বহরমপুর, 29 জুন: কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়েই সংসদে বিরোধী বেঞ্চকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চাইছেন । লোকসভার অধ্যক্ষ নির্বাচনের সময় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে ৷ অধ্যক্ষের পদে বিরোধীদের প্রার্থী বাছাই নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি বলে অভিযোগ সামনে আসতেই আসরে নামতে দেখা গিয়েছিল দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের ৷ তৃণমূলকে বুঝিয়ে পাশে টেনে নেওয়া হয়েছিল ৷
কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সেই পথে যে তিনি হাঁটবেন না, তা শুক্রবার আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী ৷ গত এক দশকে তিনি যেভাবে বারবার একাধিক ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সমালোচনা করেছেন, এ দিন আরও একবার মমতার বিরুদ্ধে সেই রকম রণংদেহি মেজাজে দেখা গেল বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদকে ৷ হকার উচ্ছেদ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র সমালোচনা করলেন তিনি ৷
অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘উচ্ছেদের আগে হকারদের সঙ্গে আলোচনা করতে হতো । ফর্মুলা তৈরি করতে হতো । তাঁদের পুর্নবাসনের জায়গা ঠিক করেই উচ্ছেদে নামতে হতো । কলকাতায় কোথায় এত জায়গা আছে বলুন ? রাজ্যে কত হকার আছেন, কত পরিযায়ী শ্রমিক আছেন, উনি জানেন না । আমরা প্রচুর হকারদের জায়গা দিয়েছি বহরমপুর, কান্দি, লালবাগে । এখন উনি বিপাকে পড়ে হকারদের সঙ্গে দ্বিচারিতা করছেন ।’’
উল্লেখ্য, রাজ্যজুড়ে হকার উচ্ছেদ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় তৎপর হয়ে উঠেছেন । হকার উচ্ছেদ নিয়ে একমাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তিনি । বিভিন্ন জায়গা থেকে হকার উচ্ছেদ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে । এ দিন তারই প্রতিবাদ করে সুর চড়ালেন অধীর ।
তাঁর অভিযোগ, ‘‘ভোটে জেতাটাই শেষ কথা নয় । মানুষের মৌলিক সমস্যা সমাধান করতে হয় । সেখানে উনি (মমতা) ব্যর্থ। নির্বাচনে জিতেছেন ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি করে । আমাকে হারাতে হিংসা করতে হয়েছে । ওদের দলের বিধায়ক (হুমায়ুন কবীর) সেকথা স্বীকার করেছেন । বাংলার মানুষ সব জানে । এর হিসাব আপনার কাছে একদিন নেবে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘হকাররা মর্যাদার সঙ্গে ব্যবসা করতে চান। পুলিশের লাঠি, গালিগালাজ শুনে কেউ ব্যবসা করতে চায় ! তোলাবাজি দিতে হয় । মদের বোতলও দিতে হয় । হকার উচ্ছেদ নিয়ে উনি যা বলছেন, তার কোনও তাৎপর্য নেই । মৃতের গায়ে আতর ছড়ানো হচ্ছে ।’’
মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে অধীর বলেন, ‘‘উনি (মমতা) যাদু জানেন না । ফর্মুলা কী ? হকার উচ্ছেদের আগে পরিকল্পনা করা দরকার । হকারদের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার ছিল । পুর্নবাসনের জায়গা ঠিক করা উচিত ছিল । কিছুই করেননি । যখন দেখলেন বাজার খারাপ, তখন দুর্নীতির দুর্গন্ধ ঢাকার জন্য একমাসের নিদান দিয়েছেন ।’’
এআইসিসির সঙ্গে অধীর চৌধুরীর দূরত্ব তৈরি নিয়ে নানা মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে । বিশেষ করে অধীরের সঙ্গে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের সম্পর্ক কিছুটা হলেও তিক্ত পর্যায়ে নেমে এসেছে বলে খবর । এ দিন মমতার বিরুদ্ধে অধীরের তোপ সেই জল্পনাতেই কার্যত শিলমোহর দিল । সংসদে অধীরের অনুপস্থিতিতে যখন আরও কাছাকাছি আসছে কংগ্রেস-তৃণমূল, সেই সময় মমতা বিরোধী এই অবস্থান অধীরের রাজনৈতিক জীবনে কোনও প্রভাব ফেলে কি না, সেটাই দেখার !