কলকাতা, 2 জানুয়ারি: বছরের শুরুতেই নক্ষত্রপতন বিনোদন দুনিয়ায় ৷ বৃহস্পতিবার মাত্র 56 বছর বয়সে তারাদের দেশে পাড়ি দিয়েছেন 'বাঘাযতীন' খ্যাত পরিচালক অরুণ রায় ৷ তাঁর পরিচালনায় 'চোলাই', 'হীরালাল' থেকে 'এগারো' ছবিতে অভিনয় করেছেন খরাজ মুখোপাধ্যায় ৷ অরুণ রায়ের মৃত্যুর খবরে তিনি শোকাহত ৷
পরিচালককে নিয়ে খরাজ মুখোপাধ্যায় ইটিভি ভারতকে বলেন, "কমার্শিয়াল ছবি তো অনেকেই করেন ৷ কিন্তু মৌলিক বিষয়বস্তু নিয়ে ছবি কজন করেন ৷ হাতোগোনা কয়েকজন আছেন, সেই তালিকায় ছিলেন অরুণদাও ৷ এক-একটা ছবির বিষয়বস্তু এক একরকম হত এবং তাতে নতুনত্ব থাকত ৷ তিনি যথাযথ পরিচালক ছিলেন ৷ তাই অরুণ দা'র চলে যাওয়া সত্যিকারের অনেক বড় ক্ষতি ৷"
তাঁর কথায়, "আর তো প্রযোজক খুঁজতে হবে না, কষ্ট করে টাকা জোগাড় করতে হবে না ৷ আর কোনও চাপ নেই ৷ উনি তো অথেনটিক ছবি করতে চেয়েছিলেন, যাকে ছবি বলে আর কী ! নাচা-কোদার ছবি তো করতেন না ৷ ফলে প্রযোজককে বুঝিয়ে, লড়াই করে ছবি করতে হত অরুণ রায়কে ৷ কারণ উনি ঠিকঠাক ছবি করতে চেয়েছিলেন ৷ ছবির মাধ্যমে সামাজিক বার্তা দিয়ে চেয়েছিলেন ৷ অনেক অজানা ইতিহাস তিনি ছবির মাধ্যমে তুলে ধরতেন ও মানুষকে জানাতেন ৷ এটাই ছিল ওঁর ছবি করার ধরন ৷"
অরুণ রায়ের দুটি ছবিতে অভিনয় করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ৷ ইটিভি ভারতের কাছ থেকেই প্রথম এ দিন পরিচালকের মৃত্যুসংবাদ পান এই অভিনেতা ৷ তিনি বলেন, "খুব গুণী মানুষ ছিলেন অরুণ রায় । যে কাজটাই করেছেন দাগ কেটে রাখার মতো । যে কাজটাই করতেন আবেগ নিয়ে করতেন । বড্ড অসময়ে চলে গেলেন । একজন ভালো পরিচালককে মিস করব । আরও ভালো কাজ করতে পারতেন ।"
অন্যদিকে, টেলিভিশন খ্যাত রোহন ভট্টাচার্য অরুণ রায়ের 'বাঘাযতীন' ছবিতে অভিনয় করেছেন । ইটিভি ভারতের কাছ থেকে পরিচালকের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে হতবাক হয়ে যান তিনি ৷ নিজেকে একটু সামলে নিয়ে অভিনেতা বলেন, "ছিঃ ছিঃ, এটা চলে যাওয়ার বয়স হল ? আমি বলতাম, এত নেশা করো না । আমাকে বলত, তোদের মতো দুধ খেয়ে বাঁচব নাকি ? বিড়ি খাস না, সিগারেট খাস না, মদ খাস না । যতদিন বাঁচব রাজার মতো বাঁচব ।"
রোহন আরও বলেন, "সেটে সবাইকে হাসাত অরুণ দা । আমি, দেবদা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতাম । এত সেন্স অফ হিউমার ছিল । ভালো ছিল তো কদিন । আমার সঙ্গে কথাও হয়েছে । হঠাৎ চলে গেল ? আমি সামলাতে পারছি না নিজেকে । কত কিছু জানত । খুব শিক্ষিত একজন মানুষ ছিল । কত ইতিহাস জেনেছি অরুণদা'র কাছ থেকে । ঐতিহাসিক কিছু জানার হলে অরুণদা'কেই জিজ্ঞেস করতাম আমি ।"
অরুণ রায়ের পরিচালনায় '8/12-বিনয় বাদল দীনেশ' ছবিতে অভিনয় করেছেন রেমো ৷ তিনি পরিচালকের মৃত্যুতে বলেন, "আমাকে গালাগালি দেওয়ার লোকটা চলে গেল ৷ আমি আর কারও থেকে গালাগালি খাব না ৷ তাঁর কেবল অধিকার ছিল আমাকে গালাগালি দেওয়ার ৷"
স্মৃতিচারণা করে রেমো বলেন, "অরুণদার সঙ্গে কাজ করেছি কোনওদিন মনে হয়নি ৷ ওঁর মজাদার পরিবারের অংশ হয়ে গিয়েছিলাম ৷ 10-12 দিন আগে অরুণদার বাড়িতে গিয়েছিলাম ৷ উনি তখন একদম সুস্থ ছিলেন ৷ অরুণ রায়ের মতো ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনার মানসিকতা থাকলে তবেই সেই ধরনের ছবি করা যাবে ৷ উনি যুব প্রজন্মকে কাজ দিতেন ৷ রাস্তা থেকে তুলে নিজের ছবিতে অভিনয় করিয়েছেন ৷ চরিত্র নির্বাচন খুব ভালো করতেন ৷ আমি ওঁর মিমিক্রি করতাম ৷ সেটা আমি ওঁকে বলেওছিলাম ৷"