শিলিগুড়ি, 17 জুন: বালেশ্বরের স্মৃতি উসকে সোমবার শিলিগুড়ির রাঙাপানির কাছে রেল দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ৷ সেই ট্রেনের ফেরার কথা ছিল সিপিএম নেতা তথা তমলুক লোকসভা আসনের বামপ্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ রবিবার সন্ধে থেকে তিনি চেষ্টা করেছিলেন আজকের দুর্ঘটনাগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের টিকিট কাটতে ৷ কিন্তু টিকিট পাননি তিনি ৷ দুর্ঘটনার পরই তিনি এদিন সকালে ফেসবুকে পোস্ট করেন এ নিয়ে ৷ এই প্রসঙ্গে ইটিভি ভারত তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "বারবার এই যাত্রী নিরাপত্তার প্রশ্নে কেন্দ্র কীভাবে দায় এড়িয়ে যেতে পারে? দুর্ঘটনা থেকেই শেখা উচিত ৷"
সোমবার শিয়ালদার উদ্দেশে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে রওনা দিয়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ৷ সকাল ন'টা নাগাদ একই লাইনে পিছন থেকে মালগাড়ি এসে ধাক্কা মারে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ৷ ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অন্ততপক্ষে আটজন ৷ ঘটনায় চিকিৎসাধীনের সংখ্যাটাও 37 ৷
এই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা নিয়ে সায়ন এদিন তাঁর ফেসবুকে লেখেন, "এই ট্রেনে ফিরব বলেই গতকাল টিকিটের চেষ্টা করেছিলাম, উত্তরবঙ্গ থেকে আমাদের ফেরার কথা ছিল এই ট্রেনেই ৷ টিকিট না-পাওয়ায় আজ সন্ধ্যায় ফিরছি ৷ এবার সোজা মালগাড়ির ধাক্কা কলকাতাগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ৷ রেললাইন ছেড়ে ছিটকে গেল বগি। যাত্রী নিরাপত্তায় বারবার এই গাফিলতি কার স্বার্থে? বারবার এই যাত্রী নিরাপত্তার প্রশ্নে গাফিলতি কেন্দ্র কীভাবে এড়িয়ে যেতে পারে? আগে তা-ও রেল দুর্ঘটনা ঘটলে তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতো ৷ এখন একাংশ মিডিয়া, কিছু অন্ধ ভক্ত আর বুলেট ট্রেনের প্রচারের জৌলুসে রেল মন্ত্রকের এই গাফিলতি নিয়ে সবাই নিশ্চুপ।"
দিন পাঁচেক আগে তিনি যেদিন কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দেন, সেদিনও তিনি বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন ৷ সেদিনও ফেসবুকে তিনি লিখেছিলেন, "উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের এসির 3-এসির B-2 কোচে হঠাৎই ভেঙে পড়ল ট্রেনের সিলিংয়ের এসি ৷ মাত্র একমাস আগেই নতুন LHB কোচ দিয়ে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস চালু হয়েছিল ৷ একমাসের মধ্যেই 'গ্যারেন্টি' ছাদ থেকে ঝুলছে ৷ আমাদের ঠিক উলটো দিকের সিটে বসেছিলেন বছর পঁচাত্তরের বয়স্ক ভদ্রলোক ৷ আরও বড় বিপদের মধ্যে পড়তেন তিনিও ।" তাঁর কাছ থেকে ইটিভি ভারত এনিয়ে জানতে চাইলে, সায়ন উত্তরে বলেন...
ইটিভি ভারত-প্রথম জামাইষষ্ঠী থেকে ফিরতে চাইছিলেন এই ট্রেনে ৷ আর আজ এমন দুর্ঘটনা ৷ কী বলবেন?
সায়ন-রেলমন্ত্রকের দায় এরা কেন নেবেন না? এই প্রশ্নের উত্তর তো দিতে হবে ৷ রেলযাত্রীদের বেশি করে ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৷ আগের থেকে এখন ব্যবস্থা পরিবর্তন হয়েছে ৷ এত কিছুর পরও যাত্রী সুরক্ষা কোথায়? কেথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছি আমরা? দুর্ঘটনা যে কোনও সময় ঘটতে পারে ৷ কিন্তু তা থেকে আমরা কী শিক্ষা নিচ্ছি? শেষ কয়েক বছরে কতগুলি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ৷ আগের সরকারের আমলে রেল দুর্ঘটনা ঘটলে অনন্ত সেগুলি নিয়ে সমালোচনা-আলোচনা হতো ৷ তা থেকে নানা প্রশ্ন উঠত ৷ সরকারও সেখান থেকে ভুল শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করতেন ৷ কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এক প্রকার অন্ধভক্ত জন্মেছে ৷ সেই সঙ্গে মিডিয়ার এক অংশ প্রশ্ন করতে ভুলে যাচ্ছে ৷ যে মানুষগুলি চলে যাচ্ছে, সে প্রাণগুলি কি ফিরে আসবে? বারবার এঘটনা হওয়া সত্ত্বেও কেন রেলমন্ত্রক কিছু শিখছে না ? কেন দায়ভার নিচ্ছে না?
ইটিভি ভারত- প্রশ্ন উঠছে, ডিজিটাইলাজশেন (পরপর প্রিমিয়ার ট্রেন চালু করা, রেল পরিষেবা পরিচালনা-ব্যবস্থাপনায় চরম আধুনিকীকরণ), বুলেট ট্রেন নামাতে গিয়ে সাধারণ ট্রেন পরিষেবার মান পড়ে যাচ্ছে ৷ স্লিপার কোচের কথা বাদ দিলেও এসি টু-টায়ার ও থ্রি-টায়ারে ঠাসা ভিড়, সংরক্ষিত আসনেও বসার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না ! চরম অব্যবস্থার অভিযোগ উঠেছে একাধিক ক্ষেত্রে ৷ সে নিয়ে কী বলবেন?
সায়ন-সরকার কখনও এই দায় এড়িয়ে যেতে পারে না ৷ আমরা কখনও বলিনি প্রধানমন্ত্রী বা রেলমন্ত্রী বলেছেন দুর্ঘটনা ঘটাতে ৷ কথাটা হচ্ছে, যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তার কারণ থেকে শিক্ষা নিতে হবে ৷ রেলের লক্ষ লক্ষ শূন্যপদ রয়েছে, সেখানে নিয়োগ হচ্ছে না ৷ অল্পসংখ্যক কর্মীতে কাজ হচ্ছে ৷ এরা বিএসএনএলকে লাটে তুলে দিয়ে জিওকে সামনে এনেছে ৷ রেলকে বেসরকারিকরণ করতে চাইছে ৷ দিনের শেষে যে সাধারণ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন, তাঁরাই মারা যাচ্ছেন ৷
এরপর সায়নকে জিজ্ঞাসা করা হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেল দুর্ঘটনা নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে ৷
ইটিভি ভারত- কলকাতা থেকে শিলিগুড়ির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, দেশের সরকার শুধু নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করে। কীভাবে ইভিএমে কারচুপি করতে হয়, কীভাবে হ্যাক করতে হয়, কীভাবে ভোট প্রভাবিত করতে হয় ৷ তিনি বলেন, এই সরকারের কথা বলে আর সময় নষ্ট করা উচিত নয় ৷ আপনি কি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একমত?
সায়ন- যে কোনও রেল দুর্ঘটনা থেকে ভুলগুলি সুধরাতে হবে ৷ শিখতে হবে ৷ তা তো হচ্ছে না ৷ দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদের বেসরকারিকরণ হচ্ছে ৷ বন্দর থেকে বিমানবন্দর বেসরকারিকরণ করা হয়েছে ৷ আর সরকারের হাতে থাকা রেল বুলেট ট্রেন নামাতে ব্যস্ত ৷ কিন্তু সাধারণ ট্রেনের যাত্রী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে ৷