সন্দেশখালি, 9 মে: রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করা সন্দেশখালির নির্যাতিতারা কি ‘ভুয়ো’ ? ভাইরাল ভিডিয়োয় এমনই বলতে শোনা গেল বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী তথা সন্দেশখালি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ রেখা পাত্রকে ৷ তাঁর সঙ্গেই ওই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে আরও তিন মহিলাকে ৷ যদিও ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি ইটিভি ভারত ৷
সন্দেশখালি কাণ্ডে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিয়োয় রেখার দাবি, ‘‘সন্দেশখালির আন্দোলনকারী হিসেবে যাঁদের রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাঁদের সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ।’’ অর্থাৎ তাঁদের পরিচয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি । শিবু হাজরার সঙ্গে গোপনে আঁতাত করে ওই আন্দোলনকারীদের নিয়ে যাওয়ার মতো বিস্ফোরক দাবিও করেছেন রেখা পাত্র ।
এরপরই ওই ভিডিয়োতে রেখাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘আমরা নির্যাতিতা মায়েরা সন্দেশখালিতে পড়ে আছি, আর আমাদের মুখ হিসেবে কারা গিয়েছে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে, তা জানা প্রয়োজন । রাষ্ট্রপতি ম্যাডামের কাছে তাঁরা যাঁদের নিয়ে গিয়েছেন সেই বিষয়ে কিছু জানিয়েছিলেন আমাদের ? আমরা আন্দোলনের মুখ, আমাদের না নিয়ে গিয়ে অন্যদের সাজিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস কে দিয়েছে ?’’
ঘটনায় এক মহিলা বিজেপি নেত্রীর নামও উঠে আসছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । এমনকি বিজেপি নেতা অনুপ দাসের ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছেন তাঁরা । সম্প্রতি সন্দেশখালির একটি ভিডিয়ো সামনে এসেছিল, যেখানে বিজেপি-র মণ্ডল সভাপতিকে বলতে শোনা যায়, সন্দেশখালির গোটা ঘটনাই পরিকল্পিত এবং সাজানো । মিথ্যে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল । শেখ শাহজাহানের মতো প্রভাবশালীদের জেলে পুরতে শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর সহযোগীই গোটা পরিকল্পনা করেন এবং সেই মতো টাকা জোগান দেন বলেও ভিডিয়ো-য় দাবি করতে শোনা যায় বিজেপি-র ওই মণ্ডল সভাপতিকে । এবার আরও এক ভিডিয়ো সামনে এল ।
অন্যদিকে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "অনুপ দাসের কথা বলা হচ্ছে, তাঁকে আমি চিনি। উনি দীর্ঘদিনের বিজেপি কর্মী। এই ভিডিওতে যারা বক্তব্য রাখলেন, তাঁরা এই আন্দোলনের মধ্যে নতুন এসেছেন। রেখা পাত্রও নতুন এসেছেন। এই সময়ে ছোট ছোট দ্বীপে মহিলারা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন করেছিলেন। এর মধ্যে কোনও বিজেপি, তৃণমূল, সিপিএম ছিল না। ভবিষ্যতেও এই আন্দোলন হবে।”
যদিও ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিয়োয় শুধু রেখা নন, তাঁর মতো রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়া আন্দোলনকারীদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আরেক আন্দোলনকারী মাম্পি দাসও । তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমরা সন্দেশখালির আন্দোলনে যুক্ত । প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ছিলাম । আমাদের ছাড়া রাষ্ট্রপতি ম্যাডামের কাছে কারা গেল ? আমরা তাহলে কারা ?’’ ভিডিয়োতে তিনি আরও বলছেন, ‘‘অনুপ দাস নিয়ে গিয়েছিলেন বলে খবর পেয়েছি । ভিতরে ভিতরে শিবু হাজরার কাছ থেকে মাসে 10 হাজার টাকা করে নিতেন। ওর সঙ্গে পদ্মা মণ্ডল নামে এক মহিলা গিয়েছিলেন । তাহলে কি ওই মহিলা ভিতরে ভিতরে তৃণমূলের লোক । বাইরে বিজেপির ?’’
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ভিডিয়ো-য় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে যাওয়া মহিলাদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ বিজেপি প্রার্থী রেখা । প্রধানমন্ত্রী যখন বারাসতে এসেছিলেন, সেই সময় তাঁর সঙ্গে দেখা করেন রেখা এবং অন্যরা । যাঁদের মধ্যে মাম্পি দাসও ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সময় ।
এর পরপরই দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যান কিছু মহিলা, যাঁরা নিজেদের সন্দেশখালির আন্দোলনকারী বলে পরিচয় দেন। সেই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সন্দেশখালির রেখা এবং বেশ কিছু আন্দোলনকারী । যাঁরা আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন না, তাঁদের রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ওই অভিযোগকারীরা ।
এদিকে, এই নিয়ে সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বলেন, ‘‘গোটাটাই নাটক ছিল। কখনও রেখাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কখনও অন্যদের নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে । এই জঘন্য ষড়যন্ত্রে সন্দেশখালির মহিলাদের যে অসম্মান হয়েছে, গোটা বাংলার অসম্মান হয়েছে, বিজেপি--র মতো রাজনৈতিক দল এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে । এই জঘন্য, নির্লজ্জ রাজনীতি গোটা দেশে কায়েম করতে চায় বিজেপি ।’’
আরও পড়ুন: