ব্যারাকপুর, 15 অগস্ট: আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের তদন্তে বৃহস্পতিবার মৃতার বাড়িতে গেল সিবিআইয়ের চার সদস্যের দল । মৃতার পরিবারের বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে ৷
এদিন দুপুর দেড়টা নাগাদ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একের পর এক গাড়ি এসে থামে মৃতার বাড়ির সামনে । সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা । সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টর পদমর্যাদার এক অফিসারের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্তকারী দল এদিন নিহতের বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে । তাঁদের বয়ান এদিন নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে সিবিআই সূত্রে ।
সিবিআই সূত্রে খবর, এদিন নিহতের বাবা-মায়ের কাছে জানতে চাওয়া হয় ঘটনার দিন তাঁরা কীভাবে খবর পেলেন ? সেদিন ঠিক কী বলা হয়েছিল তাঁদের ? হাসপাতালে যাওয়ার পর তাঁরা কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন ? কারও বিরুদ্ধে কি কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাঁদের ? মূলত, এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তরই এদিন নথিভুক্ত করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা । এমনটাই খবর সিবিআই সূত্রে ।
এদিকে, নিহতের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সিবিআইয়ের এক আধিকারিক বলেন, "তদন্ত চলছে । মৃতের পরিবারের বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে ।" তবে ব্যস ওইটুকুই ! এর বাইরে কোনও প্রশ্নের উত্তরই দিতে চাননি সিবিআইয়ের ওই আধিকারিক ।
প্রসঙ্গত, আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য । প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছে দেশেও । শুরু হয়েছে রাজ্যের একাধিক হাসপাতালে কর্মবিরতি । গর্জে উঠেছেন সাধারণ মানুষও । এই পরিস্থিতিতে ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে প্রথমে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে রাজ্য সরকার । সিটের নেতৃত্বেই শুরু হয় তদন্ত প্রক্রিয়া ।
কিন্তু, সেই তদন্ত নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন উঠতে শুরু করে । বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এনিয়ে সরব হয় । তারা অভিযোগ করতে শুরু করে, সরকার নৃশংস এই হতাকাণ্ডে প্রকৃত দোষীকে আড়াল করার চেষ্টা করছে । তথ্য প্রমাণ লোপাট করারও ষড়যন্ত্র চলছে । সিটের এই তদন্তের উপর কার্যত অনাস্থা প্রকাশ করে সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরকারের উপর চাপ বাড়াতে থাকে বাম,বিজেপি, কংগ্রেস ।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃতার সোদপুরের বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে । তাঁদের আশ্বস্ত করেন তিনি । এমনকি, কলকাতা পুলিশকে সাতদিনের সময়সীমা বেঁধে দেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান । এই সময়ের মধ্যে তদন্তে কোনও অগ্রগতি না-হলে কলকাতা পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলেও স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী । কিন্তু,তাতে অবশ্য সন্তুষ্ট হননি বিরোধীরা । শেষমেশ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আরজি কর হাসপাতাল-কাণ্ডের তদন্তভার যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে । তদন্ত প্রক্রিয়ায় জোর দিতে সিবিআইয়ের বিশেষ দল দিল্লি থেকে উড়ে আসে এরাজ্যে ।
প্রথমে তাঁরা টালা থানায় খুন, ধর্ষণ-সহ চারটি ধারায় মামলা রুজু করে । এরপর একে একে ধৃত সিভিক ভলেন্টিয়ারকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়া, আরজি কর হাসপাতালে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা, ঘটনাস্থল সরজমিনে খতিয়ে দেখা, সবটাই সম্পন্ন হয়েছে সিবিআইয়ের তরফ থেকে । তবে বাকি ছিল নিহতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা । সেটাও তারা বৃহস্পতিবার সম্পন্ন করল সেখানে গিয়ে ।