ব্যারাকপুর, 23 অগস্ট: আরজি কর-কাণ্ডে এবার সুবিচার পেতে ডাক্তারি পড়ুয়াদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছেন নির্যাতিতার বাবা-মা।শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের সামনে তেমনটাই ইঙ্গিত দিলেন তাঁরা। বললেন, "আমরা চাই মেয়ের মৃত্যুর তদন্তে সিবিআই দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক। মেয়েকে হারিয়েছি আজ 14 দিন হয়ে গেল। কিন্তু, সেভাবে কোনও ফলাফল পেলাম না। তাই, কিছুটা হলেও ধৈর্য্য হারাচ্ছি। সিবিআই একটু তৎপর হয়ে কাজ করুক। ওদের ওপর আস্থা রেখেই বলছি, কিছু একটা কূল কিনারা করুক । পুলিশ তো আর পারল না? সে কারণে সুবিচার পেতে প্রয়োজনে ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ দেব। যে-ই ডাকুক তাঁদের পাশে থেকে আন্দোলন করব।" আরজি কর হাসপাতালে দালালরাজ সক্রিয় বলেও এদিন বিস্ফোরক দাবি করেছেন নির্যাতিতার বাবা।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "বাইরে থেকে রোগীরা এসে এখানে সহজে ভর্তি হতে পারত না। দালালদের মাধ্যমেই চলত সবটা। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও সক্রিয় দালালরাজ। আমরা অনেক আগেই জানতে পেরেছি। অনেক বিষয় আছে, যেগুলি আলোচনা করা যায় না। প্রশাসন এই সমস্ত বিষয় ভালো করে খতিয়ে দেখুক। কোটি কোটি টাকার খেলা চলছে। যাঁরা হাসপাতাল পরিচালনা করছেন তাঁরা ছাড়াও প্রশাসনের একাংশের যোগ রয়েছে এই দুর্নীতির সঙ্গে। জুনিয়র ডাক্তারদের এনিয়ে হতাশা আছে। কারণ, প্রচুর পরিশ্রম করে তাঁদের সেই জায়গায় পৌঁছতে হয়। তারপর যদি এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে, তাহলে তো হতাশা থাকবেই।"
নির্যাতিতার বাবা আরও বলেন, "প্রথম থেকেই এই ঘটনায় প্রশাসনের যে গা-ছাড়া মনোভাব ছিল, সেটা সুপ্রিম কোর্ট নিজেই বলেছে । গোটা দেশ, এমনকি পৃথিবীর সবাই জানতে পেরে গিয়েছে প্রশাসনের উদাসীনতা। ঘটনাস্থলের তথ্যপ্রমান কিছুটা তো নষ্ট হয়েছেই । তা না হলে সিবিআইয়ের এত সময় লাগত না মনে হয়েছে । সেই জন্যই সিবিআইকে এখন তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে হচ্ছে । পলিগ্রাফ টেস্ট সহ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করার চেষ্টা করছেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। সিবিআইয়ের সঙ্গে দীর্ঘ ছ'ঘণ্টা ধরে আমরা কথা বলেছি। আমরা কী কী জানি সেটাও তাঁদের বলেছি। আমরা চাই মেয়ের মৃত্যুর সুবিচার ।"
ঘটনার দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা তাঁদের যে বসিয়ে রেখেছিল। সেকথাও এদিন সংবাদমাধ্যমকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। এদিকে, একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে কার্যত শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন নির্যাতিতার মা। তিনি বলেন, "আমরা একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছি।যেখানে সে স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়েছিল, সেখানেই তাঁর সমস্ত স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে। মেয়েকে হারিয়েছি ঠিকই । কিন্তু, সমস্ত আন্দোলনকারী ছেলে-মেয়েরা আমার এক একজন সন্তান। সেটাই মনে করি। তাই, ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গেই থাকতে চাই আমরা ।"
আরজি করের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে আর পাঁচটা ঘটনা যুক্ত করা ঠিক নয় বলেও মনে করেন নির্যাতিতার মা। তাঁর কথায়,"অনেক খুন,ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে এই পাশবিক ঘটনা জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। আমার মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। কর্মরত অবস্থায় ও'র সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে। তাই,অন্য কোনও ঘটনার সঙ্গে আরজি করের ঘটনা গুলিয়ে ফেলবেন না। অনেকে এটাকে গুলিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। হয়তো এমন কেউ জড়িত আছে যাকে আড়াল করতে চাইছে সরকার।" অন্যদিকে, যতক্ষণ না বিচার পাচ্ছেন, ততক্ষণ ডাক্তারি পড়ুয়ারা আন্দোলন চালিয়ে যাক।চাইছেন নির্যাতিতার বাবা-মা।