কলকাতা, 18 অক্টোবর: আদালতে সব সমস্যার সমাধান হয় না । সেই জন্যই তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন ৷ ভিডিয়ো বার্তায় এমনটাই দাবি করলেন বামপন্থী চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর মতে, জুনিয়র চিকিৎসকদের বোড়ে হিসাবে ব্যবহার করা হয় । সেটা না-করে যাতে সরকারের কাছ থেকে 10 দফা দাবি ছিনিয়ে আনা যায়, সে জন্যই তিনি কুণালের সঙ্গে দেখা করেন ৷ তবে তাঁর এই পদক্ষেপকে একেবারেই সমর্থন করছে না জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডকটরস ৷ নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে নেই ফেমাও ৷
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের রফাসূত্র বের করতে বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বৈঠক শেষে তিনি বলেন, "আমি কোনও দলের মুখপাত্রের সঙ্গে দেখা করতে আসিনি । দলের কুণাল ঘোষ এক, আর মানুষ কুণাল ঘোষ আলাদা । আমি একজন প্রাক্তন সাংসদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম । আমি একজন ব্যক্তিকে খারাপ কেন বলব ?" তিনি এমনটা দাবি করলেও শাসকদলের এই নেতার সঙ্গে তাঁর বৈঠক নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে ৷
জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডকটরস আজ বলেছে যে, নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনের পরিপন্থী ভূমিকা পালন করেছেন ৷ প্রেস বিবৃতিতে ডাক্তারদের এই সংগঠন নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছে, "ডা. নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও চিকিৎসক সংগঠনের কোনও প্রতিনিধি কি না আমরা জানি না । তিনি ব্যক্তির এক্তিয়ারে কারও সঙ্গে দেখা করতেই পারেন, কিন্তু জুনিয়র-সিনিয়র চিকিৎসক ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের দৌত্যের অধিকার তাঁকে কেউ দেননি । তিনি এমন একজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যিনি প্রতিনিয়ত এই আন্দোলনকে এবং তার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ও বৃহত্তর জনমণ্ডলীর অতি কদর্য ভাষায় আক্রমণ করছেন । আমরা মনে করি, নারায়ণবাবু আন্দোলনের পরিপন্থী ভূমিকা পালন করেছেন । তাঁর এই আচরণকে আমরা সমর্থন করছি না ।"
একই বক্তব্য শোনা গিয়েছে ফেডারেশন অফ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের তরফেও ৷ তারা প্রেস বিবৃতি দিয়ে লিখেছে, "ডা. নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও অনুমোদিত প্রতিনিধি নন বা ফেমার আলোচনা ও সমন্বয় প্রক্রিয়ার অংশও নন । এইভাবে বৈঠক এবং পরবর্তী বিবৃতি যা তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষমতার ভিত্তিতে দিয়েছেন, তা ফেমার মূল্যবোধ এবং মতামতকে প্রতিফলিত করে না । আমরা ন্যায়বিচারের আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য তাঁর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করি না বা স্বাগত জানাই না । আমরা জুনিয়র ডাক্তারদের 10-দফা দাবির জন্য দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছি, যা এই আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।"
এই বৈঠককে ভালো চোখে দেখছেন না জুনিয়র চিকিৎসকরাও ৷ ডা. নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে নিজের সোশাল মিডিয়া পোস্টে জুনিয়র চিকিৎসক আশফাকুল্লা নাইয়া জানিয়েছেন, তাঁরা গতকালের ঘটনায় অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছেন । আশফাকুল্লার কথায়, "শ্রদ্ধেয় স্যার ! আপনি আমার একটি কথা আপনার ওয়ালে লিখেছিলেন, 'ভয় যেমন ছোঁয়াচে, সাহস তেমন ছোঁয়াচে'৷ সেদিন থেকে আপনার সব পোস্ট দেখি । কিন্তু আপনার আজকের পোস্ট দেখে কষ্ট পেলাম । বেশি কিছু লেখা ঔদ্ধত্য হবে । তাই আপনার পোস্টটা সাজিয়ে লিখলাম । গতকালের মিটিং-এর পর থেকে এরকম লাগছে - রাজনৈতিক সত্ত্বা, তারপর ডাক্তার, তারপর মানুষ । জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য কিছু প্লিজ করবেন না । জুনিয়র ডাক্তাররা সাধারণ মানুষের জন্যই রাস্তায় । আজকে থেকে সাধারণ মানুষের জন্য করুন । সবার জন্য করুন ।"
যে বৈঠক নিয়ে এত বিতর্ক, কেন তিনি সেই বৈঠক করেছেন, সে বিষয়ে নিজের যুক্তি একটি ভিডিয়ো বার্তার মাধ্যমে নিজের সোশাল মিডিয়ার পাতায় তুলে ধরেছেন চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেখানে তিনি বলেছেন, "শাসকের অবস্থানটা বোঝার জন্য গিয়েছিলাম । আমি একজন ডাক্তার, তার সঙ্গে আমি একজন ডাক্তারের বাবা । যাঁরা অনশন করছেন, তাঁরা আমার সন্তানের বয়সি । জুনিয়র চিকিৎসকদের বোড়ে হিসাবে অনেকেই ব্যবহার করতে চাইছেন । দু'পক্ষই অনড় । এখন ডেডলক অবস্থা হয়েছে । আন্দোলন করার জন্য আন্দোলন নয় । আন্দোলনের কারণ, সরকার যাতে আমাদের দাবিগুলো মিটিয়ে নেয় । আমি মনে করি না কোনও অসুবিধা আলোচনার মাধ্যমে মেটানো যায় না । দু'পক্ষ অনড় থাকলে কোনও জট খোলা সম্ভব ?"
তাঁর মতে, "কোর্টের মাধ্যমে সব কিছুর সমাধান হয় না । সেটা আমরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে বুঝে গিয়েছি । আলোচনার টেবিল সব থেকে ভালো জায়গা । আমাদের রাজ্যের সব থেকে শীর্ষে যিনি আছেন, তাঁর কানে যাতে কথাটা পৌঁছে যায়, সেই জন্য আজ আমার যাওয়া । আমার সবার কাছে একটাই অনুরোধ, এমন কিছু যাতে না-করা হয়, যাতে আন্দোলনের উদ্দেশ্য সরে যায় ।"