কলকাতা, 9 অগস্ট: প্রয়াগ ফিল্ম সিটির জমি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেওয়ার রাজ্যের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় অবস্থিত এই ফিল্ম সিটির 350 একর জমি সৌরভকে এক টাকায় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ৷ সংস্থাকে কিছু না-জানিয়ে প্রাক্তন ক্রিকেটারকে এই জমি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে ।
শুক্রবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয় ৷ আদালতের নির্দেশ, এই মামলার বিচারের উপরে জমির মালিকানার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে ৷ সেখানে 350 একরের মধ্যে 11.28 একর জমি শৈলেন্দ্র তালুকদার কমিটির হাতে রয়েছে ৷ রাজ্যের দায়িত্ব, ওই জমির দখল পেতে কমিটির কাছে দরবার করা ৷ এই অবস্থায় ওই জমির কোনও রকম ব্যবহার, বিক্রি কিছু করতে পারবে না রাজ্য সরকার ৷ এই সময়ের মধ্যে চন্দ্রকোনার মোট জমি যা একটি কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে, নাগরিকের আস্থা অর্জনের জন্য তা পুনরায় খতিয়ে দেখতে হবে ৷ এই নিয়ে সব পক্ষের বক্তব্য হলফনামা দিতে হবে ৷ 3 সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷
অভিযোগ, প্রয়াগের লিজে থাকা জমি সংস্থাকে কিছু না-জানিয়েই দেওয়া হয় সৌরভকে । এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন আমানতকারীরা । তবে তাঁদের দাবি অনুযায়ী এই মামলা জনস্বার্থ মামলার তকমা পায়নি ৷ 1 অগস্ট বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চেই মামলা ফেরত পাঠায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ৷
আদালতের আরও নির্দেশ, রাজ্য সরকার, সেবি ও তালুকদার কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে চন্দ্রকোনার ওই জমি ফিজিক্যালি খতিয়ে দেখবে ৷ সেখানে প্রয়াগের তরফে ফিল্ম সিটির জন্য যে সব পরিকাঠামো তৈরি হয়েছিল, তার বাজারমূল্য খতিয়ে দেখবে ৷ আগামী শুনানিতে তার একটা বাজারদর অনুযায়ী হিসেব রাজ্যকে আদালতে দিতে হবে ৷
আদালতের স্পষ্ট অবস্থান, রাজ্যকে আদালতকে বোঝাতে হবে, কেন ওই জমি নিলাম না করে, কোনও ওপেন টেন্ডার না করে একজনকে বিক্রি করা হল ৷ যদি এই ব্যাপারে রাজ্য আদালতকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জমি হস্তান্তরের পদ্ধতিতে আপত্তি করবে আদালত ৷
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর আরও পর্যবেক্ষণ, ওই জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে কি নিলাম হয়েছে ? যদি না হয়, তাহলে কেন হয়নি ? তা না হলে, কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে নির্দিষ্ট সময় দেওয়ার দরকার ৷ অন্য কোনও গ্রাহক আগ্রহ দেখায় কিনা, যদি তেমনটা না করা হয়ে থাকে, তখনই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগবে ৷ রাজ্যের স্বার্থে স্বচ্ছতার জন্য এটা খোঁজা আমাদের দায়িত্ব ৷ আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, নিলাম হয়েছে কিনা, এটা একটা প্রাইভেট ব্যবস্থা ৷ জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে ফার্স্ট কাম ফার্স্ট সার্ভ পদ্ধতিতে জমি কেনা বা বিক্রি হয়েছে ৷
এই জমি হস্তান্তরের বিষয়ে আদৌ কোনও অনিয়ম হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে এই রিপোর্ট তলব করেছিল ডিভিশন বেঞ্চ ৷ আমানতকারীদের তরফে আইনজীবী শুভাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, প্রয়াগ ফিল্ম সিটির মোট 752 একর জমির কিছুটা ওদের কেনা, কিছুটা লিজ ৷ সরকার না দেখে 350 একর জমি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে এক টাকায় দিয়ে দিয়েছে ৷ সরকার যা খুশি করুক ৷ আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হোক ৷ 2 হাজার 700 কোটি টাকার মতো তোলা হয়েছে ৷ সেই টাকা নিয়ে ফিল্মসিটি তৈরি হচ্ছে ৷ এই টাকা সরকার আগে সাধারণ মানুষকে ফেরত দিক ৷ তারপর ওই জমি নিয়ে যা খুশি করুক ৷ কিন্তু রাজ্য তালুকদার কমিটির বক্তব্য না শুনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে এক টাকায় সেই জমি দিয়েছে ৷
উল্লেখ্য প্রয়াগ ফিল্ম সিটির প্রায় ৩৫০ একর জমি ১ টাকায় সৌরভ গাঙ্গুলিকে কিভাবে দিল রাজ্য সরকার! এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের রিপোর্ট তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ। কারণ প্রয়াগ চিটফাণ্ড সংস্থার অভিযোগ অনুযায়ী তাদের লিজ থাকার সত্তেও রাজ্য তাদের কিছু না জানিয়েই আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া এইভাবে জমি হস্তান্তর করতে পারেনা তা অবৈধ ৷ এ ব্যাপারে আদৌ কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে এই রিপোর্ট তলব করেছিল ডিভিশন বেঞ্চ।