কলকাতা, 29 জানুয়ারি: এমন একটা দিনের আশাতেই তো এতদিন হা-পিত্যেশ করে বসেছিলেন সমর্থকেরা ৷ দলের কাছে একটাই আবদার ছিল, 'তোমরা শুধু ট্রফি এনে দাও, এই শহর রাঙিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের ৷' দেরিতে হলেও কথা রাখলেন ফুটবলাররা ৷ আর কথামতোই সোমবার শহর কলকাতাকে লাল-হলুদ রংয়ে রাঙিয়ে দিল ইস্টবেঙ্গল জনতা। সুপার কাপ জিতে সোমের বিকেলে শহরে ফিরতেই কার্লেস কুয়াদ্রাত ও ছেলেদের নিয়ে বল্গাহীন আবেগে ভাসলেন ইস্টবেঙ্গল সভ্য-সমর্থকেরা ৷
এক যুগ পর সর্বভারতীয় ট্রফি জিতে শহরে ফেরা প্রাণের দলকে নিয়ে এদিন উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভাঙে বিমানবন্দরে। দলের বিমান কলকাতার মাটি ছোঁয়ার অনেক আগে থেকেই দূরদূরান্ত থেকে বিমানবন্দরে ভিড় জমিয়েছিলেন সমর্থকেরা ৷ শেষমেশ অবস্থা এমন হল যে নিরাপত্তারক্ষীদের ঘেরাটোপে একে একে বাইরে আনতে হল ফুটবলারদের ৷ হিজাজি-সৌভিকদের নাম ধরে তখন যেন মন্ত্রোচ্চারণ চলছে বিমানবন্দরে, শব্দব্রহ্মে কেঁপে উঠছে চারিদিক ৷ তাতে কী? এতদিনের অপেক্ষার পর সেলিব্রেশনে কোনও ফাঁক রাখার পক্ষপাতী ছিল না লাল-হলুদ জনতা ৷
সমর্থকদের ভালোবাসার 'অত্যাচার' থেকে কোচ-ফুটবলারদের বের করে আনতে আসরে নামতে হয় ক্লাবের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকারকে। পুলিশের দেওয়া হ্যান্ডমাইক নিয়ে সমর্থকদের কাছে আবেদন করেন তিনি। কোনওমতে সমর্থকদের নাগাল ছুঁয়ে বাসে ওঠেন ফুটবলাররা। বিমানবন্দরের পর কলকাতার রাজপথের দখল নেয় ইস্টবেঙ্গল জনতা ৷ প্রায় হাজার বাইকের মিছিল টিম বাসকে এসকর্ট করে নিয়ে আসতে থাকে ক্লাব তাঁবুতে। ফলে ঘণ্টাচারেক সময় লেগে যায় বিমানবন্দর থেকে লেসলি ক্লডিয়াস সরণিতে পৌঁছতে ৷ ক্লাবেও তখন তিলধারণের জায়গা নেই। সময় যত গড়িয়েছে ততই বেড়েছে ভিড়।
এদিকে সুপার কাপের জয়ের আবহে ক্লাবের বিনিয়োগকারী সংস্থা জানিয়ে দেয়, ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক রাখতে বদ্ধপরিকর ইমামি। সংস্থার দুই উচ্চপদস্থ কর্তার তরফে বিজ্ঞপ্তি মারফৎ জানিয়ে দেওয়া হয়, ইস্টবেঙ্গল যাতে তাদের পুরনো গৌরব ফিরে পায় সেদিকে নজর দেওয়াই তাদের লক্ষ্য। এদিন সন্ধ্য়ায় ক্লাব তাঁবুতেও হাজির ছিলেন ইমামি প্রতিনিধিরা। টিম বাস পৌঁছনোর আগে ক্লাবে পতাকা উত্তোলন করেন সচিব কল্যাণ মজুমদার, সভাপতি প্রণব দাশগুপ্ত-সহ ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, বিকাশ পাঁজি, অলোক মুখোপাধ্যায়দের মতো প্রাক্তনীরা ৷ সমর্থকদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
সবশেষে দেবব্রত সরকার ট্রফি নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন। কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত. অধিনায়ক ক্লেটন সিলভা-সহ ফুটবলাররা মাঠে ঢুকতে আর ঘেরাটোপে বন্দী থাকেননি সমর্থকরা। পুলিশ বাউন্সার দিয়েও পরিস্থিতি সামলানো যায়নি। ফলে কোনওমতে কেক কেটে সমর্থকদের ভিড় এড়িয়ে কোচ-ফুটবলারদের ভিতরে প্রবেশ করানো হয় ৷ আগামিকালও ছুটি। বুধবার থেকে শনিবাসরীয় আইএসএল ডার্বির প্রস্তুতি শুরু করবেন কুয়াদ্রাত।
আরও পড়ুন: