কলকাতা, 26 ডিসেম্বর: ধর্মতলায় চিকিৎসদের ধরনা কর্মসূচির সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে । সেই মামলায় সওয়াল করতে গিয়ে রাজ্যের তরফে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন আইনজীবী ও সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "এই ডাক্তাররা পাবলিকের গলা কাটছে । একটা ডেলিভারির বিল 6 লক্ষ টাকা !"
প্রসঙ্গত, বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক সদ্য বিধানসভায় তাঁর বাচ্চার মেডিক্যাল বিল জমা করেছেন ৷ সেই প্রসঙ্গ তুলে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মামলায় দুই পক্ষের বক্তব্য শোনেন বিচারপতি প্রসেনজিৎ বিশ্বাস ৷ তবে চিকিৎসকরা শুক্রবার থেকে আর ধরনা করতে পারবেন কি না, সেই ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দেননি তিনি । রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছেন । কলকাতা হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে নির্দেশের কপি পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি ।
বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিতে রাজ্যের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই এই ধরনা কর্মসূচির তীব্র বিরোধিতা করেন । তাঁর মূল বক্তব্য, "কলকাতা হাইকোর্ট গত অগস্ট মাসেই আরজি কর মামলার তদন্ত সিবিআইকে হস্তান্তর করেছিল । ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আরজি করের ঘটনা স্বতঃপ্রণোদিত মামলা হিসাবে গ্রহণ করেছে । সুপ্রিম কোর্ট একাধিকবার সিবিআইয়ের থেকে তদন্ত রিপোর্ট নিয়েছে । সিবিআই তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ার মূল অভিযুক্ত । এখন ডাক্তারদের দাবি, সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিতে হবে ।"
তাঁর কথায়, "এটি তদন্তের বিষয় । কিন্তু এই দাবি নিয়ে আগেই সাত দিনের ধরনা কর্মসূচি করতে চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল । তাতে শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেয় হাইকোর্ট । সুপ্রিম কোর্ট শান্তিপূর্ণ ধরনা মিছিল করার অনুমতি দিয়েছে মানেই যখন খুশি যে খুশি, যতদিন খুশি ধরনা করতে পারবে ? সমস্যা সৃষ্টি করা ছাড়া ধরনা আর কীসের জন্য ? বড়দিনের ছুটির প্রচণ্ড ভিড় এমনিতেই রাস্তাঘাটে । কেন এখন ধরনা করা হবে ?"
তিনি বলেন, "যতদিন না সন্দীপ ঘোষ গ্রেফতার হবে তার মানে কি ততদিন ধরনা চলবে ? এটা তো সিবিআই তদন্তের বিষয় ।" এর আগের মামলায় ট্রাফিকের সমস্যা করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত । সেই প্রসঙ্গ তুলে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছবি দিয়ে দাবি করেন, "ধর্মতলার মতো ব্যস্ত জায়গায় ট্রাফিকের সমস্যা হচ্ছে । ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি হরীশ ট্যান্ডন নির্দেশ দিয়েছিলেন, আদৌ এঁদের ধরনা করার অধিকার আছে কি না তা বিবেচনা করে দেখবে একক বিচারপতির বেঞ্চ । কারণ বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এই অনুমতি দিয়েছিলেন । এই পরিস্থিতিতে নতুন মামলা হতে পারে না সময়সীমা বাড়ানোর দাবিতে । এই মামলা গ্রহণযোগ্য নয় ।"
বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের সন্তানের মেডিক্যাল বিলের প্রসঙ্গ তুলে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমি আমার নাতির সঙ্গে প্রায় দেড় বছর পরে একটু ঘুরতে বেরিয়েছি । এরা সেখানেও এইভাবে ডিসটার্ব করছে । আমাকে দিল্লিতে দু'ঘণ্টার জন্য দাঁড়াতে হল এই মামলায় সওয়াল করার জন্য । এই ডাক্তাররা পাবলিকের গলা কাটছে । একটা ডেলিভারির বিল 6 লক্ষ টাকা !"
এর পালটা চিকিৎসকদের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, "প্রতিবাদ ধরনা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার । তা খর্ব করা যায় না । ধর্মতলায় কোনও ট্রাফিকের সমস্যা হচ্ছে না । এটা আমাদের অধিকার । পুলিশ এর বিরুদ্ধে কিছু করতে পারে না । আমরা আদালতের কাছে সেই জন্যই অনুমতি চাইছি । যদি অনুমতি না দেওয়া হয় অরাজকতার সৃষ্টি হবে । সেটা আমরা চাই না । শান্তিপূর্ণভাবেই ধরনা হচ্ছে । রাজ্য এর আগে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল ধরনার সময়সীমা কমানোর দাবি নিয়ে । আমরা আগে 26 ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুমতি পেয়েছিলাম । ফের পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম । দেয়নি । তার জন্য মামলা করেছি ।"
বিচারপতি প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের প্রশ্ন, "আপনারা কতদিন করতে চাইছেন এই ধরনা ?" ডাক্তারদের আর এক আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেন, "সেটা আলোচনা করে জানাতে হবে ।" পরে তিনি জানান, অন্তত আরও 10 দিন সময় বাড়ানো হোক । বিচারপতি জানিয়েছেন, তিনি আপাতত নির্দেশ দিচ্ছেন না । পরে এ বিষয়ে নির্দেশ দেবেন ।