কলকাতা, 23 মার্চ: এবার সিবিআইয়ের নজরে মহুয়া মৈত্রের বাবা দ্বীপেন্দ্রলাল মৈত্র ৷ শনিবার জোড়া তল্লাশির মুখে পড়তে হল তাঁকে। সকালে প্রথমে কৃষ্ণনগর লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী মহুয়ার বাবা তথা ব্যবসায়ী দ্বীপেন্দ্রলাল মৈত্রের আলিপুরের আবাসনের ফ্ল্যাটে হানা দেয় সিবিআই ৷ এরপরে যায় মহুয়ার কৃষ্ণনগরের কার্যালয়ে। সাংসদ থাকাকালীন এই কার্যালয় থেকেই কাজ করতেন তিনি। এখন এখান থেকেই প্রচারের কাজ চালান। সিবিআইয়ের 6-7 জনের এক প্রতিনিধি দল এদিন দুপুর তিনটে নাগাদ কৃষ্ণনগরে তার দলীয় কার্যালয়ে এসে পৌঁছয়। এরপর রাতের দিকে তাঁর করিমপুরের বাড়িতে যায় সিবিআইয়ের দল।
জানা গিয়েছে, দীর্ঘক্ষণ জেরার পর 2 টো 46 মিনিট নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা।বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ এবং কম্পিউটার থেকে একাধিক নথিপত্রের প্রিন্ট আউট বার করে নেন তাঁরা। পরে ওই প্রিন্টার মেশিনটিও নিজেদের গাড়িতে রাখেন আধিকারিকর। পরে মহুয়ার মায়ের সঙ্গে কথা বলে তাঁর বয়ান নথিভুক্ত করা হয। আরও পরে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান সিবিআই আধিকারিকরা। এরপরই কৃষ্ণনগরে শুরু হয় তল্লাশি।
ঠিক কী কারণ, এই তল্লাশি, তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কোনও পক্ষই ৷ তবে, সম্ভাবনা রয়েছে যে, লোকপালের নির্দেশে 'ক্যাশ ফর কোয়েরি' কাণ্ডে মহুয়ার বিরুদ্ধে সিবিআই যে তদন্ত করছে, তার সঙ্গে এদিনের তল্লাশির যোগাযোগ আছে ৷ জানা গিয়েছে, দিল্লির একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে দ্বীপেন্দ্রলাল মৈত্রের খাতে কোটি কোটি টাকা ঢুকেছে ৷
এই টাকার সঙ্গে মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা 'ক্যাশ ফর কোয়েরি' অভিযোগের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ সেই সূত্রে শনিবার সকালে দিল্লি থেকে আসা সিবিআইয়ের একটি দল কৃষ্ণনগর লোকসভার তৃণমূল প্রার্থীর আলিপুরের বাড়িতে অভিযান চালায় ৷ সঙ্গে রাজ্যের কয়েকজন সিবিআই আধিকারিক ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য রয়েছেন ৷ দ্বীপেন্দ্রলাল মৈত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ সকালে নিজাম প্যালেস থেকে 6 সিবিআই আধিকারিকের একটি দল আলিপুরে পৌঁছয় ৷ বহুতলের নিরাপত্তারক্ষীরা সিবিআইকে জানায়, দ্বীপেন্দ্রলাল মৈত্র এই মুহূর্তে কলকাতায় নেই ৷ তিনি কর্মসূত্রে বাইরে রয়েছেন ৷
তবে, তাঁর পরিবার আলিপুরের 9 তলার ফ্ল্যাটে থাকেন ৷ কিছুক্ষণ পর 6 সিবিআই আধিকারিক ওই ফ্ল্যাটে ঢোকেন ৷ বেশ কয়েকঘণ্টা ধরে ডিএল মৈত্রর পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ফ্ল্যাটের তল্লাশি চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা ৷ সিবিআই সূত্রে খবর, দিল্লির একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে বেশ কয়েক কোটি টাকা মহুয়ার বাবার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়েছে ৷ ফলে এই টাকার সঙ্গে বহিষ্কৃত সাংসদের বিরুদ্ধে হওয়া 'ক্যাশ ফর কোয়েরি' মামলার কোনও যোগ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷
মহুয়ার বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন ও সাংসদ পোর্টালের গোপনীয়তা ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছিল ৷ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আগেই মহুয়ার সাংসদপদ খারিজ হয়ে যায় ৷ এই ঘটনায় গত 15 মার্চ লোকপালের তরফে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ সেখানে তৃণমূ্লের এই প্রাক্তন সাংসদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির 20(3) ধারায় অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত করতে বলা হয় ৷ আগামী 6 মাসের মধ্যে সেই তদন্ত রিপোর্ট লোকপালের সামনে পেশ করতে বলা হয় ৷ এরপরই তল্লাশি চালাল সিবিআই।
এনিয়ে লোকপালের তরফে বলা হয়েছিল, "হাতে থাকা সমস্ত তথ্য ও প্রমাণাদিকে ভালো করে বিশ্লেষণ করে দেখার পর আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খুবই গুরুতর ৷ আর তিনি যে পদে ছিলেন, সেদিক থেকে দেখলে বিষয়টি খুবই সংবেদনশীলও বটে ৷ তাই এই অভিযোগের গভীরে তদন্ত হওয়া জরুরি এবং আসল সত্যটা প্রকাশ্যে আনতে হবে ৷"
আরও পড়ুন: