গঙ্গাসাগর, 6 জানুয়ারি: আগামী 10 জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা ৷ ইতিমধ্য়েই, সাগরে স্নানের জন্য ভিড় জমাতে শুরু করেছেন পুণ্যার্থীরা ৷ এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাজ ফেলেছে বায়ু দূষণ ৷ প্রশাসন তরফ থেকে সব ধরনের সতর্কতা স্বত্ত্বেও সোমবার সকালে বিপদসীমার উপরে পৌঁছে গেল দূষণের মাত্রা । এদিন, সকাল 10টায় দূষণ প্রদর্শক বোর্ডে AQI-এর মাত্রা 244, মেলার আবহে যা যথেষ্ট চিন্তার বিষয় ।
বাতাসের মান সাধারণত যে সূচকের মাধ্যমে মাপা হয় তাকেই বলা হয় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অর্থাৎ AQI । সাধারণত 0-50-এর মধ্যে থাকা এলাকাকে বলা হয় 'গ্রিন জোন' । অর্থাৎ, এখানে দূষণের কোনও ঝুঁকি নেই । 'হলুদ জোনে' এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স থাকে 51 থেকে 100 মধ্যে । এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জন্য সামান্য ঝুঁকি থাকলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা তেমন বিপজ্জনক নয় । এরপর রয়েছে 'অরেঞ্জ জোন' । এ ক্ষেত্রে এয়ার কোয়ালিটির মাত্রা 101 থেকে 150 । 'রেড জোন' হল 151 থেকে 200 । আর 201 থেকে 300 পর্যন্ত 'পারপেল জোন', 300 উপরে হলে সেটা হল 'মেরুন জোন' ।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী, গঙ্গাসাগর এখন রয়েছে 'পারপেল জোনে', সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য যা মোটেই ভালো নয় । তাৎপর্যপূর্ণভাবে, দূষণের নিয়ন্ত্রণ মাত্রার মধ্যেই রয়েছে শব্দ । সেখানে শব্দ দূষণের সূচক 39 ডেসিবেল । ফলে, এই নিয়ে তেমন চিন্তা করার কারণ আছে বলে মনে করছেন না এখানে আসা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পূণ্যার্থীরা ।
উল্লেখ্য, সোমবার গঙ্গাসাগরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেই কারণে দূষণের বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও, তা করা যায়নি ৷ এই প্রসঙ্গে দূষণ নিয়ন্ত্রণ দফতরের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, "মূলত, কুয়াশা ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কম হওয়ার কারণে এই দূষণ ৷ সেই সঙ্গে, বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণও বেড়েছে ৷ ফলে বেড়েছে দূষণের মাত্রা ৷"
এদিকে, প্রশাসন মেলার মাঠে দূষণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রথম থেকেই সক্রিয় । প্রতিদিন এই বিষয়ে মেলায় আগত ভক্তদের সতর্ক করার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে ৷ এমনকী, মেলা প্রাঙ্গণের দায়িত্ব থাকা ভলান্টিয়ার থেকে শুরু করে পুলিশকেও এই বিষয়টি নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে । ফলে, এই বিষয়ে প্রশাসন সতর্ক । প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে গঙ্গাসাগরে ভাঙন একটা বড় চিন্তার কারণ ৷ তাই মেলার জন্য সাগর পাড়ে প্রতিদিন প্রচুর মাটি ফেলা হচ্ছে । ফেলা হচ্ছে বালিও ৷ গাড়ি যাতায়াতের সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে ৷ এর সঙ্গে দোসর কুয়াশা ৷ এর ফলে বায়ুতে বাড়ছে ধূলিকণার প্রভাব । দূষণ বাড়ার এটাও একটা কারণ বলে মনে করা হচ্ছে । প্রশাসনের তরফ থেকে ইতিমধ্যেই এই দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়ম করে জল ছেটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
কিন্তু, প্রশ্ন হল তার পরও দূষণের মাত্রা বাড়ছে কীভাবে ? কীভাবে মেলা প্রাঙ্গণে যেখানে সেখানে আগুন জ্বালানো হচ্ছে ? এক স্থানীয় দোকানদার স্বপন মাইতি বলেন, "এই বিষয়টি পুলিশ এবং প্রশাসনের মাধ্যমে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট কঠিন । কারণ, মেলায় যারা আসেন তারা প্রশাসনকে একরকম বুড়ো আঙুল দেখিয়েই মেলার মাঠে আগুন জ্বালান । বহু ক্ষেত্রে তাদের খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয় ৷ ফলে, এই আগুন জ্বালানোর ঘটানা এখানে একটা সাধারণ চিত্র । তবে এটা যে এভাবে বিপদ সীমার ছাড়িয়ে যাবে আমরাও ভাবতে পারিনি ।"
উল্লেখ্য, এদিন সকাল 7টা 30 মিনিটে কলকাতার বালিগঞ্জে AQI-এর মাত্রা ছিল 189, চেতলায় 176, ঢাকুরিয়ায় 171, ফোর্ট উইলিয়ামে 157, যাদবপুরে 182, মার্কিন কনসুলেটের সামনে AQI-এর মাত্রা ছিল 230 । সুতরাং, গঙ্গাসাগরে দূষণের মাত্রা কলকাতাকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে ৷