কলকাতা, 4 মে: তিনি এখন অজ্ঞাতবাসে। স্বেচ্ছা নির্বাসন বললেও খুব একটা ভুল বলা হয় না। ফুসফুসের জটিল রোগ তাঁকে কাবু করেছে বছর কয়েক আগে। বাংলাকে কৃষি থেকে শিল্পের সরণিতে নিয়ে যেতে চাওয়া প্রখর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতার দৃষ্টি শক্তিও আগের মতো প্রবল নয়। তবু ভোট এলে তিনিই বামেদের মুশকিল আসান । তিনিই মরুভূমিতে মরুদ্যান। এবার লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন বার্তা দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বাম নেতা-কর্মীরা হয়তো মনে মনে বলছেন, "তিনি বৃদ্ধ হলেন, বনস্পতির ছায়া দিলেন সারাজীবন।" কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তাঁর ভিডিয়ো তৈরি করা হয়েছে।
সিপিএমের ডিজিটাল টিমের তৈরি সেই ভিডিও বার্তার শুরুতেই বুদ্ধদেব বলছেন, "নমস্কার। কেমন আছেন সবাই? দেশ-দুনিয়ার এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের ভালো থাকা সত্যিই দুষ্কর!" এরপরই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সন্দেশখালি নিয়ে সরব হন। এআই বার্তায় তাঁকে বলতে শোনা যায়, "কী ঘটে যাচ্ছে পশ্চিমবাংলায়! সন্দেশখালিতে যে অন্যায় তৃণমূল করেছে তার কোনও ক্ষমা নেই।" এরপর বামনেতার বার্তায় উঠে আসে বাংলার সামগ্রিক অবস্থা। কর্মসংস্থান না থাকা থেকে শুরু করে রাজ্যের দুর্নীতি প্রসঙ্গে সরব হন তিনি।
ভাষণের একটি প্রসঙ্গে আক্ষেপের সুরে নেতা বলেন, " আমরা রাজ্যটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলছিলাম। আমরা বলেছিলাম শিল্প হবে। কৃষির উন্নতি হবে। ছেলেমেয়েদের চাকরি হবে!" বক্তব্যের এই প্রসঙ্গে বিজেপিকে নিশানা করেন তিনি। একসময় বিজেপিকে বর্বর এবং অসভ্যদের দল বলে কটাক্ষ করেছিলেন রাজ্যের আরও এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। প্রায় সেই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল একদা জ্যোতির ছেড়ে যাওয়া আসনে বসা বুদ্ধদেবের কণ্ঠে ।
তিনি বলেন, "কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে দাঙ্গাবাজ-দুর্নীতিগ্রস্ত বিজেপি! নোটবন্দি করল। কর্পোরেটদের যথেচ্ছ তোষণ করছে। এখন নির্বাচনী বন্ডের মতো দুর্নীতি! দাম বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের। ধুঁকছে অর্থনীতি। প্রতিদিন সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়াচ্ছে বিজেপি- আরএসএস। মনে রাখবেন, তৃণমূলের আমলেই কিন্তু বাংলায় বিজেপির বাড়বাড়ন্ত। কে এই নরেন্দ্র মোদি? কে এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? আমাদের দেশকে, রাজ্যকে ধ্বংস করার সুযোগ ওদের দেবেন না। এই নির্বাচনে জয়ী করুন বামগণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির প্রার্থীদের। সামনে লড়াই। এ লড়াই লড়তে হবে, এ লড়াই জিততে হবে!"
সরকারি কাজে কম্পিউটারের ব্যবহারের নিয়ে সিপিএমের আপত্তির কথা সকলেই জানে। প্রযুক্তির ব্যবহারে তাদের অনীহা নতুন কোনও বিষয় নয়। আর এ নিয়ে রাজনৈতিক আক্রমণ কম হয়নি । দিন কয়েক আগেই বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, "এখন যাঁরা সিপিএম করছেন তাঁদের দাদুরা (সিপিএমের আদি প্রজন্ম) কম্পিউটারের বিরোধিতা করেছেন। বাবারা ইংলিশের বিরোধিতা করেছেন। এঁরা সিএএ-র বিরোধিতা করছেন।" তবে এবার এই ইমেজ থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে সিপিএম। আগেই এ আই-কে কাজে লাগিয়ে সঞ্চালিকা এনেছে সিপিএম এবার এই একই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বার্তাও প্রকাশ্যে আনল ডিজিটাল কালের সিপিএম।
আরও পড়ুন: