মালদা, 3 সেপ্টেম্বর: ব্রাউন সুগার তৈরির হাব হয়ে উঠেছে মালদা জেলা ? গত রবিবার প্রস্তুতরত 6 কোটি টাকার ব্রাউন সুগার উদ্ধার করেছে বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ ৷ উদ্ধার হওয়া ব্রাউন সুগারের পরিমাণ 6 কেজি 64 গ্রাম । ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷
পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশের কাছে খবর আসে, কৃষ্ণপুর এলাকায় একটি বাড়িতে ব্রাউন সুগার তৈরি করা হচ্ছে । বাইরে থেকে কিছু লোক এসেছে । সেই তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার গভীর রাতে বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ ও ফোর্স মিলে শবরাতিটোলা এলাকায় একটি বাড়িতে হানা দেয় । অভিযানের সময় দু’জনকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায় ৷"
তিনি আরও বলেন, "তল্লাশি চালিয়ে বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় 6 কেজি 64 গ্রাম ব্রাউন সুগার । উদ্ধার হওয়া ব্রাউন সুগারের বাজার মূল্য প্রায় 6 কোটি টাকা । তবে উদ্ধার হওয়া ব্রাউন সুগার পুরোপুরি তৈরি হয়নি । পুরোপুরি তৈরি হওয়ার পর (শুকোনোর পর) ওজন খানিকটা কমবে । সেক্ষেত্রে বাজারমূল্যও খানিকটা কমতে পারে । ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয় । প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কালিয়াচকের বামনটোলা এলাকার আরও তিনজনের নাম উঠে এসেছে । ধৃত দু’জনকে পুলিশি হেপাজতের আবেদনে মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হলে, একজন নিজেকে নাবালক বলে দাবি করেছে। সেক্ষেত্রে আমরা একজনকে নিজেদের হেফাজতে পেয়েছি । ধৃতকে জেরা করে কোথা থেকে কাঁচামাল আনা হয়েছিল, কোথায় তা বিক্রি করার পরিকল্পনা ছিল তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে ।”
পুলিশ সুপার আরও জানান, “তদন্তে আমরা একটা প্যাটার্ন লক্ষ্য করেছি, বারবার এক এলাকায় অভিযানের কারণে দুষ্কৃতীরা নিজেদের কারবার অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । আগে যে সমস্ত এলাকায় ব্রাউন সুগার তৈরি হত না, সেই সময় এলাকায় প্রস্তুতকারককে ডেকে ব্রাউন সুগার তৈরি করা হচ্ছে । তদন্তে দেখা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ড থেকে কাঁচামাল এনে ব্রাউন সুগার তৈরি করে তা বিহারে পাচার করা হয়েছে ৷ চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত জেলা জুড়ে 66টি নারকোটিক মামলা রুজু হয়েছে । 81 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । প্রায় 24 কেজি অর্থাৎ প্রায় 24 কোটি টাকার ব্রাউন সুগার উদ্ধার করা হয়েছে । এখনও পর্যন্ত তদন্তে উঠে এসেছে ব্রাউন সুগার তৈরির কাঁচামাল ঝাড়খণ্ড কিংবা উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে আসছে । সেই কাঁচামাল সাপ্লাই চেন বন্ধ করার জন্য আমরা উদ্যোগ নিলে দুষ্কৃতীরা অন্য সাপ্লাই চেন ব্যবহার করছে ।”
মালদার ব্রাউন সুগার প্রস্তুতকারকরা কীভাবে এত দক্ষ হয়ে উঠছে ? তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান, মালদা জেলায় যারা ব্রাউন সুগার প্রস্তুত করছে, তারা টেকনিক্যালি তেমন স্ট্রং নয় । তবে ব্রাউন সুগার তৈরি করতে গিয়ে যারা ধরা পড়ছে, তাদের বেশিরভাগই একাধিকবার ব্রাউন সুগার তৈরি করেছে । হয়তো এরা ভিন রাজ্যে গিয়ে ব্রাউন সুগার তৈরির সঠিক পদ্ধতি শিখছে অথবা কোনও এক্সপার্ট মালদায় এসে ব্রাউন সুগার তৈরির সঠিক পদ্ধতি দেখিয়েছে । মালদা জেলা ব্রাউন সুগার তৈরির হাব হিসেবে কারবারীদের কাছে পরিচিত হলেও জেলা পুলিশ গভীরে নেমে এই শিকড় উপড়ে ফেলার প্রস্তুতি শুরু করেছে ।