কলকাতা, 17 মে: হুগলির জিরাট থেকে ভুবনেশ্বরে ফেডারেশন কাপ অ্যাথলেটিক্স মিটে পোডিয়ামে ওঠার দৌড়টা সহজ ছিল না ৷ কঠিন হলেও হার না মানা মনোভাবকে সঙ্গী করে মৌমিতা মণ্ডল আজ সাফল্যের সরণিতে ৷ একশো মিটার হার্ডলস ও লং জাম্পে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন বাংলার এই মেয়ে ৷ 22 বছরের মৌমিতা এবার তাঁর স্বপ্নের পরিধি বাড়াতে চান ৷
হুগলি জেলার বলাগড়ের জিরাট স্টেশনে মৌমিতার বাবার চায়ের দোকান ৷ মা গৃহবধু হলেও ছোটদের টিউশনি করেন নিজের জ্ঞানচর্চার জন্য ৷ মৌমিতারা দুই বোন ৷ মধ্যবিত্ত সংসার হলেও স্বপ্নের পরিধিটা ছোট নয় ৷ আর এই স্বপ্নপূরণে মৌমিতার পুঁজি বাবা-মায়ের উৎসাহ এবং নীরজ চোপড়ার উপদেশ ৷ ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখত মৌমিতা ৷ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যাটিং খুব ভালো লাগত ৷ ঠিক করেই ফেলেছিলেন ক্রিকেটার হবেন ৷ সেই ভাবনা থেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু ৷ কিন্তু, ক্রিকেটার হয়ে ওঠার ঝক্কি এবং খরচ দু’টোই বেশি বলে ক্রিকেটকে দূরে সরিয়ে অ্যাথলোটিক্সে মনোনিবেশ করেন মৌমিতা মণ্ডল ৷
মৌমিতা বলেন, "আমি একটু বেশি বয়সেই অ্যাথলেটিক্স শুরু করেছিলাম ৷ রাজ্য পর্যায়ে একবারই জুনিয়র বিভাগে নামার সুযোগ হয়েছিল ৷ তারপর থেকেই আমি ওপেন টু অল বিভাগে অংশ নিচ্ছি ৷ অর্জুন সরকার আমার প্রথম কোচ ৷ তারপর হার্ডলস শুরু শ্রীরামপুর স্পোর্টিং ক্লাবে শুভময় দাসের অধীনে ৷ শ্রীরামপুর থেকে আমি ভুবনেশ্বরে চলে গিয়েছিলাম ৷ সেখানে দু’বছর ট্রেনিং করার পরে আমি মুম্বইতে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনে চলে এসেছি ৷ সেখানেই রাহুল বশিষ্ঠ এবং জেমস হিলিয়ার্ডের কাছে রয়েছি ৷"
মৌমিতা 2026 সালের এশিয়ান গেমসকে পাখির চোখ করতে চাইছেন ৷ তার আগে আসন্ন সাফ গেমস এবং এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেকে পোডিয়ামে দেখতে চান ৷ সেই লক্ষ্যপূরণে মৌমিতার আদর্শ নীরজ চোপড়া ৷ ভুবনেশ্বরে ফেডারেশন কাপের আসরে নীরজ চোপড়ার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে তাঁর ৷ প্রথম সাক্ষাতে ভারতের সর্বকালের সেরা অ্যাথলিটের পরামর্শে মৌমিতা যেন নিজের লক্ষ্যপূরণের দৌড়ে নতুনভাবে স্ট্যান্স ঠিক করছেন ৷
রাজ্য পর্যায়ে একশো মিটার হার্ডলস, লংজাম্প এবং ট্রিপল জাম্পে অংশ নিতেন মৌমিতা ৷ ট্রিপল জাম্পে রাজ্য পর্যায়ে পদক রয়েছে ৷ আপাতত ট্রিপল জাম্পে আর অংশ নেন না মৌমিতা ৷ কারণ হিসেবে বলেন, "আমি শুরুটা অন্যদের তুলনায় একটু দেরিতে শুরু করেছিলাম ৷ সেদিক থেকে আমার উঠে আসাটা দ্রুত ৷ বরাবরই মানসিক জোরটা বেশি ৷ আসলে অ্যাথলিটদের এত বেশি উত্থান-পতন, চোট-আঘাতের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, যে মানসিক দৃঢ়তা তৈরি হয়ে যায় ৷"
এবারের ফেডারেশন কাপে মাত্র 151 মিনিটের ব্যবধানে একশো মিটার হার্ডলস এবং লংজাম্প ইভেন্টে নামতে হয়েছিল ৷ মানসিক স্থিরতা এই ক্ষেত্রে ভীষণ জরুরি ৷ মৌমিতা বলছেন দু’দিন আগে যেহেতু ইভেন্টের সূচিটা চলে এসেছিল, তাই মানসিক প্রস্তুতিটা সেরে রাখা ছিল ৷ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যাটিং ও আগ্রাসী ক্রিকেট যদি মৌমিতাকে খেলোয়াড় হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে ৷ তাহলে নীরজ চোপড়ার একাগ্রতা, শৃঙ্খলাপরায়নতা সাফল্যের সরণিতে হাঁটতে উৎসাহিত করছে ৷ ভুবনেশ্বরে নীরজ চোপড়ার সঙ্গে দেখা করে সাফল্যের রহস্যটা জানতে চেয়েছিলেন ৷
মৌমিতা সেই সাক্ষাৎ নিয়ে বলেন, "নীরজ চোপড়া দেশের সবচেয়ে শৃঙ্খলাপরায়ন অ্যাথলিট ৷ একদিন কথা বলেছিলাম ওনার সঙ্গে ৷ জানতে চেয়েছিলাম একশো শতাংশ ট্রেনিং করার পরেও সাফল্য 20 শতাংশ অ্যাথলিট পায় কেন ? শৃঙ্খলাপরায়ন ভাবে ট্রেনিংয়ের অর্থ মাঠের বাইরেও কতটা শৃঙ্খলার মধ্যে থাকছি ৷ ট্রেনিংয়ের পরে ঘুরে বেড়াচ্ছ বা অন্য কিছুতে ব্যস্ত থাকছ তাহলে হবে না ৷ শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, ট্রেনিংয়ের ভুলভ্রান্তি নিয়ে ভাবনাচিন্তা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে ৷ আমি আগে এতটা শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিলাম না ৷ কিন্তু, দাদার কাছ থেকে পরামর্শ পেয়ে অনেক বেশি শৃঙ্খলাপরায়ন হয়ে উঠেছি ৷ বারবার ফোকাস থাকার কথা বলেছেন দাদা ৷"
2026 সালের এশিয়ান গেমসকে পাখির চোখ করলেও, মাঝে দেশীয় এবং আর্ন্তজাতিক প্রতিযোগিতায় পদক জয়ের অভ্যাসটা গড়ে তুলতে চান ৷ নীরজ চোপড়ার পরামর্শ মেনে প্রতিবন্ধকতার যাবতীয় হার্ডলস টপকে দেশকে পদক দিতে চান হুগলির মৌমিতা ৷
আরও পড়ুন: