কলকাতা, 13 ফেব্রুয়ারি: জামিন চান নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ৷ মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর জামিনের তীব্র বিরোধিতা করল ইডি । ইডির আইনজীবী দাবি করেন, এসএসকেএম হাসপাতালে দিব্য আছেন সুজয় ৷ তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার একাধিক নথি নষ্ট হতে পারে ৷ অন্যদিকে সুজয়ের আইনজীবী প্রাণ সংশয়ের প্রসঙ্গ তুলে তাঁকে বাড়িতেই ইডি হেফাজতে রাখার আরজি জানান ৷
মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে ৷ সেখানে ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বলেন, ‘‘সুজয় ভদ্র গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে থেকেছেন । এসএসকেএম হাসপাতালে তিনি রয়েছেন বেশ আয়েশে । যখন আদালতে বলা হয়েছিল তিনি ভয়েস স্যাম্পেল দিতে পারবেন না । সেই দিনই একটি সংবাদমাধ্যমে দেখানো হয় তিনি হাসপাতালে ঘুরছেন, হাসিঠাট্টা করছেন । পরে অবশ্য আদালতে অন্য একটি বেঞ্চের নির্দেশে তাঁর ভয়েস স্যাম্পেল নেওয়া হয় । এসএসকেএম হাসপাতালে তিনি দিব্য বেড দখল করে রয়েছেন । আর সাধারণ মানুষ বেড পাচ্ছে না । তাঁর জামিনের আবেদন অবিলম্বে খারিজ করা উচিত ।’’
অন্যদিকে আইনজীবী জিষ্ণু সাহা সুজয় ভদ্রের তরফে বলেন, ‘‘তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্টই তিনি সুস্থ না অসুস্থ তাঁর প্রমাণ ।জুন মাস থেকে তিনি অসুস্থ । অগস্ট মাসে তাঁর হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে । অপারেশন করতে হয় । তাঁর কোমর্বিডিটি রয়েছে। উদ্বেগজনিত সমস্যা রয়েছে । তাঁর সুগারের মাত্রা বেশি । জেলে তাঁর যথাযথ চিকিৎসার মতো ব্যবস্থা নেই । তাঁকে পর্যাপ্ত চিকিৎসার সুযোগ দিতে হবে ।’’
বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানতে চান, ‘‘গত দেড় মাসে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি কি খারাপ হয়েছে ? অগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি চিকিৎসা করিয়েছেন তাঁর কি কোনও উন্নতি হয়নি ? তিনি তো মেডিক্যাল গ্রাউন্ডেই শুধু জামিন চাইছেন
। তাঁর কি জামিন মঞ্জুর করা উচিত ?’’
সুজয়ের আইনজীবী এর উত্তরে ফের তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ের কথাই উল্লেখ করেন । অগস্টে তাঁর (সুজয়) বাইপাস সার্জারি হয় । তারপর থেকে তাঁর আনুসঙ্গিক আরও একাধিক শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী । পাশাপাশি আইনজীবী জানান, আদালত যদি তাঁর জামিন মঞ্জুর নাও করে তবু আদালতের এই বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত যে তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারে, যদি তাঁকে ফের জেলে পাঠানো হয় । তাঁর যত্ন প্রয়োজন, তাঁকে সব সময় ডাক্তারের পরামর্শে চলতে হবে । আদালত যদি তাঁর জামিন না মঞ্জুর করে, তাহলে তাঁকে তাঁর বাড়িতেই ইডির হেফাজতে থাকার নির্দেশ দিক ।
বিচারপতি ঘোষ সুজয়ের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, "মনে হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নাকি পারিবারিক সান্নিধ্য, এই দুইয়ের মধ্যে কোনটা তাঁর পাওয়া উচিত, এই নিয়েই আপনি বলে যাচ্ছেন ।" সুজয়ের আইনজীবী জিষ্ণু সাহা তখন বলেন, "তাঁর বিভিন্ন মেডিক্যাল রিপোর্টেই এটা সুস্পষ্ট, সুজয় ভদ্রের পারিবারিক সান্নিধ্য, যত্ন এবং চিকিৎসা সবটাই প্রয়োজন । কারণ কিছুদিন আগে তাঁর স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে ।"
আগামী 23 ফেব্রুয়ারি মামলার রায় দেবেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ ।
আরও পড়ুন: