রাঁচি, 23 নভেম্বর: ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়াই কি শেষ পর্যন্ত সাপে বর হল হেমন্তের ? ঝাড়খণ্ডে 81টি আসনের মধ্যে 56টি আসনে জয়ী হয়েছে জেএমম, কংগ্রেস, আরজেডি ও সিপিআই (এমএল)(এল)-এর 'ইন্ডিয়া' জোট ৷
আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যে শিবু সোরেনের হাতে তৈরি ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) একাই পেয়েছে 34টি আসন ৷ কংগ্রেস 16 এবং আরজেডি-র ঝুলিতে গিয়েছে 4টি আসন ৷ সিপিআই (এমএল)(এল) জয়ী হয়েছে 2টি আসনে ৷ অন্যদিকে. বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ পেয়েছে 21টি আসন ৷ ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনের কো-ইনচার্জ ছিলেন অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ৷ নির্বাচনের আগে তাঁর নেতৃত্বে অভিমানী চম্পাই সোরেন জেএমএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন ৷ সূত্রে জানা গিয়েছে এই হারে হিমন্ত শোকাহত ৷
চলতি বছরের 31 জানুয়ারি জমি দুর্নীতি সংক্রান্ত বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন ৷ গ্রেফতার হওয়ার ঠিক আগে মুখ্যমন্ত্রীর পদে পদত্যাগ করেন ৷ পরে তাঁর জায়গায় দায়িত্ব নেন নয়া মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন ৷ 28 জুন হেমন্তের জামিন মঞ্জুর করে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট ৷ জেল থেকে ফিরে তিনি ফের মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি জানান ৷ তখন পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়েই মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়েন চম্পাই সোরেন ৷ ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন হেমন্ত ৷ 4 জুলাই ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের সরকার গঠিত হয় ৷
এই ঘটনা সহজে মেনে নিতে পারেননি চম্পাই ৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন ৷ অগস্টের একেবারে শেষে বিজেপিতে যোগ দেন চম্পাই ৷ দল বদলে তিনি সেরাইকেলা বিধানসভা আসন থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছেন ৷ কিন্তু বিজেপি পেয়েছে মাত্র 22টি আসন ৷
জয়ী হয়েছেন ঝাড়খণ্ডের প্রথম এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মারাণ্ডিও ৷ তিনি ঝাড়খণ্ডে বিজেপির সভাপতিও বটে ৷ তাঁর কাছে পরাজিত হয়েছেন জেএমএম প্রার্থী নিজাম উদ্দিন আনসারি ৷ বাবুলাল পেয়েছেন 1লক্ষ 06 হাজার 296 টি ভোট ৷ অন্যদিকে, নিজাম পেয়েছেন 70 হাজার 858 টি ভোট ৷ তাঁকে 35 হাজার 438 টি ভোটে হারিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ৷
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা ঝাড়খণ্ডে এসে বসবাস করছে ৷ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়েদের সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক পাতিয়ে স্থায়ীভাবে ভারতীয় হওয়ার চক্রান্ত করছে ৷ আদিবাসীদের সংস্কৃতি, খাওয়াদাওয়া সবকিছুকে পালটে দেওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশিরা ৷ এই অভিযোগকে হাতিয়ার করেই ঝাড়খণ্ডে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছে বিজেপি ৷ কিন্তু রাজনৈতিক মহলের মতে রাজ্যের সাঁওতাল পরগনা এলাকায় এই তত্ত্ব আদিবাসীদের মন ভোলাতে পারেনি । ফলাফলই তার প্রমাণ ৷ বরং তাঁরা হেমন্ত সোরেনেই ভরসা রেখেছেন ৷
রাজ্যের 81টি বিধানসভা আসনের মধ্যে 43টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল জেএমএম ৷ তার মধ্যে 34টিতে জয়ী হয়েছে ৷ 30টি আসনে লড়ে কংগ্রেসের দখলে এসেছে 16টি ৷ রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) 6টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে 4টি আসনেই জয় পেয়েছে ৷ সিপিআই (এমএল)(এল) 4টির মধ্যে 2টি আসন দখল করতে পেরেছে ৷
ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নায়ক হেমন্ত সোরেন এবারও তাঁর শক্তিশালী ঘাঁটি বারহাইত থেকে জয়ী হয়েছেন ৷ বিজেপির গামলিয়েল হেমব্রমকে 39 হাজার 791 ভোটে পরাজিত করেছেন ৷ সোরেন পেয়েছেন 95 হাজার 612 ভোট, মোট ভোটের 58.95 শতাংশ ৷ 2019 সালে এই জয়ের মার্জিন ছিল 25 হাজার 740 ৷ এমনকী তাঁর প্রাপ্ত ভোটও বেড়েছে, গতবার যা ছিল 73 হাজার 725 ৷ এনিয়ে পরপর তিনবার সাঁওতাল পরগনার অন্তর্ভুক্ত এই আসনটি থেকে জয়ের হ্যাটট্রিক করলেন শিবু-পুত্র হেমন্ত ৷
জয়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "ঝাড়খণ্ডে আমরা গণতন্ত্রের পরীক্ষায় পাশ করে গিয়েছি ৷ পরে আমাদের কৌশল ঠিক করব ৷ আবুয়া রাজা, আবুয়া সরকার (আমাদের রাজ্য, আমাদের সরকার) ৷" তিনি যে ফের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন, তা নিয়ে কোনও দ্বিধাই নেই কংগ্রেসের ৷ দলের সাধারণ সম্পাদক গুলাম আহমেদ মির বলেন, "সোরেনই ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী এবং তিনিই থাকবেন ৷"
শুধু যে তিনিই জিতেছেন, তা নয়, তাঁর স্ত্রী কল্পনা সোরেনও জয়ী হয়েছেন গান্ডে বিধানসভা থেকে ৷ হেমন্ত সোরেন জেলে যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী দলকে শক্ত হাতে সামলেছেন ৷ স্বামীর অনুপস্থিতিতে দলের কাজকর্ম পরিচালনা করেছেন ৷ সর্বোপরি ধৈর্য ধরে সুসময়ের অপেক্ষা করেছেন উচ্চশিক্ষিত কল্পনা ৷ বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারে তিনি অন্যতম প্রধান স্বর হয়ে উঠেছিলেন ৷ ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বারিপদায় পড়াশোনা শেষ করে তিনি এমবিএ করেন ভুবনেশ্বর থেকে ৷ তিনি বারবারই সরব হয়েছেন যে, তাঁর স্বামীর এই গ্রেফতার হওয়াটা একটা বৃহত্তর ষড়যন্ত্র মাত্র ৷ রাজনৈতিক মহলের মতে হেমন্ত-কল্পনা এখন 'পাওয়ার কাপল' ৷
ঝাড়খণ্ডের জন্ম হয় 2000 সালে ৷ তার মধ্যে সবচেয়ে পূর্ণ সময় মুখ্যমন্ত্রী থেকেছেন বিজেপির রঘুবর দাস ৷ তারপরে 2019 সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হাত থেকে ঝাড়খণ্ডকে কার্যত ছিনিয়ে আনেন জেএমএম-এর হেমন্ত সোরেন ৷ তিনি সেবার দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হন ৷ মাঝে কয়েকদিন তিনি জেলে ছিলেন ৷ এরপর ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন তিনি ৷ এবার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে একেবারে কোণঠাসা করে দিয়েছে তাঁর নেতৃত্বে থাকা জেএমএম তথা 'ইন্ডিয়া' শিবির ৷ এই নির্বাচনে দু'দফায় 13 ও 20 নভেম্বরে ভোট পড়েছে 67.74 শতাংশ, যা রাজ্য গঠনের পর সবচেয়ে বেশি ৷