চুঁচুড়া, 30 জুলাই: বাবা ও মা'কে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয় ছেলে। নাম নীলকান্ত সাহা। প্রায় দু'বছর চুঁচুড়া আদালতে মামলা চলার পর মঙ্গলবার রায় দেন বিচারক। 21 জন সাক্ষী দেওয়ার ভিত্তিতে চুঁচুড়া আদালতের প্রথম অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সঞ্জয় শর্মা ফাঁসির সাজা দেন। এই সাজা দৃষ্টান্তমূলক বলে জানান সরকারি আইনজীবী।
কী ঘটেছিল-
- 2022 সালের 23 অগস্ট খুনের ঘটনা ঘটেছিল ৷ প্রায় এক মাস ধরে চন্দ্রকান্ত সাহা ও স্ত্রী অঞ্জনা সাহা বলাগড়ের জিরাট স্টেশন রোডে রামকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে ভাড়া থাকা শুরু করেন। চন্দ্রকান্তের ছেলে নীলকান্ত দক্ষিণ 24 পরগনায় তার শ্বশুরবাড়িতে থাকত। সবকিছু ঠিক থাকলেও সেদিন রাত 10টা নাগাদ ছেলে নীলকান্ত সাহা জিরাট এসে পৌঁছয়। সে খবর পেয়েছিল, বাবা ও তাঁর সৎ মা এই জায়গাতেই রয়েছেন। বাড়িতে গিয়ে কাউকে না-দেখতে পাওয়ায় পাশে একটি সোনার দোকানে অপেক্ষা করছিল ছেলে।
- বাবা ও মাকে ঢুকতে দেখে সেও বাড়িতে ঢোকে। সেখানেই ধারালো ছুরি দিয়ে দু'জনের গলার নলি কেটে দেয়। চিৎকার শুনে প্রথমে বাড়িওয়ালা ও প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। নীলকান্তকে ছুটে পালাতে দেখে ফেলে বাড়ির মালিক। খবর দেওয়া হয় বলাগড় থানার পুলিশকে। এরপর দু'জনকে জিরাট হাসপাতালে নিয়ে গেলে বাবাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। একদিন পরই মায়ের মৃত্যু হয়। বলাগড় থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার সোমদেব পাত্র তদন্ত নেমে বলাগড় স্টেশন থেকে নীলকান্তকে গ্রেফতার করে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত-
তারপর থেকেই দু'বছর মামলা চলছিল ৷ এদিন ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। পুলিশ সূত্রে খবর, সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত থাকার কারণেই খুনের অভিযোগ ছিল। হুগলির মুখ্য সরকারি আইনজীবী শংকর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "এই খুনের ঘটনা বিরলতম ঘটনা। ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনামাফিক বাবা ও সৎ মাকে খুন করেছিল নীলকান্ত সাহা। মাননীয় বিচারক সঞ্জয় শর্মা সমস্ত দিক বিচার করে ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেছে। চুঁচুড়া আদালতে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে আরেকটি ফাঁসি সাজা হয়েছিল।"
তিনি আরও বলেন, "এর আগে নাবালিকাকে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। তাতে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয় ৷ আজ আবারও ফাঁসির সাজা ঘোষণা করল চুঁচুড়া আদালত। এই মামলায় একজন সন্তান তার বাবা ও মাকে যেভাবে খুন করেছে, তা জঘন্যতম অপরাধ। এই ধরনের অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিত তাই বিচারক ফাঁসির সাজা দিয়েছেন।"
বাড়ির মালিক রামকৃষ্ণ সাহা-সহ মোট 21 জনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই এই ফাঁসির সাজা শোনানো হয়। তিনি বলেন, "আমরা সমস্তরকমভাবে পুলিশকে সাহায্য করেছি, তাই আজ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিচারক। আমরা এই সাজায় খুশি। আমরা চাই ভবিষ্যতে কোনও বাবা, মার সঙ্গে এই ধরনের নৃশংস ঘটনা যেন না ঘটে। সেই সঙ্গে বলাগড় থানার পুলিশ খুব সহযোগিতা করেছে।" যদিও কী কারণে এই খুন তা পরিষ্কার হয়নি ৷