মালদা, 10 অক্টোবর: পুজোর উদ্বোধনে মাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ৷ মণ্ডপের উদ্বোধন করেছেন ৷ সেই মঞ্চে তখন রাজ্যের মন্ত্রী-সহ তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা ৷ সেই মঞ্চে বক্তব্য রেখে বিতর্কের মুখে পড়ে গেলেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি মনোজিৎ সরকার ৷ উর্দি পরে প্রকাশ্য মঞ্চে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পুজো অনুদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন ৷ এতেই উঠেছে প্রশ্ন ৷ এমনিতেই এই অনুদান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে রাজ্যজুড়ে ৷ এই ঘটনাকে ঢাল করে পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরাও ৷
বুধবার রাতে হরিশ্চন্দ্রপুরে দুটি বড় পুজো মণ্ডপের উদ্বোধন করেন আইসি মনোজিৎ সরকার ৷ মন্ত্রী তজমুল হোসেন-সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েই তিনি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির ভূয়সী প্রশংসা করতে থাকেন ৷ বিশেষত দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলিকে অনুদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিনি দরাজ গলায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেন ৷ বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই অনেক ছোট পুজো এখনও উঠে যায়নি ৷ ওই টাকা পেয়ে অনেক উদ্যোক্তা পুজো তো করছেই, উপরন্তু অনুষ্ঠানও করছে ৷
অনুষ্ঠানের পর আইসি বলেন, "হরিশ্চন্দ্রপুরে এবার প্রথম পুজো কাটাচ্ছি ৷ খুব ভালো লাগছে ৷ দুটি পুজো মণ্ডপ উদ্বোধন করেছি ৷ দুটি পুজোই অনেক পুরনো ৷ মন্ত্রী-সহ আরও অনেকে ছিলেন ৷ খুব ভালো করে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে ৷ এর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে চাই ৷ তাঁর অনুদানের জন্য এখানে এত ভালো করে পুজো হচ্ছে ৷ এতে পুজো উদ্যোক্তারাও খুশি ৷ এখানে নাকি বিচিত্রানুষ্ঠান হবে ৷ আমরাও দেখতে ও শুনতে আসব ৷"
মন্ত্রী তজমুল হোসেনের কথায়, "ক্লাবগুলিকে স্বনির্ভর করতে এবং দুর্গাপুজোকে আরও জমকালো করতে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি ক্লাবকে এবার 85 হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছেন ৷ প্রতি বছরই তিনি এই অনুদান দেন ৷ আগে পুজো করার জন্য ক্লাবগুলিকে অনেক চাঁদা তুলতে হত ৷ রাস্তায় নামতে হত ৷ যেদিন থেকে মুখ্যমন্ত্রী অনুদান দেওয়া চালু করেছেন, রাস্তাঘাটে গাড়ি থামিয়ে চাঁদা তোলাও কমে গিয়েছে ৷"
উর্দি পরে মুখ্যমন্ত্রীর পুজো অনুদানের সমর্থনে কথা বলায় আইসি-কে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক রূপেশ আগরওয়াল ৷ তিনি বলেন, "ক্লাবগুলো যদি বলে, মুখ্যমন্ত্রীর অনুদানের জন্যই তারা পুজো করতে পারছে, তবে আমরা তাদের আর চাঁদা দেব না ৷ এখন আমরা খুব কম চাঁদা দিই না ৷ অনেক টাকা চাঁদা দিতে হয় ৷ আমার মতো ব্যবসায়ীরা প্রত্যেকে বিভিন্ন ক্লাবকে বিশাল অংকের টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য হন ৷ মুখ্যমন্ত্রীর অনুদানে এখানে কোনও পুজো হয় না ৷"
তাঁর বক্তব্য, "মুখ্যমন্ত্রীর এই অনুদানে পুজোর কোনও সম্পর্ক নেই ৷ একজন আইসির উর্দি পরে এই অনুদানকে সমর্থন করা উচিত নয় ৷ আমরা শুনে আসছি, পুলিশ তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে ৷ তাহলে কি হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসিও সেই দলে নাম লিখিয়েছেন ?"