কলকাতা, 28 ডিসেম্বর: ফ্ল্যাট বাড়ির নকশা অনুমোদন করে সেগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে বাণিজ্যিক স্বার্থে । এক একটি দোকান তৈরি করে বিপুল টাকা আয় করছে নির্মাণকারী । এই অভিযোগ পেয়ে দ্রুত পদক্ষেপের পথে কলকাতা পুরনিগম । এই প্রবণতা ঠেকাতে প্রয়োজনে নতুন নিয়ম বা নিয়মের রদবদল করার নির্দেশ দিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম ।
শনিবার টক টু মেয়র অনুষ্ঠানে 77 নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিক আইয়াজ আহমেদ ফোন করে অভিযোগ করেন, 47 নম্বর ওয়ার্ডে কর্পোরেশনের কাছ থেকে ফ্ল্যাট বানানোর জন্য রেসিডেন্সিয়াল প্ল্যান পাশ করিয়ে সেখানে কমার্শিয়াল দোকান তৈরি করে বিক্রি হচ্ছে । একটি নয়, এই ধরনের তিনটি ঠিকানার অভিযোগ করেন তিনি । 1 ও 2 নম্বর হসপিটাল স্ট্রিট এবং 14 নম্বর টেম্পল স্ট্রিট, এই তিন ঠিকানায় রেসিডেন্সিয়াল প্ল্যান পাশ করিয়ে প্রোমোটার ব্যবসায়িক মুনাফা লুঠছেন বলে অভিযোগ ।
এই ঘটনা শোনার পরেই মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজেও এই অভিযোগের সত্যতা মেনে নেন । কলকাতার মেয়র বলেন, ‘‘ফ্যান্সি মার্কেট, সেন্ট্রাল গার্ডেনরিচ রোড, চাঁদনি চকের মতো এলাকায় এটা হচ্ছে ।" তৎক্ষণাৎ তিনি সার্ভে ডিপার্টমেন্টকে নির্দেশ দেন ওই এলাকাগুলি পরিদর্শন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য । পাশাপাশি বিল্ডিং বিভাগকে নির্দেশ দেন, কেএমডিএর সঙ্গে কথা বলে ল্যান্ড ইউজ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট কন্ট্রোল প্ল্যান (এলইউডিসিপি)- এর কোনও পরিবর্তন আনা সম্ভব কি না খতিয়ে দেখতে ।
এখানেই শেষ নয়, অভিযোগকারী কলকাতা পুরনিগমের বিল্ডিং ডিপার্টমেন্টের শুনানি আধিকারিকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন টক টু মেয়রে । আইয়াজ আহমেদের অভিযোগ, ওই আধিকারিক বিল্ডিং ভাঙার মতো মেশিন নেই বলে বিষয়টি লঘু করে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তিনিই আসলে টাকার বিনিময়ে এই বেআইনি বিষয়টি রেগুলারাইস করে আইনি বৈধতা দিচ্ছেন ।
এই প্রসঙ্গে মেয়র ফিরহাদ হাকিম সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আধিকারিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নস্যাৎ করে দেন । তিনি বলেন, "এটা ঠিক না । তার কারণ হচ্ছে, প্রমাণ ছাড়া কেউ কারও দিকে আঙ্গুল তুলে দেয় । যেটার কোনও প্রমাণ নেই । যেটা তারা করে অন্যায় করে । মানুষের আত্মসম্মানটা সবচেয়ে বেশি । চোর বলে দেওয়া কাউকে, এটা ঠিক না । যদি প্রমাণ থাকে, তাহলে নাগরিক হিসেবে তাঁরও কর্তব্য ব্যবস্থা নেওয়া । যদি কেউ ঘুষ চেয়ে থাকেন, তাঁকে ধরানোটাও নাগরিকের কর্তব্য । কিন্তু একজনের নামে আলটপকা বলে দিলাম, এটা অন্যায় । এটা পাপ ।"
কলকাতার মেয়র আরও বলেন, "বিভিন্ন জায়গায় এই প্রবণতা এখন দেখা যাচ্ছে । ব্যবসা বাড়ছে শহরে, তাই অনেকেই রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিংগুলোকে কনভার্ট করে নিচ্ছে । রেসিডেন্সিয়ালের ক্ষেত্রে ছোট প্লটে অসুবিধা নেই অগ্নি নির্বাপনের । যদি কমার্শিয়াল হয়, যদি কোনও রেস্তরাঁ হয়, যেখানে জায়গা নেই, তাহলে সেখানে যদি আগুন লাগে নেভানোর কাজ করাই যাবে না । বিপর্যয় হলে রেসকিউ করা যাবে না । এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে । কঠোর আইন আনা দরকার বলে আমি মনে করি ।’’
এরপরেই তিনি আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, "রেভিনিউ ক্ষতি হচ্ছে৷ কিন্তু আমরা যখন ধরছি, তখন হয়তো ফাইন দিয়ে চেঞ্জ অফ ইউজ রেগুলারাইজেশন করে দিয়ে দিচ্ছে । সেটাই যথেষ্ট নয় । চেঞ্জ অফ ইউজ করে হয়তো আমার ট্রেজারি ভরবে, মানুষের জীবনটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । বিল্ডিং ডিপার্টমেন্টকে বলব, এটাতে নজর রাখার জন্য । চেঞ্জ অফ ইউজ সব সময় টাকার জন্য নয় । ছোট প্লটের সমস্যা নেই, আমাদের এরকম 42টা ব্যবসাকে অনুমতি দেওয়ার প্রভিশন রয়েছে আইনে । কিন্তু যেগুলো ফায়ার হ্যাজার্ড, সেই ব্যবসাগুলো যদি চেঞ্জ অফ ইউজে হয়, তাহলে মানুষের ক্ষতি হতে পারে ৷ এটা আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে । আইন বদল বা নতুন নিয়ম তৈরি করতে হবে প্রয়োজনে ৷"