আজকাল ফিটনেস এবং পেশী গঠনের প্রবণতা বাড়ছে ৷ এর সঙ্গে সঙ্গে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট এবং হাই-প্রোটিন ডায়েটের প্রবণতাও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে । সাধারণত মানুষ মনে করেন যত বেশি প্রোটিন গ্রহণ করা হবে, শরীরের জন্য তত ভালো । এই কারণে, মানুষ কেবল উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবারই খায় না, বরং কোনও প্রয়োজন ছাড়াই প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণও শুরু করে । কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিন শরীরের জন্য উপকারী হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতিকারক হতে পারে ।
চিকিৎসকরা কী বলেন ?
চিকিৎসক ডাঃ কুমুদ সেনগুপ্ত বলেন, "আজকাল মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের ফলে সৃষ্ট সমস্যার ঘটনা বেশি দেখা যাচ্ছে । অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ শরীরের বিভিন্ন অংশের উপর, বিশেষ করে কিডনি এবং লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে । একইসঙ্গে, যদি খাবারে ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টির অভাব থাকে, তাহলে অতিরিক্ত প্রোটিন আরও সমস্যা তৈরি করতে পারে ।"
তিনি আরও বলেন, "অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের কারণে সাধারণত প্রধান সমস্যাগুলি দেখা যায় তারমধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ ।"
কিডনির উপর প্রভাব: অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে, যারফলে কিডনি বিকল বা পাথরের মতো সমস্যা হতে পারে ।
লিভারের সমস্যা: প্রোটিন বিপাক করার জন্য লিভারকে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হয়, যা লিভারের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে ।
হজমের সমস্যা: অতিরিক্ত প্রোটিন কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি এবং পেটের গ্যাসের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে ।
হাড়ের উপর প্রভাব: অতিরিক্ত প্রোটিন ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দিতে পারে, যার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে ।
ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ যদি ক্যালোরির ভারসাম্য নষ্ট করে, তাহলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে ।
তিনি বলেন, "প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট শুধুমাত্র তখনই খাওয়া উচিত যখন কোনও কারণে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেয় । এছাড়াও, যারা প্রচুর পরিমাণে জিমে যান তাদেরও ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্ধারিত পরিমাণে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত ।"
একইসঙ্গে, যাঁরা শরীরে অতিরিক্ত প্রোটিনের কারণে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তাদের অবশ্যই একজন ডাক্তারের দ্বারা পরীক্ষা এবং চিকিৎসা করা উচিত । এমন পরিস্থিতিতে, আরও কিছু বিষয় মনে রাখা উপকারী হতে পারে যেমন:
শরীরকে হাইড্রেট রাখা ভালো তারজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া প্রয়োজন ৷
যদি অতিরিক্ত প্রোটিন ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে মুগ ডাল, ওটমিল, সয়া, বিনস, দই এবং টফুর মতো হালকা প্রোটিন উৎস খাওয়া যেতে পারে । অঙ্কুরিত ফল এবং সবুজ শাকসবজিও ভালো বিকল্প ।
ডিম, মাছ এবং কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্যের মতো চর্বিহীন প্রোটিনের উৎস ভালো ।
শুধুমাত্র প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের উপর নির্ভর করবেন না । এছাড়াও ফল, শাকসবজি এবং শস্য খান । খাদ্যতালিকায় অন্যান্য পুষ্টির পরিমাণ বাড়ান । বিশেষ করে ফাইবার এবং ভিটামিন অন্তর্ভুক্ত করুন ।
আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনের সঠিক পরিমাণ এবং প্রকার জানতে একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করুন ।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য শুধুমাত্র ধারণা আর সাধারণ জ্ঞানের জন্যই লেখা হয়েছে ৷ এখানে উল্লেখিত কোনও পরামর্শ অনুসরণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ৷ যদি আগে থেকেই কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে, তা আগেই চিকিৎসককে জানাতে হবে ৷)