কলকাতা, 16 ফেব্রুয়ারি: 30তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বেঙ্গলি প্যানোরমা বিভাগে শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে সম্মানিত হয়েছে ৷ এবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পথে সেই ছবি, 'ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন'। 28 ফেব্রুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে এই ছবি ।
উল্লেখ্য, ছবিটি দেশে বিদেশে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফেস্টিভ্যালে মনোনীত এবং পুরস্কৃত হয়েছে । যেমন 'আটলান্টা ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল'-এ শ্রেষ্ঠ পরিচালক, 'এনএবিসি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল'-এ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ অভিনেতার স্বীকৃতি পেয়েছে ।
ক্রাইম ড্রামা এবং সায়েন্স ফিকশন এই ছবিতে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ধ্রুব নিজের প্রেমিকা রিমির পরিবারকে রক্ষা করতে গিয়ে এক জটিল মুহূর্তের সম্মুখীন হয় । ধ্রুব বুঝতে পারে রিমিদের জন্য টাকা জোগাড় করতে গেলে তাঁকে একটা অপরাধ করতে হবে । কিন্তু রিমি চায় না ধ্রুব কোনও খারাপ কাজ করুক । ধ্রুবকে দুটো রাস্তার মধ্যে যে কোনও একটা বেছে নিতে হবে ।
সমাজের চোখে কোনটা অপরাধ এবং কোনটা নয় - নৈতিকতার এই টানাপোড়েনে ধ্রুবর জীবন কখনও ডুবে যায়, কখনও ভেসে ওঠে । তার জীবন চার রকমের ছকে চলতে থাকে । ধ্রুবর এই চারটে জীবন কীভাবে একটি অন্যটির সঙ্গে যুক্ত ? এই চারটে জীবন কি আদতে সমান্তরাল বিশ্ব ? প্রশ্নের উত্তর মিলবে 28 ফেব্রুয়ারি ।
ধ্রুব ওরফে অভিনেতা ঋষভ বসু বলেন, "অভিজিৎদার সঙ্গে এটা আমার দ্বিতীয় প্রজেক্ট । প্রথমটা ছিল 'টুরু লাভ' । লকডাউনের সময়, হইচই-এর জন্য করেছিলাম । অভিজিৎদার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা সব সময়ই খুবই ভালো, কারণ ওঁর সঙ্গে আমার একটা অদ্ভুত রকমের বোঝাপড়া আছে । অভিজিৎদা যেটা বোঝাতে চায় সিনেমার মাধ্যমে, অভিনেতা হিসেবে আমি সবসময় চেষ্টা করি সেটাই ফলো করে চরিত্রের মনস্তত্ত্বটা তুলে ধরার ।"
তিনি আরও বলেন, "এই ছবিটা করার সময় আমরা অনেকবার আলোচনা করেছি, ওয়ার্কশপ করেছি এবং বাকি সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছি সিনগুলোর কোরিয়োগ্রাফ নিয়ে । সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রসেস ছিল আমাদের জন্য । খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ একটা পরিবেশে ওয়ার্কশপ হয়েছে, টিম ওয়ার্ক ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না ।"
তাঁর কথায়, "এই স্ক্রিপ্টের সবথেকে রোমাঞ্চকর বিষয় হচ্ছে, বাংলার চারজন চিত্রশিল্পীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা । এই ছবিটার মধ্যে একটা লাভ স্টোরি আছে, থ্রিলার এলিমেন্ট আছে, সাইন্স ফিকশন মোমেন্টস আছে, তাই অনেকগুলো বিভাগের ছোঁয়াই আছে ছবির মধ্যে । আর এটাই সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় স্ক্রিপ্টের ।"
ঋষভ বলেন, "গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা 'বিসর্জন'-এর একটা ছবিকে আমরা আমাদের ছবির চিত্রনাট্যে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছি । প্রথমে ওটা চিত্রনাট্যে ছিল না, পরে সেই দৃশ্য যোগ করা হয় এবং আমার মনে আছে আমরা অনেক রাতে একটা লোকেশনে শুট করছিলাম এবং সেখানকার সাধারণ মানুষ আমাদের নানাভাবে সাহায্য করেছে । শুটিং-এ লোকেশন সংক্রান্ত আমাদের কিছু সমস্যা হচ্ছিল সেগুলো তারা সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থে সমাধান করে দিয়েছে । এই দৃশ্যটা আমাদের ছবিতে একটা অন্য মাত্রা যোগ করেছে ।"
তাঁর সংযোজন, "ডিরেক্টর, প্রোডিউসার দুজনেই খুব খুশি হয়েছিল শুট শেষে । আমাদের একটা চিন্তা ছিল যে এই ছবিটা মানুষ কীভাবে গ্রহণ করবেন, কারণ এতগুলো বিষয়কে ছুঁয়ে যাচ্ছে ছবিটা । কিন্তু যখন কলকাতায় নজরুল তীর্থ এবং রবীন্দ্র সদনে দেখানো হল, তখন সেখানে দর্শকদের খুব ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছি । 'আটলান্টা', 'এনএবিসি' এবং 'কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল"-এ আমাদের ছবিটি নানান বিভাগে জিতেছে, এটা আমাদের কাছে বিশাল বড় পাওনা এবং পার্সোনালি আমার মনে হয় এনএবিসি-তে সেরা অভিনেতা পাওয়াটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা অ্যাচিভমেন্ট ।"
প্রসঙ্গত, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শক, সমালোচক, জুরিদের মুখে প্রশংসা পেয়েছে 'ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন' ছবিটি । ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবিতে মালিটভার্স এবং তাতে উন্নত ও বুদ্ধিদীপ্ত ভিএফএক্স- এর কাজ বাংলা ছবিতে সম্ভবত প্রথম । ছবিতে ধ্রুবর মায়ের চরিত্রে রয়েছেন সেঁজুতি মুখোপাধ্যায় । এঁরা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন বাদশা মৈত্র, কোরক সামন্ত, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিকা পাল, যুধাজিৎ সরকার, আনন্দরূপা চক্রবর্তী, দীপক হালদার, শান্তনু নাথ, অরুণাভ খাসনবিশ এবং প্রেরণা দাস ।
'ফোর্থ ফ্লোর এন্টারটেনমেন্ট ও কনসেপ্ট কিউব'-এর প্রযোজনায় এই ছবির সঙ্গীত পরিচালক প্রলয় সরকার । গান গেয়েছেন তিমির বিশ্বাস ও প্রলয় সরকার । সিনেম্যাটোগ্রাফার অর্ণব লাহা । ভিএফএক্স করেছেন শুভায়ন রায় । ছবিটির নিবেদনে অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী ।
ছবির পরিচালক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, "ক্ষমতাবান আর ক্ষমতাশূন্যদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমাদের মধ্যবিত্ত জীবন প্রায়শই একটা প্রশ্নের সামনে এসে দাঁড়ায় । আদর্শ আঁকড়ে থাকা না সারভাইভ করা ? কোন পথে যাব ? 'ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন'-এ ধ্রুবর জীবনের চারটি সম্ভাবনার চারটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে । চারটে অধ্যায়ে চারজন কিংবদন্তি বাঙালি আর্টিস্টকে ট্রিবিউট দেওয়া হয়েছে । যামিনী রায়, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিকাশ ভট্টাচার্য ও বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায় ।