বাগদা, 8 জুলাই: লোকসভা নির্বাচনের আগে বাগদার বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন বিজেপির বিশ্বজিৎ দাস ৷ সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে বনগাঁ কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হন তিনি ৷ যদিও বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের কাছে হেরে যান বিশ্বজিৎ ৷ তাঁর বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ায় সেই আসনে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে উপনির্বাচন ৷ আগামী 10 জুলাই হবে নির্বাচন ৷ এই মুহূর্তে সেদিকেই নজর সকলের ৷
উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী এবার আর বিশ্বজিৎ দাস নন ৷ বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে এবার তৃণমূলের তুরুপের তাস ঠাকুরবাড়ির কনিষ্ঠ কন্যা মধুপর্ণা ৷ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর এবং মমতাবালা ঠাকুরের ছোট মেয়ে ৷ বিজেপি প্রার্থী চিকিৎসক বিনয়কৃষ্ণ বিশ্বাস ৷ লোকসভা নির্বাচনে জোটে লড়াই করলেও উপনির্বাচনে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতা করছে বাম ও কংগ্রেস । সেখানে ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন গৌড় বিশ্বাস । কংগ্রেস এখানে প্রার্থী করেছে অশোক হালদারকে । আবার উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীর উপর অনাস্থা দেখিয়ে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন বিক্ষুব্ধ নেতা সত্যজিৎ মজুমদার । ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, নির্বাচনে এই নির্দল প্রার্থী বিজেপির প্রধান কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে কি না, সেদিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের ৷
লোকসভা নির্বাচনে জোর লড়াই দিয়েও আসনটি দখল করতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস । তাই উপনির্বাচনে বাগদা বিধানসভার ভোট দলের কাছে 'প্রেস্টিজ ফাইট' । বাগদার বিভিন্ন এলাকায় চলছে প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তের প্রচার । 2011 সালের পালা বদলের পর দু'বার এখানে সহজ জয় পেলেও তথ্য বলছে 2016 সালের বিধানসভা ভোট থেকে এবারের লোকসভা ভোট পর্যন্ত তৃণমূলের বারবার হার হয়েছে এই বাগদায় । প্রথমে তৃণমূলত্যাগী নেতা দুলাল বর, পরে তৃণমূল ছেড়ে গিয়ে বিশ্বজিৎ দাসকে এখান থেকে বিজেপির টিকিটে জিততে দেখা গিয়েছে ।
2016 সালে এই আসনে বিজেপি জিতেছিল 1 লক্ষ 22 হাজার 36 ভোটে। 2021 সালে বিজেপির জয়ের ব্যবধান ছিল 9 হাজার 792 । তবে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে এই আসনে তৃণমূলের থেকে 20 হাজার 614 ভোটে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি ৷ উপনির্বাচনে সেই ব্যবধান টপকে জয়ের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস । লোকসভা নির্বাচনে জিতলেও উপনির্বাচনে এখানে বিজেপি বড় স্বস্তিতে রয়েছে তেমনটা নয় । স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এবারের ভোটে বিজেপির অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্দল । স্থানীয়দের দাবি ছিল 'ভূমিপুত্র' সত্যজিৎ মজুমদারকে প্রার্থী করা হোক । তবে দল তাঁকে টিকিট না-দেওয়ায় নির্দল হিসেবেই নির্বাচনে লড়াই করছেন তিনি । এমনকি উপনির্বাচনে তাঁর মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বিজেপি নেতাদের একাংশের উপস্থিতিও চোখে পড়েছিল । যদিও গেরুয়া শিবির সেসবে আমল দিতে নারাজ ।
বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এবং সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মন্ডল মিলে দলের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছেন । অপরদিকে, এখানে বামেদের তরফে প্রার্থী হয়েছেন বাগদায় 5 বারের বিধায়ক কমলক্ষী বিশ্বাসের ছেলে গৌর বিশ্বাস । 'ভূমিপুত্র' হিসেবে তাঁরও একটা নির্দিষ্ট জনসমর্থন রয়েছে ৷ যদিও লোকসভা নির্বাচনে 5 হাজারের বেশি ভোট পায়নি বাম-কংগ্রেস জোট । স্থানীয় বাম নেতৃত্বের মতে, বামপন্থী মানুষের সমর্থন তাঁর দিকেই রয়েছে । অন্যদিকে, জয় নিশ্চিত করতে কোনও রকম খামতি রাখছে না তৃণমূল । স্থানীয় এবং জেলার নেতৃত্ব তো রয়েছেই । রাজ্য নেতৃত্ব থেকেও নিয়মিত বাগদায় বাড়তি সময় দেওয়া হচ্ছে বলে খবর ।
মধুপর্ণা ঠাকুরের এই ধরনের নির্বাচনে লড়াইয়ের অতীত অভিজ্ঞতা নেই । সদ্য 25-শে পা দেওয়া ঠাকুরবাড়ির এই সদস্যকে এখানে প্রার্থী করার পিছনে তৃণমূল কংগ্রেসের মূল ভাবনা ছিল মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক । ভুলে গেলে চলবে না সীমান্ত লাগোয়া এই বিধানসভার একটা বড় অংশ মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ । তাই এই আসনে ভোটের লড়াইয়ে ঠাকুরবাড়ির বড় ভূমিকা রয়েছে । আর তাই এই হারা আসন জেতার জন্য মধুপর্ণাকে সামনে রেখে লড়াই করছে তৃণমূল কংগ্রেস । মধুপর্ণার উপর এবার বাজি ধরেছেন খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই ভোটে মধুপর্ণা জিতলে তিনি হবেন এই মুহূর্তে রাজ্যের কনিষ্ঠ বিধায়ক ।
যাঁকে নিয়ে এত চর্চা তিনি বলেন, "দাদুর আমল থেকে রাজনীতি আমাদের পরিবারের ধমনীতে রয়েছে । বাবা সাংসদ ছিলেন । মা প্রথমে লোকসভার সাংসদ হয়েছিলেন ৷ এখন রাজ্যসভার সাংসদ । তিনিই আমার শক্তি । মাকে দেখেই রাজনীতিতে আসা । সিএএ নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে বিজেপি । আমরা চাই নিঃশর্ত নাগরিকত্ব । আমি মতুয়াদের জন্য এবং বাগদার মানুষের জন্য কিছু করতে চাই । সেটা করতে পারলে ঠাকুরবাড়ির নাম হবে । আমার দাদুর নাম হবে । শুধু কথার কথা তো নয়, 20 হাজার 614 ভোটের ব্যবধান টপকে জেতা মোটেই সহজ বিষয় নয় ।"
ইতিমধ্যেই এই উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জেতাতে ময়দানে নেমেছেন শুভেন্দু অধিকারী, সুজন চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিমরা । শাসক দলের তরফেও এখানে ঘুরে গিয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, সুজিত বসু, নির্মল ঘোষ, পার্থ ভৌমিক, রাজীব বন্দোপাধ্যায়রা । রাজ্যসভার সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর নিজের মতন করে মেয়ের হয়ে প্রচার করছেন । কিন্তু এরপরেও মধুপর্ণা শেষ রক্ষা করতে পারবেন কি না, তা জানার জন্য অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে 13 জুলাই পর্যন্ত ।