বোলপুর, 24 জুন: "জমি দিবি, নাকি ছেলের মাথা নিবি?" এমনই হুমকি দিয়ে বোলপুরে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলে আশ্রিত জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে । পাড়ুই থানার সাত্তোর গ্রাম পঞ্চায়েতের কসবা লাগোয়া এলাকায় বেসরকারি আবাসন তৈরির জন্য প্রায় 22 বিঘা পাট্টা ও বর্গা জমি আদিবাসী-সহ চাষিদের কাছ থেকে বলপূর্বক লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৷ এই মর্মে বোলপুর মহকুমা শাসক থেকে শুরু করে বোলপুর ও জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন জমিহারারা ৷
এমনকী, জেলাশাসক ও জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন জমিহারারা। তাঁদের অভিযোগ, বেসরকারি আবাসন তৈরির জন্য বাড়িতে জমি মাফিয়ারা এসে হুমকি দেয়, মাত্র 30 থেকে 50 হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে জমি লিখিয়ে নেয় ৷ বর্তমানে বিলাসবহুল আবাসনের পিছনে মাটি ও তালপাতার ঘরে বাস করছেন জমিহারা কৃষক পরিবারগুলি ৷
প্রসঙ্গত, যেখানে জমি দখলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি জমি উদ্ধার করে ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের। সেই জায়গায় বাম আমলে দেওয়া পাট্টা, বর্গা জমি দখলের অভিযোগ । যদিও, আবাসনের অন্যতম কর্ণধার সুবর্ণা মুখোপাধ্যায় বলেন, "সরকারি নিয়ম মেনেই জমি কিনেছি। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া নথির ভিত্তিতেই জমি কেনা হয়েছে। দখলের কোনও বিষয় নেই ৷"
শাসকদল তৃণমূলের মদতে শান্তিনিকেতনে জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে নতুন কিছু নয়। এবার বোলপুরের পাড়ুই থানার সাত্তোর গ্রাম পঞ্চায়েতের কসবা লাগোয়া 52 বিঘা জমিজুড়ে তৈরি হচ্ছে একটি বেসরকারি আবাসন। বিলাশবহুল কটেজ তৈরি করে চলছে বিক্রি। অভিযোগ, এই প্রকল্পের জন্য প্রায় 22 বিঘা জমি বলপূর্বক লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই জমির মধ্যে আদিবাসীদের বর্গা-পাট্টা জমি রয়েছে, রয়েছে চাষিদের জমিও। পাট্টা, বর্গা জমির মালিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে এই বলে, "জমি দিবি, নাকি ছেলের মাথা নিবি।"
এভাবে হুমকি দিয়ে কাউকে 30 হাজার, কাউকে 50 হাজার টাকা দিয়ে জমি লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই মর্মে প্রায় 30 জন জমিহারা বীরভূম জেলাশাসক ও জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাশাপাশি বোলপুর মহকুমা শাসক-সহ বোলপুর মহকুমা ও জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন ৷ উল্লেখ্য, দুই দশক ধরে বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকায় জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। জমি দখল করে বহুতল, রিসর্ট, হোটেল, আবাসন, কটেজ নির্মাণের অভিযোগ একাধিক উঠেছে।
জমিহারাদের মধ্যে পার্বতী রায়, আরতি রায়, গৌড় রায়, হারাধন হাঁসদা বলেন, "বাড়িতে দিনরাত লোক এসে বলছে, জমি দিবি নাকি ছেলের মাথা নিবি। ছেলের মাথা কি সস্তা? ভয়ে লিখে দিতে হয়েছে। কেউ টাকা পেয়েছে, কেউ পায়নি ৷ ভয়ে তখন অভিযোগ করতেও পারেনি ৷ কার কাছে যাব, কাকে বলব, কিছুই বুঝতে পারিনি ৷ আমরা কেউ জমি বিক্রি করিনি ৷ জমি নিয়ে নিয়েছে। প্রচুর ধান উঠত এই জমি থেকে, আমরা চাষ করে খেতাম ৷ জমি ফিরিয়ে দিক, চাষ করেই খাব।"
বোলপুর মহকুমা শাসক অয়ন নাথ বলেন, "আমি অভিযোগ পেয়েছি। অনেকেই কমপেনশেশন ঠিকমতো পায়নি ৷ আমি তাদের বলেছি কেস পুট-আপ করতে ৷ সমগ্র বিষয়টি আমাদের তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে ৷ নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হলে আবার বিষয়টি দেখব।"