বীরভূম, 28 মার্চ: দিদি কাজের মানুষ ৷ কিন্তু, দেউচা-পাচামিতে এখনও কেন শিল্প হল না ? সাংসদ হিসাবে শতাব্দী রায় প্রসঙ্গে এমনই মত বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের মানুষজনের । 15 বছর এই লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ অভিনেত্রী শতাব্দী রায় । এবারও এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে তাঁকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল ৷ তবে, শিল্প নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও অধিকাংশ মানুষ বলছেন, শতাব্দী গ্রামে গ্রামে ঘোরেন ৷ কাজ করেন ৷
গরুপাচার ও আর্থিক তছরুপের মামলায় তিহারে বন্দি অনুব্রত মণ্ডল । তৃণমূলের এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকে ছাড়াই এই প্রথম লোকসভা নির্বাচন হবে বীরভূমে ৷ রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের আগেই 2009 সালে এই বীরভূম লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জয়লাভ করেছিলেন শতাব্দী রায় ৷ 2014 সালেও তিনি বীরভূম লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন ৷
ঘাসফুল শিবিরের অন্দরের খবর, এই সময় অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কিছুটা মনোমালিন্য হয় সাংসদ শতাব্দী রায়ের । স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে দূরত্ব কিছুটা কমে দুজনের ৷ ক্ষোভের প্রশমন হওয়ায় 2019 সালে ফের তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন অভিনেত্রী । এবারও এই কেন্দ্রে তাঁর উপরেই ভরসা রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ।
15 বছরের সাংসদ শতাব্দী রায় বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের মানুষজনের জন্য কী কী কাজ করেছেন, কী কী কাজ বাকি রয়েছে, তা জানতে মাঠে নামে ইটিভি ভারত । ইটিভি ভারত-এর 'রিপোর্ট কার্ড'-এ উঠে এল শতাব্দী রায় প্রসঙ্গে মানুষের কথা। কেউ বলছেন, ‘‘দিদি কাজের মানুষ ।’’ কেউ বলছেন, ‘‘ভেবেছিলাম অভিনেত্রী এলাকায় দেখা মিলবে না, তা কিন্তু নয় ।’’ কেউ আবার বলছেন, ‘‘ফোনে পাই সাংসদকে ।’’ কারও কারও বক্তব্য, ‘‘কাজ করেছেন, তবে অনেক কাজ করা বাকি আছে, আশা রাখছি করবেন ।’’ কারও কারও প্রশ্ন, ‘‘দেউচা-পাচামি এত বড় সম্ভাবনাময় শিল্প, তা এখনও করতে পারল কই ?’’
যদিও, শতাব্দী রায় বলেন, "আমি আমার সাংসদ তহবিলের টাকা স্বচ্ছতার সঙ্গে খরচ করেছি । আগেও তাই করেছি । অনেকে বড় বড় প্রকল্প করে সাংসদ তহবিল শেষ করে দেন । আমি কিন্তু তা করি না ৷ আমি মনে করি গ্রামের শেষ মাথায় যে লোকটা আমায় ভোট দিয়েছে, তার একটা কলের প্রয়োজন হলে, সেটা যেন আমি করতে পারি ৷ তাই আমি সবচেয়ে কম 1 লক্ষ টাকার স্কিমও দিয়েছি । এখন যদিও এটা বন্ধ করেছি ৷ অল্প অল্প করে টাকা খরচ করতে অনেক পরিশ্রমও করতে হয় ৷"
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কী কী কাজ করেছেন শতাব্দী রায়-
- রামপুরহাটের 6 ফুকো টার্নেল রাস্তা তৈরি করেছেন ।
- দুবরাজপুরের বাইপাস রাস্তা করেছেন ।
- ইএসআই হাসপাতালের অনুমতি আনিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে ।
- সিউড়ির গুরুত্বপূর্ণ রেলওভার ব্রিজের জন্য সংসদে একাধিকবার দাবি তুলে কাজ শুরু করানো হয়েছে ।
- রেলের অনেকগুলো স্টপেজ করেছেন ।
- কোভিডের সময় যে রেলের ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছিল, তা কমাতে বারবার রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আবেদন করেছেন ।
- হিংলো নদীত উপর সেতু পাকা করেছেন ।
- সিএসআর ফান্ড থেকে টাকা এনে ব্লক হাসপাতালগুলিতে জেনারেটর, বাথরুম প্রভৃতি করেছেন ।
- একাধিক রাস্তা, নলকূপ, কালভার্ট, কংক্রিটের সেচ খাল, পথবাতি করেছেন ।
বেশিরভাগ মানুষ শতাব্দী রায়কেই পুনরায় সাংসদ হিসাবে চাইছেন ৷ এর কারণ তাঁকে হাতের কাছে পাওয়া যায় । অভিনেত্রী সাংসদ হলেও ফোনে পাওয়া যায় ৷ এমনকি, গ্রামে গ্রামে ঘুরতে দেখা যায় । তবে একাংশ মানুষ বলছেন, 15 বছরের সাংসদ, এত দীর্ঘ সময়ে আরও কাজ করা যেত । দেউচা-পাচামি খোলামুখ কয়লা খনি প্রকল্প এখনও শুরু করা যায়নি, এই নিয়ে সাংসদের ভূমিকা কী ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে । কারণ দেউচা-পাচামি কয়লা খনি হলে, তা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর কয়লা খনি হবে ৷
তবে শতাব্দী রায় বলেন, "অনেক সেতুর দরকার, তবে সেইগুলা সাংসদ তহবিলের সীমিত টাকায় করা সম্ভব নয় ৷ তবে আমি চেষ্টা করব আবেদন করে এই সেতুগুলো নির্মাণের ৷ কেন্দ্রের কাছে একাধিকবার একটা বিষয় নিয়ে আবেদনের পর আবেদন করেও উত্তর পাই না । মন্ত্রীদের দফতরে চিঠির পর চিঠি করি, তারা অনেক গাফিলতি করেন ।"
কী কী কাজ হয়নি দেখে নেওয়া যাক এক নজরে -
- সিউড়ি শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে কোনও বিকল্প রাস্তা হয়নি ।
- বীরভূম লোকসভার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে হয় কাঁচা রাস্তা, না হয় খানাখন্দে ভরা ৷
- মহম্মদবাজার পাথর শিল্পাঞ্চলের বহু মানুষ ভূমিহীন, গৃহহীন ।
- দেউচা-পাচামি খোলা মুখ কয়লা খনি আজও বিশবাঁও জলে ।
- সিউড়ির একাধিক বালিঘাট থেকে বেআইনি ভাবে বালি উত্তোলনের ফলে নদী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত ।
- বহু জায়গায় সেতুর দাবি থাকলেও তা হয়নি ৷
- রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো পর্যাপ্ত নয় ।
শতাধিক বাংলা জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুবাদে মানুষের কাছে অতি পরিচিত মুখ ৷ তার উপর 15 বছরের সাংসদ হওয়ার কারণে বীরভূমের মাটি তাঁর কাছে পরিচিত ৷ তাই চতুর্থবার প্রার্থী হওয়ার পর মানুষের সমর্থন নিতে জোর কদমে প্রচারে নেমেছেন শতাব্দী রায় । এখন অপেক্ষা মানুষের রায়ের ।
আরও পড়ুন: