ETV Bharat / state

বিদেশে গিয়ে বিপত্তি, তরুণীর শরীরে ক্যানসার সৃষ্টিকারী পরজীবীর প্রবেশ! - SSKM Hospital - SSKM HOSPITAL

SSKM Hospital: বিদেশে ঘুরেতে গিয়ে তরুণী নেমেছিলেন ওয়াটার পার্কে ৷ সেখান থেকেই শরীরে প্রবেশ করল প্যারাসাইট বা পরজীবী ৷ যা মারাত্মক ৷ 'সিস্টোসোমা হেমাটোবিয়াম' নামে ক্যানসার সৃষ্টিকারী ওই পরজীবী যদি শরীরে প্রবেশ করে আর যদি দ্রুত চিকৎসা না-করা হয় তাহলে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে! এসএসকেএম হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় ইটিভি ভারতকে জানালেন বিস্তারিত ৷

SSKM Hospital
SSKM Hospital
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 26, 2024, 9:59 PM IST

Updated : Mar 26, 2024, 10:44 PM IST

শরীরে প্রবেশ ক্যানসার সৃষ্টিকারী পরজীবী, বলছেন চিকিৎসক

কলকাতা, 26 মার্চ: ঘুরতে গিয়ে বিপত্তি বাঁধালেন কলকাতার তরুণী। শরীরে বাসা বাঁধল অজানা এক রোগ। অবশেষে সেই রোগের চিকিৎসা করে সুস্থ জীবনে ফেরাল কলকাতার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম। হাসপাতালের চিকিৎসক জানালেন, এই রোগের দ্রুত চিকিৎসা না-করালে ব্লাড ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে! কী হয়েছিল তাঁর? এই অজানা রোগ কীভাবেই বা তরুণীর শরীরে প্রবেশ করল? চিকিৎসক যোগীরাজ রায় এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন ইটিভি ভারতকে ৷

এসএসকেএম হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে জানালেন, পরিবারের সঙ্গে দুবাইয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। তার বেশকিছু মাস আগে তিনি ঘুরে আসেন মিশরও। তবে দুবাইয়ে গিয়ে ঘণ্টাতিনেক তিনি একটি ওয়াটার পার্কে নামেন ৷ তারপরেই শরীরে শুরু হয় একধরনের অদ্ভূত অস্বস্তি।

  • কলকাতায় ফিরে আসার পর থেকেই তাঁর মনে হয় প্রস্রাবের সঙ্গে কিছু বেরিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে অদ্ভূত জ্বালা ও যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকেন তিনি ৷ ওই তরুণী পেশাগত দিক দিয়ে একজন চিকিৎসক। কলকাতাতেই থাকেন তিনি। ফলে নিজের পরিচিত এক নেফ্রোলজিস্টকে বিষয়টি জানান তিনি। তখন সেই চিকিৎসক তাঁকে রেফার করেন এসএসকেএম হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায়কে। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে এবং তা নিশ্চিত হতেই যোগাযোগ করেন এসএসকেএম হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক ডাঃ দীপঙ্কর পালের সঙ্গে ৷
  • দীপঙ্কর পাল যেমনটা যোগীরাজ রায়কে জানান, তেমনটাই তিনি ইটিভি ভারতকে বলেন, "একাধিকবার 'ইউরিন' পরীক্ষা করে দেখা যায় ওই তরুণীর শরীরে বাসা বেঁধেছে 'সিস্টোসোমা হেমাটোবিয়াম' নামে ক্যানসার সৃষ্টিকারী এক ধরনের মারাত্মক প্যারাসাইট বা পরজীবী। মূলত ত্বকের সাহায্যে এটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এই পরজীবী দিনে ডিম পাড়ে প্রায় 300-350টি। ফলে সেই তরুণীর শরীরে ইতিমধ্যেই ডিমও পেরেছিল ওই পরজীবী।" এই ধরনের পরজীবী ভারতে জন্মাতে পারে না। ভারতের কোনও সমুদ্রে বা জলে এই পরজীবী নেই। তবে বাইরের দেশে এই ধরনের পরজীবী প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।"

যোগীরাজবাবুর আরও সংযোজন, "মূলত পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলায় সমুদ্রে পাওয়া যায় এই ধরনের পরজীবী। ওই তরুণী পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে গেলেও জলে তিনি একাই নেমেছিলেন। এমনকী পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে তাঁর পরিবারের কারও শরীরেই এই পরজীবীর অস্তিত্ব নেই। ফলে আমার ও দীপঙ্করবাবুর অনুমান, ওই তরুণী দুবাইয়ে গিয়ে বহুক্ষণ জলে নেমেছিলেন। সেই ওয়াটার পার্ক থেকেই এই সংক্রমণ হয়েছে। মহারাষ্ট্রে এক ব্যাক্তির শরীরে এই সংক্রমণ দেখা গেলেও তা প্রমাণিত হয়নি। ফলে কলকাতার এই তরুণীই উদাহরণই প্রথম।"

যোগীরাজ রায়ের কথায়, "পরবর্তী ওই তরুণীকে অ্যান্টি প্যারাসাইটিক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা হয়েছে। তিনি এখন ভালো রয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসকের কথায়, যদি কেউ এই রোগের চিকিৎসা না-করায় তাহলে পরবর্তীতে ব্লাডারের আকৃতি বদলাতে থাকে। প্রস্রাবের সময় রক্ত পর্যন্ত বের হয়। এমনকী এই থেকে ব্লাড ক্য়ানসারও হতে পারে ৷" এরইসঙ্গে চিকিৎসক জানিয়েছেন, এই ধরনের পরজীবী ভারতের জলে নেই। তবে যদি কেউ এই সংক্রমণ নিয়েই ভারতের জলে বা কোনও ওয়াটার পার্কে নামেন, তাহলে অন্য কেউ একই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

আরও পড়ুন:

  1. খিঁচুনি বা মৃগী আক্রান্তের মুখে চামচ নয়, সচেতনতার পথ দেখালেন বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট
  2. কোভিড আক্রান্তদের যক্ষ্মা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, গুজব না সত্যি ? উত্তর দিলেন চিকিৎসক
  3. হাতের আংটি দেবে হৃদয়ের সুরক্ষা, নয়া দিশা দেখাচ্ছে এসএসকেএম

শরীরে প্রবেশ ক্যানসার সৃষ্টিকারী পরজীবী, বলছেন চিকিৎসক

কলকাতা, 26 মার্চ: ঘুরতে গিয়ে বিপত্তি বাঁধালেন কলকাতার তরুণী। শরীরে বাসা বাঁধল অজানা এক রোগ। অবশেষে সেই রোগের চিকিৎসা করে সুস্থ জীবনে ফেরাল কলকাতার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম। হাসপাতালের চিকিৎসক জানালেন, এই রোগের দ্রুত চিকিৎসা না-করালে ব্লাড ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে! কী হয়েছিল তাঁর? এই অজানা রোগ কীভাবেই বা তরুণীর শরীরে প্রবেশ করল? চিকিৎসক যোগীরাজ রায় এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন ইটিভি ভারতকে ৷

এসএসকেএম হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে জানালেন, পরিবারের সঙ্গে দুবাইয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। তার বেশকিছু মাস আগে তিনি ঘুরে আসেন মিশরও। তবে দুবাইয়ে গিয়ে ঘণ্টাতিনেক তিনি একটি ওয়াটার পার্কে নামেন ৷ তারপরেই শরীরে শুরু হয় একধরনের অদ্ভূত অস্বস্তি।

  • কলকাতায় ফিরে আসার পর থেকেই তাঁর মনে হয় প্রস্রাবের সঙ্গে কিছু বেরিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে অদ্ভূত জ্বালা ও যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকেন তিনি ৷ ওই তরুণী পেশাগত দিক দিয়ে একজন চিকিৎসক। কলকাতাতেই থাকেন তিনি। ফলে নিজের পরিচিত এক নেফ্রোলজিস্টকে বিষয়টি জানান তিনি। তখন সেই চিকিৎসক তাঁকে রেফার করেন এসএসকেএম হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায়কে। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে এবং তা নিশ্চিত হতেই যোগাযোগ করেন এসএসকেএম হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক ডাঃ দীপঙ্কর পালের সঙ্গে ৷
  • দীপঙ্কর পাল যেমনটা যোগীরাজ রায়কে জানান, তেমনটাই তিনি ইটিভি ভারতকে বলেন, "একাধিকবার 'ইউরিন' পরীক্ষা করে দেখা যায় ওই তরুণীর শরীরে বাসা বেঁধেছে 'সিস্টোসোমা হেমাটোবিয়াম' নামে ক্যানসার সৃষ্টিকারী এক ধরনের মারাত্মক প্যারাসাইট বা পরজীবী। মূলত ত্বকের সাহায্যে এটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এই পরজীবী দিনে ডিম পাড়ে প্রায় 300-350টি। ফলে সেই তরুণীর শরীরে ইতিমধ্যেই ডিমও পেরেছিল ওই পরজীবী।" এই ধরনের পরজীবী ভারতে জন্মাতে পারে না। ভারতের কোনও সমুদ্রে বা জলে এই পরজীবী নেই। তবে বাইরের দেশে এই ধরনের পরজীবী প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।"

যোগীরাজবাবুর আরও সংযোজন, "মূলত পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলায় সমুদ্রে পাওয়া যায় এই ধরনের পরজীবী। ওই তরুণী পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে গেলেও জলে তিনি একাই নেমেছিলেন। এমনকী পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে তাঁর পরিবারের কারও শরীরেই এই পরজীবীর অস্তিত্ব নেই। ফলে আমার ও দীপঙ্করবাবুর অনুমান, ওই তরুণী দুবাইয়ে গিয়ে বহুক্ষণ জলে নেমেছিলেন। সেই ওয়াটার পার্ক থেকেই এই সংক্রমণ হয়েছে। মহারাষ্ট্রে এক ব্যাক্তির শরীরে এই সংক্রমণ দেখা গেলেও তা প্রমাণিত হয়নি। ফলে কলকাতার এই তরুণীই উদাহরণই প্রথম।"

যোগীরাজ রায়ের কথায়, "পরবর্তী ওই তরুণীকে অ্যান্টি প্যারাসাইটিক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা হয়েছে। তিনি এখন ভালো রয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসকের কথায়, যদি কেউ এই রোগের চিকিৎসা না-করায় তাহলে পরবর্তীতে ব্লাডারের আকৃতি বদলাতে থাকে। প্রস্রাবের সময় রক্ত পর্যন্ত বের হয়। এমনকী এই থেকে ব্লাড ক্য়ানসারও হতে পারে ৷" এরইসঙ্গে চিকিৎসক জানিয়েছেন, এই ধরনের পরজীবী ভারতের জলে নেই। তবে যদি কেউ এই সংক্রমণ নিয়েই ভারতের জলে বা কোনও ওয়াটার পার্কে নামেন, তাহলে অন্য কেউ একই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

আরও পড়ুন:

  1. খিঁচুনি বা মৃগী আক্রান্তের মুখে চামচ নয়, সচেতনতার পথ দেখালেন বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট
  2. কোভিড আক্রান্তদের যক্ষ্মা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, গুজব না সত্যি ? উত্তর দিলেন চিকিৎসক
  3. হাতের আংটি দেবে হৃদয়ের সুরক্ষা, নয়া দিশা দেখাচ্ছে এসএসকেএম
Last Updated : Mar 26, 2024, 10:44 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.