কলকাতা, 13 নভেম্বর: 37তম জন্মদিনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন যে, দলের পারফরম্যান্স ও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে দলনেত্রীকে একটি রিপোর্ট জমা করেছেন তিনি । সেই রিপোর্টে সাংগঠনিক রদবদল-সহ একাধিক বিষয়ে সুপারিশ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক । দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি দলনেত্রীকে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন, তাতে বিশেষ ভাবে জায়গা পেয়েছে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়টি । এই অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রভাব এতটাই যে নির্বাচনেও তার প্রভাব পড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন অভিষেক ৷
এই মুহূর্তে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলকে গুছিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে তৃণমূল কংগ্রেসে । একইসঙ্গে দলের সমস্ত ফাঁকফোকর মেরামতের কাজও সমান্তরালভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । আর সেই কারণে বুথ ভিত্তিক তথ্য এক জায়গায় করে তৈরি হয়েছে রিপোর্ট । ইতিমধ্যেই তা তিনি দলনেত্রীকে পাঠিয়ে দিয়েছেন ।
এই রিপোর্টে তাৎপর্যপূর্ণভাবে জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে । এখানেই শেষ নয়, দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে কোন্দল-কাঁটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাঁরা পরস্পরের ক্ষতি করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় দলবিরোধী পদক্ষেপ করছেন বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে । দলের সামগ্রিক পর্যালোচনা করতে গিয়ে এই বিষয়টি নজরে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ।
জানা যাচ্ছে, দলের লোকসভা নির্বাচনের ফল পর্যালোচনা করতে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দেখেছেন, এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই গত লোকসভা নির্বাচনে দলকে বেশ কয়েকটি আসনে পরাজিত হতে হয়েছে । আর সে কারণেই এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে দলনেত্রীকে রিপোর্ট দিয়েছেন তিনি ।
গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী বহু পুর এলাকাতেই পিছিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস । এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোনও পুর এলাকায় নির্বাচন করাতে গিয়ে টাউন সভাপতির সাহায্য পাননি পুরপ্রধানরা । আবার কোথাও কোথাও দেখা গিয়েছে বুথের দায়িত্বে থাকা নেতার সঙ্গে মনোমালিন্য রয়েছে জনপ্রতিনিধির । এ ধরনের ছোটখাটো দ্বন্দ্বের কারণে বহু জায়গায় ফল ভুগতে হয়েছে দলকে । একের বেশি লোকসভা আসনে ভালো লড়াই দিয়েও এ ধরনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই শেষ পর্যন্ত দলকে হারতে হয়েছে ।
দলীয় সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলনেত্রীকে যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে পুরুলিয়া, বিষ্ণুপুর, বালুরঘাটের মতো আসনগুলির উল্লেখ রয়েছে । মূলত এই তিন আসনে তৃণমূল কংগ্রেস হেরেছে স্বল্প ব্যবধানে ৷ এর মধ্যে পুরুলিয়ায় তৃণমূলের হারের ব্যবধান ছিল 17069, বিষ্ণুপুরে 5567 আর বালুরঘাটে তৃণমূল হেরেছিল 10,386 ভোটে । এক্ষেত্রে দলের নেতাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব তথা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রুখতে দলনেত্রীকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন অভিষেক ।