জলপাইগুড়ি, 3 অক্টোবর: বন্ধ চা বাগানে বিষাদের মধ্যেও আগমনীর সুর। যদিও এমনই এক পুজোর মুখেই বন্ধ হয়েছে চা বাগান। তবুও কষ্টের মাঝেই এবার হয়তো মুখ তুলে তাকাবেন মা। বাগান খুলতে এগিয়ে আসবে মালিকপক্ষ ৷ এই আশা নিয়েই পুজো করছেন রায়পুর চা বাগানের শ্রমিকরা।
চা গাছের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে কাঁশ ফুল। চায়ের গাছ, বন্ধ কারখানার গেট পেরিয়ে সেই ফুল পৌঁছে যাচ্ছে শ্রমিক মহল্লায়। আশ্বিনের আকাশে আগমনীর সুর ৷ ছুটে বেড়াচ্ছে বাগানের অপু, দুর্গারা। কয়েক বছর আগেই আশ্বিন মাসেই বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছে মালিকপক্ষ। সেই থেকেই বন্ধ হয়ে আছে বাগান। অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে গেলেন 650 জন স্থায়ী শ্রমিক। অস্থায়ী মেলালে সংখ্যাটা প্রায় এক হাজার। বাগান বন্ধ হয়ে থাকলেও তবুও বন্ধ হয়নি দুর্গা পুজো। রায়পুর চা বাগানের শ্রমিকরা নিজেরাই চাঁদা তুলে পুজোর আয়োজন করেছেন।
প্রতি বছরের মতো এবছরও পুজো এসেছে। দিন আসে দিন যায় রায়পুর চা বাগানের শ্রমিকদের অবস্থার কোনও উন্নতি হয় না। শ্রমিকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকায়নি মালিকপক্ষ। পাতা তুলে বাইরে বিক্রি করে যা আসছে তা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে কোনও মতে দিন গুজরান করছেন শ্রমিকরা। পাতা তুলে 160 টাকা দিন মজুরি পান শ্রমিকরা। একটা সময় রায়পুর চা বাগানের ফ্যাক্টরির সামনে মণ্ডপের বাইরে মেলা বসত। অনুষ্ঠানও হত। জয়পুর ভাণ্ডিগুড়ি-সহ আশপাশের এলাকা থেকে এই চা বাগানেই আনন্দ উৎসবে মেতে উঠতেন সকলে ৷ সেই সব আজ স্মৃতি। এখন নতুন জামা দূরে থাক, দু'বেলা অন্নসংস্থানই দায় হয়ে উঠেছে শ্রমিকদের।
রায়পুর চা বাগানের শ্রমিক প্রধান হেমব্রম বলেন, "অন্যান্য বছরের মত এবারও পুজো হচ্ছে। পুজো বন্ধ নেই। পুজোর চারটে দিন আমরা আনন্দে কাটাতে চাই ৷ শ্রমিকরাই চাঁদা দিয়ে পুজো করছে। 160 টাকা আমরা পাই ৷ শ্রমিকরা তার মধ্যে 100 টাকা দিচ্ছে ৷ সরকারের থেকে 85 হাজার টাকা পাচ্ছি। আগে এখানে মেলা হত ৷ বাচ্চাদের আনন্দের জন্যই পুজোর আয়োজন। মায়ের কাছে আমাদের প্রার্থনা বাগানটা খুলক।" চা শ্রমিক মনা ঘাটোয়ার জানান, বাগান বন্ধ আছে তো কী হয়েছে, পুজোটা তো করতে হবে। অন্য আরও এক চা শ্রমিক বিশু সাওয়াসি বলেন, "এলাকার প্রথম পুজো। বাগান বন্ধ আছে ঠিকই। কিন্তু আমরা পুজোর আয়োজন করছি। আগে জয়পুর, ভাণ্ডিগুড়ি চা বাগান থেকে মানুষজন আসত।"