কথা জানান জেলা প্রশাসনকে । তাঁর ক্ষোভের আঁচ পেয়ে পুনরায় মহকুমাশাসক বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন পুরসভার এক্সিকিউটিভ আধিকারিক-কে । তাঁরই নির্দেশে নতুন করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি জরিপের কাজ হল বৃহস্পতিবার ।
এই বিষয়ে জমি জরিপ করতে আসা মাফিজুল আলি নামে পুরসভার এক কর্মী বলেন, "এর আগে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের তরফে যে জমি জরিপের কাজ হয়েছিল, তার সঙ্গে বাস্তবের ফারাক রয়েছে । সেই কারণে বারাসত পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসারকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন মহকুমাশাসক । এক্সিকিউটিভ অফিসারের নির্দেশেই এদিন আমরা সরজমিনে বিষয়টি খতিয়ে দেখলাম । সেই সঙ্গে কতটা জমি দখল করে রাখা হয়েছে সেটাও দেখা হল জমি জরিপ করে । এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট আমরা তুলে দেব পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসারের কাছে । বাকিটা প্রশাসনিক ব্যাপার । প্রশাসন দেখবে ।"
এদিকে, প্রশাসন বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক, সেটাই এখন চাইছেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি দখল করে থাকা ব্যবসায়ী এবং দোকানিদের একাংশ । বিদ্যুৎ ভট্টাচার্য নামে এক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, "স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমিতে স্বাস্থ্য পরিষেবার মানোন্নয়ন হলে সকলেরই ভালো । তবে, এখানে আমরা বছরের পর বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি । তাই, আমাদের বিষয়েও সরকার যদি একটু ভাবে, তাহলে উপকার হয় ।"
অন্যদিকে, যাঁর ক্ষোভের কারণে জেলা প্রশাসন নতুন করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি জরিপ করতে বাধ্য হল, সেই পুর পারিষদ অরুণ ভৌমিক বলেন, "এর আগে বিএলআরও-র যে ইন্সপেক্টর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি সঠিকভাবে যাচাই না করেই রিপোর্ট দেন প্রশাসনের কাছে । সেই কারণেই হয়তো এ দিন নতুন করে সেখানে জমি জরিপ হল পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসারের নির্দেশে । আমি যতদূর জানি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওই জমিতে অন্ততপক্ষে 40টি দোকান রয়েছে । এবং এঁরা সকলেই বিচ্ছিন্নভাবে ব্যবসা করছে সেখানে । এঁদের নির্দিষ্ট একটা জায়গায় আনা হোক সেটাই আমি চাই । সেই সঙ্গে পুরসভার ওই জমি ব্যবহার করা হোক স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে ।"