দুর্গাপুর, 1 এপ্রিল: লাল পতাকার প্রতি মানুষের বিশ্বাস কবে চলে গেল ? যে তাকে ফেরাতে হবে ? ইটিভি ভারতকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনই আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গেল সিপিআইএমের যুব সংগঠনের এ রাজ্যের সর্বময় নেত্রী তথা সাম্প্রতিককালে বামপন্থী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের গলায় ৷ মীনাক্ষীর কথায়, ক্ষমতাচ্যুত হওয়া মানেই মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস হারানো নয় । লাল ফেরানোর দাবি জানিয়ে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় স্পষ্ট দাবি করলেন, নীতির প্রশ্নে বামপন্থীরাই 'বুর্জোয়া শক্তির' প্রধান বিরোধী ।
তিন দশকেরও বেশি সময়কালে বাংলায় রাজ্যপাট সামলানোর পর বামপন্থীরা আজকের রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একেবারেই নীচের সারিতে ।2011 সালে রাজনৈতিক পালাবদল করে তৃণমূল কংগ্রেস মহাকরণে জাঁকিয়ে বসার পর, প্রথমদিকে বামেরাই ছিল বিরোধী শক্তি । কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোট অংকের সমীকরণে বামেরা ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে থাকে । 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে 34 বছর এ রাজ্যে রাজ্যপাট সামলানো বাম প্রার্থীদের কপালে একটি আসনও জোটেনি । তবুও লড়াই থেমে থাকেনি । ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বামেরা এ রাজ্যে তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বকে শুধু টিকিয়ে রাখার লড়াই করেছে তা নয়, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমতে বামেরা দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের এবং এ রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলনের সামিল হয়েছে ।
বলাবাহুল্য, বামেদের এই আন্দোলনে আজ অন্যতম প্রধান মুখ পশ্চিম বর্ধমান জেলার কুলটির একটি অতি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় । সিপিআইএমের যুব সংগঠনের গুরুদায়িত্ব তার কাঁধেই অর্পণ করেছে দল । বর্তমানে সিপিআইএমের সর্বক্ষণের এই কর্মী জেলায় জেলায় বামপন্থী প্রচার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান প্রতীক । এ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি - এ কথা মানতে নারাজ মীনাক্ষী । তাঁর কথায়, "প্রধান বিরোধী দল বলতে কী বোঝেন ? তৃণমূল কংগ্রেসের পলিসির কোনও বিরোধিতা এ রাজ্যে বিজেপির কাছ থেকে দেখেছেন ? দিল্লির বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তাদের কোনও পলিসির বিরুদ্ধাচারণ করতে তৃণমূল কংগ্রেসকে দেখেছেন ? দেশের সাধারণ মানুষ পলিসির প্রশ্নে, নীতিগতভাবে এই দুই দলের একে অপরের বিরুদ্ধে বিরোধিতা দেখতে পাচ্ছেন না ।"
মীনাক্ষির দাবি, বামপন্থীরা বন্ধ কলকারখানার খোলার কথা বলছেন, বেকার সমস্যার সমাধানের কথা বলছেন, লড়াই করছেন, আন্দোলন করছেন, তাহলে মানুষের রায় বামপন্থীদের প্রতি ভোটবাক্সে প্রতিফলিত হচ্ছে না কেন ? এর উত্তরে মীনাক্ষীর স্পষ্ট জবাব, "ভোটবাক্সে প্রতিফলিত না-হলেও এই কথা যে বন্ধ হয়ে যাবে তার তো কোনও কথা নেই । এ লড়াই তো চলবেই । ভোটবাক্সে প্রতিফলিত হচ্ছে না, সেই পলিসির কথা সাংসদ, বিধায়করা বলছেন না বলেই তো রাস্তার লড়াইটা আরও বেশি তীব্র করা উচিত । আর সেই লড়াইয়ের কাজেই তো বামপন্থীরা আছে ।"
একদিকে বিজেপি যখন বলছে 35 টির বেশি আসন পাওয়ার কথা, তখন তৃণমূলীরা বলছে 42-এ 42 । আপনারা কতগুলো আসন পাওয়ার কথা বলছেন ? ইটিভি ভারতের এই প্রশ্নে মীনাক্ষির জবাব, "আমি জ্যোতিষ নই, সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের পলিসির ভিত্তিতে, কাজ এবং কথা নিয়ে আমরা যাই । মানুষের কাছে আমাদের আবেদন জীবনের সংকটে একমাত্র বিকল্প হিসাবে বামপন্থীদেরকে বেছে নিতে হবে । জোর করে বা লুট করে মানুষের আস্থা পাওয়া নয় । যারা বলছে 35, 42 আসন পাওয়ার কথা, তাদের পলিসি কোথায় ? নীতি কোথায় ? লড়াই কোথায় ?"
সাম্প্রতিক কালে কলকাতার ব্রিগেডে ইনসাফ যাত্রায় এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখো লাখো মানুষের জমায়েত হয়েছিল । তাতে কি আদৌ ইনসাফ মিলেছে ? মীনাক্ষীর জবাব, "মানুষ ইনসাফ চাইছে বলেই তো ভিড় রাস্তায় । ইনসাফ পায়নি, তার মানে মানুষ রাস্তাতেই থাকবে । আর যাঁদের ভিড় দেখেছিলেন, আমরা কিন্তু তাঁদেরকে জোর করে ডেকে আনিনি । মানুষ তাঁদের নিজেদের ইনসাফের টানেই এসেছিলেন ।"
মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের কথায়, "বর্ধমান বামদুর্গ, কারণ এখানে বাম চেতনার মানুষ, যাঁরা রুটি রুজির স্বার্থে লড়াই করেন । অবিভক্ত বর্ধমান জেলাতে এখনও পর্যন্ত খেটে খাওয়া মানুষ নিজেদের রুটি রুজির জন্য এখনও পর্যন্ত লড়াইটা করছেন । চোর লুটেরাদের বিরুদ্ধে এ লড়াই জারি থাকবে ।"
ইটিভি ভারতের কাছে মীনাক্ষী বলেন, "নতুন ভোটাররা অর্থাৎ আজকের প্রজন্ম আমাদেরকে যে বার্তা দিচ্ছে তা হল, নিজের জেলায, নিজের রাজ্যে কাজ পেতে চাই । কারখানা, সার্ভিস সেক্টরে স্বচ্ছতার সঙ্গে আরও বেশি নিয়োগ চাই । কর্মক্ষেত্রে শূন্যপদ তৈরি করা । ক্রেডিবিলিটি ও ট্র্যাক রেকর্ড অনুযায়ী গোটা দেশের মধ্যে এই কাজ একমাত্র বামপন্থীরাই যতদিন পর্যন্ত ডিসিশন মেকিং-এর ক্ষমতায় ছিল বা সাহায্য করেছে বা পার্লামেন্টের ভেতরে লাল ঝান্ডা ছিল, তখনই সম্ভব হয়েছে । লাল ঝান্ডা যতদিন পর্যন্ত লোকসভায় ছিল না, কৃষি, শিল্প বা সার্ভিস সেক্টরে এক টাকার উন্নতি হয়নি । প্রযুক্তির যুগ, অ্যান্ড্রয়েডের যুগে মানুষ তার তথ্য হিসাব হাতের মুঠোয় পাবে । তাই যুব সমাজের কাছে আবেদন নিজে বাঁচতে গেলে, রাজ্য বাঁচাতে গেলে, দেশ বাঁচাতে গেলে চাই লাল ঝান্ডা ।"
আরও পড়ুন: