মালদা, 23 অগস্ট: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ‘অভয়া’কে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকদিন ৷ তদন্তের শুরুতেই কলকাতা পুলিশ এক সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করে ৷ সপ্তাহখানেক আগে তদন্ত সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে ৷ তার পর তদন্ত চলছে বটে, কিন্তু এর অগ্রগতির বিষয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত রয়েছে ৷
ফলে ‘অভয়া’র বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলছে ৷ একদিকে যেমন নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশ আন্দোলনে সামিল হচ্ছে, তেমনই রাজনৈতিক দলগুলিও আন্দোলন করছে ৷ পথে নেমেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ও ৷ তিনি দোষীদের ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছেন ৷ কিন্তু বিরোধীরা স্লোগান তুলেছেন ‘দফা এক দাবি এক মুখ্য়মন্ত্রীর পদত্যাগ’ ৷ শুক্রবার বিজেপি রাজ্যের প্রতিটি থানা ঘেরাও করে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছে ৷
প্রশ্ন উঠছে, এই রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক আন্দোলনের জোড়া ফলা কি শাসকের মনে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে ? বাংলাদেশের মতো জনবিপ্লবের আশঙ্কা করছে কি শাসক দল ?
কেন এই প্রশ্ন উঠছে, তা রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য সাবিনা ইয়াসমিনের কথাতেই স্পষ্ট হচ্ছে ৷ তিনি বলছেন, “আইন আইনের পথে চলছে ৷ পুলিশ ভাবছে এই ঘটনা নিয়ে কী করবে ৷ এই ইস্যুতে আমরাও আন্দোলন করছি ৷ আমরাও চাইছি, দোষীদের ফাঁসি হোক ৷ কিন্তু কেউ কেউ এটাকে বাংলাদেশের মতো সিন ক্রিয়েট করে মমতা ব্যানার্জিকে ইস্তফা দিতে হবে বলে দাবি করছেন ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এখানে মমতা ব্যানার্জির নাম কীভাবে আসছে ? এটা তো সিবিআই দেখছে ৷ মমতা ব্যানার্জির হাতে নেই৷ তাহলে কেন মমতা ব্যানার্জিকে ইস্তফা দিতে হবে ? আমরা কেন নরেন্দ্র মোদির ইস্তফা চাইব না ? কেউ যদি এই ঘটনাকে রাজনৈতিক ইস্যু করে মূল ঘটনা থেকে সরে যায়, আমি তাকে ধিক্কার জানাই ৷ এটা রাজনীতির জায়গা নয়, একটা ইমোশন ৷ মায়েদের সম্মানের খাতিরে আন্দোলন এমনভাবে হোক যাতে প্রকৃত তথ্য সামনে আসে ৷”
কয়েকদিন আগেই প্রতিবেশী দেশে জন আন্দোলনের স্বরূপ দেখেছে এপার বাংলার মানুষ ৷ সেদেশের সরকারের পতন, শেখ হাসিনাকে কীভাবে দেশ ছাড়তে হয়েছে, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন, সবটাই এপারের জানা ৷ এই বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বাংলাদেশের সীমান্ত ৷ একই মাটি ৷ শুধু কাঁটাতারের বেড়ায় খণ্ডিত দুই দেশ ৷ কিন্তু একই ভূখণ্ডে থাকা মানুষজনের সামাজিক রীতিনীতি, রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা, সংস্কৃতির মিল থেকেই যায় ৷ প্রশ্নটা সেখানেই ৷ কাঁটাতারের বেড়া হয়তো মানুষ আটকাতে পারে, আবেগ কি আটকাতে পারে ?
যদিও বাংলায় এখনও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি ৷ এখনও পর্যন্ত মানুষের আন্দোলন অসংগঠিত স্তরেই রয়েছে ৷ আলাদা আলাদা করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবাদ হচ্ছে ৷ কিন্তু যদি এই আন্দোলন সংগঠিতভাবে হয় ? “তেমন হলে কিন্তু বিপদ আছে,” বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালীঘাটের সঙ্গে যোগাযোগে থাকা মালদার এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা ৷
শাসক দলের ওই নেতার কথায়, “যতদিন পর্যন্ত মানুষের এই আন্দোলন অসংগঠিতভাবে হচ্ছে, ততদিন চিন্তা নেই ৷ কিন্তু একবার এই আন্দোলন সংগঠিত হয়ে গেলে সেটা সামাল দেওয়া মুশকিল ৷ সেটারই চেষ্টা করে চলেছে বিরোধীরা ৷ তবে আশা করা যায়, খুব তাড়াতাড়ি আরও কোনও বড় ইস্যু সামনে চলে আসবে ৷”
কিন্তু আশা অনুযায়ী তেমন কিছু না হলে... ???