কলকাতা, 15 জুলাই: ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে রক্তক্ষরণ। বঙ্গ রাজনীতির একদা ফার্স্ট বয়েরা ধীরে ধীরে যেতে শুরু করে পিছনের সারিতে। রক্তক্ষরণের অভিঘাত কতটা, তা বোঝা গিয়েছে সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে। নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরের ধাক্কা সামলেও 2009 সালে সিপিএম 9টি আসন পেয়েছিল। শরিকদের পক্ষে গিয়েছিল আরও 6টি আসন। সেই দলই পরপর দুটি লোকসভা নির্বাচনে শূন্য। মাত্র 15 বছরে এত বড় বদল কেন ? উত্তর জানা নেই আলিমুদ্দিনের। ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া সিপিএম ফিরছে পুরনো রাস্তায়। বুথ স্তরে সংগঠনকে মজবুত করতে জোনাল কমিটি ফিরিয়ে আনতে চাইছেন দলের একাংশের নেতারা।
2017 সালের আগে পর্যন্ত এই জোনাল কমিটির অস্তিত্ব ছিল বঙ্গ সিপিএমে। এখন আর সেই ব্যবস্থা নেই। সেই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ভাবনা রয়েছে বাম নেতাদের একটা বড় অংশের। অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে কল্যাণীতে হতে চলেছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশন। সেখানেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। বুথস্তরে শক্তি বৃদ্ধি করতে এরিয়া কমিটির বর্তমান ব্যবস্থার ঘটিয়ে লোকাল কমিটি ও জোনাল কমিটি ফিরিয়ে আনা হতে পারে।
বর্তমানে বঙ্গ সিপিএমে শাখা ও জেলা কমিটির মাঝে এরিয়া কমিটি আছে। কিন্তু আগে শাখা ও জেলা কমিটির মাঝে এলসি বা লোকাল কমিটি এবং একাধিক লোকাল কমিটি নিয়ে জোনাল কমিটি ছিল। এবারও সেই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে, এই বিষয়ে দলের মধ্যে মতামত গ্রহণ পর্ব শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মতামত নিতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
সূত্রের আরও খবর, প্রাথমিক পর্যায়ে জেলার থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে পার্টি কর্মী, দরদী, সমার্থক, বুথ এজেন্ট শুরু করে যাঁরা এবারের নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। তৃতীয় পর্যায়ও রিপোর্ট নেওয়া হবে কয়েকজনের থেকে। গোটা রাজ্যের রিপোর্ট নেওয়ার পরই রাজ্য কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হতে চলেছে।
উল্লেখ্য, রাজ্যের বহু বুথে সিপিএমের নূন্যতম সংগঠন নেই। পার্টি পতাকা ধারার লোক নেই। সেক্ষেত্রে বুথে এজেন্ট দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাই, সিপিএম পার্টির তরফে দলীয়স্তরে বার্তা দেওয়া হয়েছে জন সংযোগ বাড়াতে। কারণ, এবারের নির্বাচনেও বাড়ি বাড়ি প্রচারে যাননি স্থানীয় নেতারা। দলীয় কর্মী সমর্থকদের সঙ্গেও থাকেননি। আরও একই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তৃণমূল বিরোধিতা করতে গিয়ে তুলনামূলক বিজেপি বিরোধিতা এবারের ভোটে কম হয়ে গিয়েছে বলে বিশ্লেষণ করতে উঠেছে এমন তথ্যও।
মাঠে-ঘাটে কলে-কারখানার কাজ করা শ্রমিক শ্রেণিও সিপিএমের থেকে মুখ ঘুরিয়েছে। তাঁরাই একটা সময় সিপিএম তথা বামেদের ভোট ব্যাঙ্ক ছিল। লোকসভা ভোট 'বিপর্যয়' পর্যালোচনায় এই 'জনবিচ্ছিন্ন' অবস্থার জন্য বুথ স্তরে সংগঠন না-থাকার বিষয়টি বারে বারে উঠে এসেছে সিপিএমে। এটাই বঙ্গ সিপিএমে সাংগঠনিক কাঠামোতে বদল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।