সন্দেশখালি, 30 ডিসেম্বর: এক বছর আগে সন্দেশখালির মহিলারাই প্রথম শেখ শাহজাহানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন । বছর ঘুরতেই সেই মহিলারাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় আবেগে ভাসলেন । সোমবার উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালির মিশন মাঠে প্রশাসনিক সভাস্থল স্থানীয় মহিলারাই ভরিয়ে দিলেন । তাঁরা অনেকেই নদী পেরিয়ে সকাল সকাল মুখ্যমন্ত্রীর সভার মাঠে পৌঁছন । আর তা দেখে আপ্লুত রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ।
মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মহিলাদের উদ্দেশে বার্তা দিলেন, "মা-বোনেরা অনেক দূর দূরান্ত থেকে কষ্ট করে এসেছেন । আপনাদের অন্তর থেকে প্রণাম জানাই । আপনাদের পদধূলিতে সন্দেশখালির মাটি সমৃদ্ধ হয়েছে । আপনারাই আমাদের গর্ব ।"
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে নারী নির্যাতন, জমি জবরদখল-সহ একাধিক ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল দ্বীপ অঞ্চল সন্দেশখালি । বিশেষ করে সেই সময় মহিলারা রাস্তায় নেমে গর্জে উঠেছিলেন শেখ শাহজাহান ও তাঁর বাহিনীর বিভিন্ন অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে । সন্দেশখালি ইস্যুকে হাতিয়ার করে তখন ঝাঁপিয়ে পড়ে বিরোধী শিবির । তারা প্রচার করতে শুরু করে সন্দেশখালির মা-বোনেরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই অভিযোগে কান দেননি ৷ লোকসভা নির্বাচনের ভোট প্রচারে বসিরহাটে এসে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ভোটে জয়লাভের পর সন্দেশখালিতে যাবেন ।
ভোটে বসিরহাট কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে প্রায় তিন লক্ষ 33 হাজার ভোটে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন । যদিও তার কিছুদিন পরে হাজি নুরুলের মৃত্যু হয় । মুখ্যমন্ত্রী সন্দেশখালির বাসিন্দাদের দেওয়া কথা রেখেছেন । সোমবার স্থানীয় অরবিন্দ মিশন মাঠে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সভা করেন । আর সেই সভায় সোমবার সকাল থেকে সন্দেশখালির নদীপথে ঘেরা বিভিন্ন দ্বীপ থেকে হাজার হাজার মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর সভার মাঠে হাজির হন । তাঁদের হাতে ছিল রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্ল্যাকার্ড ।
বেলা গড়াতেই দেখা যায়, সভার মাঠের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা মহিলারাই ভরিয়ে দিয়েছেন । অনেকেই সেখানে বসার জায়গা পাননি । তাঁরা মাঠের শেষ দিকে মুখ্যমন্ত্রীর কথা শোনার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন । দুপুর একটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে সভাস্থলে পৌঁছন । রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান সভা মঞ্চে উঠতেই করতালি দিয়ে অভিবাদন জানান সন্দেশখালির মহিলারা । আর মহিলাদের এই জনপ্লাবন দেখে আপ্লুত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
বক্তব্যের শুরুতেই সন্দেশখালির মহিলাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী প্রণাম জানান । মহিলাদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন । তারপর তিনি বলেন, "একদিন সন্দেশখালির মেয়েরা দেশের এক নম্বরে পৌঁছবে । আমি চাই, সন্দেশখালির কোনও মেয়ে মাধ্যমিকে প্রথম স্থান পাক । উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম হোক । কেউ কখনও হতাশ হবেন না । সবাই ভালো থাকবেন । বিপথে পরিচালিত হবেন না । টাকা আসবে । আবার চলেও যাবে । কিন্তু সম্মান কখনও ফিরে আসবে না । সম্মান চলে গেলে সবকিছু চলে যাবে । মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী । আজ আছে, কাল থাকবে না । কেউ কোটি টাকার স্বপ্ন দেখতেই পারে । কিন্তু, হঠাৎ তাঁর মৃত্যু হলে সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে । তাই, বলব টাকার পিছনে কেউ ছুটবেন না।"
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী সন্দেশখালির মাটিতে পা রাখায় খুশি স্থানীয় মহিলারা । তবে, সরকারি প্রকল্প থেকে অনেকেই বঞ্চিত থাকায় তা নিয়ে আক্ষেপ ঝরে পড়েছে মহিলাদের একাংশের মধ্যে ৷ সন্দেশখালির বাসিন্দা অনিতা মণ্ডলের কথায়, "দিদি এখানে আসায় আমরা খুব খুশি ৷ কিন্তু কোনও সরকারি সুবিধা পাইনি আমরা ৷ নদীর ধারে বাড়ি তবে ঘরও পায়নি ৷ দিদির কাছেও যেতে পারলাম না ৷"