ETV Bharat / opinion

আত্মনির্ভরতায় বদলে যাচ্ছে দেশের প্রতিরক্ষা মানচিত্র, পড়ুন বিস্তারিত বিশ্লেষণ

Aatma Nirbharta in Defence: প্রতিরক্ষা উৎপাদনে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর আমদানি শুরু হয় 2014 সালে ৷ তারপর থেকে ক্রমশ বেড়েছে গ্রাফটা ৷ ক্রমশ বেড়েছে প্রতিরক্ষা উৎপাদন । 2017 সালে যা ছিল 740 কোটি টাকা, 2023 সালে সেটাই গিয়ে দাঁড়িয়েছে এক লক্ষ কোটিরও বেশি । লিখলেন প্রাক্তন মেজর জেনারেল হর্ষ কাঁকর।

Etv Bharat
Etv Bharat
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 5, 2024, 10:00 AM IST

হায়দরাবাদ: সালটা 2019 ৷ অক্টোবরে ডিআরডিও’র 41তম সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত বলেছিলেন, ‘‘ভারত বৃহত্তম অস্ত্র ও গোলাবারুদ আমদানিকারক ৷ স্বাধীনতার 70 বছর পরেও এই শিরোপা খুব একটা গর্বের নয় ।’’ তিনি সেদিন এও বলেছিলেন যে আমরা আত্মবিশ্বাসী, দেশীয় অস্ত্র ব্যবস্থা নিয়ে পরবর্তী যুদ্ধে লড়ব এবং জিতব ।’’

ওইদিনের প্রায় পাঁচ বছর পর গত সপ্তাহে, বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পাণ্ডে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী 2025 সালের মধ্যে 230টি চুক্তি পূরণ করতে 340টি দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে সহযোগিতা করছে । যাতে ব্যয় হবে 2.5 লক্ষ কোটি টাকা । ভারতীয় নৌবাহিনী গত বছর অক্টোবরে একটি বিবৃতি জারি করেছিল ৷ যাতে বলা হয়েছে, ‘‘2047 সালের মধ্যে ‘আত্মনির্ভরতা’ অর্জনের লক্ষ্যে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মাধ্যমে স্বদেশীকরণ বাড়ানোর জন্য একটি বিশদ রোডম্যাপে কাজ শুরু হবে ।’’ নৌবাহিনীর বর্তমান প্রধান অ্যাডমিরাল হরি কুমারের মুখেও একই কথা শোনা গিয়েছিল ৷

আত্মনির্ভরতায় বদলাচ্ছে প্রতিরক্ষার মানচিত্র...

প্রতিরক্ষা উৎপাদনে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর আমদানি শুরু হয় 2014 সালে ৷ গত কয়েক বছরে আস্তে আস্তে বদলেছে দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের সামগ্রিক চিত্র ৷ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের কর্পোরেটাইজিং পরিবর্তন থেকে ব্যক্তিগত মালিকানার আমদানি, বদলে গিয়েছে দেশের প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ল্যান্ডস্কেপটাই । তারপর থেকে ক্রমশ বেড়েছে গ্রাফটা ৷ ক্রমশ বেড়েছে প্রতিরক্ষা উৎপাদন । 2017 সালে যা ছিল 740 কোটি টাকা, 2023 সালে সেটাই গিয়ে দাঁড়িয়েছে এক লক্ষ কোটিরও বেশি ।

ক্রমাগত বাড়ছে প্রতিরক্ষা খাতে রফতানি...

2023 সালের মে মাসে প্রকাশিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার জানায় ক্রমশ বাড়ছে ভারতের প্রতিরক্ষা রফতানি ৷ 2013-14 অর্থবর্ষে যা ছিল 686 কোটি টাকা, 2022-23 অর্থবর্ষে সেটাই গিয়ে দাঁড়িয়েছে 16,000 কোটি টাকায় । গত বছরের নভেম্বরে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ তিনি জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছরে 35,000 কোটি টাকার রফতানি করবে ভারত ।

ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিদেশী উৎস থেকে প্রতিরক্ষা ক্রয়ও হ্রাস পেয়েছে ৷ 2018-19 সালে 46% থেকে 2022 সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে 36.7% । আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা খাতে 75% বাজেট দেশীয় খাত থেকে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৷ তার আগের বছর যা ছিল 68% । গত তিনটি অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা খাতে 122টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ৷ যার মধ্যে 100টি চুক্তি হয়েছে ভারতীয় সরবরাহকারীদের সঙ্গে ৷

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় প্রযুক্তির উপর আত্মনির্ভরতা বাড়াতে হবে ৷ অন্তত প্রতিরক্ষারর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আমদানির উপর ভরসা করা ‘গ্যাম্বলিং’ ৷ কারণ, কোনও কারণে আমদানিকৃত দেশ থেকে পণ্য (প্রতিরক্ষা পণ্য) আসা বন্ধ হয়ে গেলে বা তাতে দেরি হলে, দেশের সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে পড়বে ৷ এবং এই বিষয়ের সঙ্গে কোনওপ্রকার আপোষ চলে না ৷

প্রাসঙ্গিক রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত...

জেনারেল অনিল চৌহান, সিডিএস বলছেন, ‘‘আমরা অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে পারি না । রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে ৷ একটি জাতিকে অবশ্যই তার নির্দিষ্ট ভূখণ্ড এবং সুরক্ষার প্রয়োজনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে । ইউক্রেন প্রতিরক্ষা পণ্যের চাহিদার জন্য পশ্চিমের উপর নির্ভরশীল ৷ সেই পণ্য সরবরাহে ঘাটতি (নাকি পশ্চিমী কিছু দেশের অনিহা) তার যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির জন্য অনেকাংশে দায়ী ।

শুধু তাই নয়, পশ্চিমের দেশগুলি ইউক্রেনকে যে অস্ত্র সরবরাহ করে, তা অন্যত্র অপারেশনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে ৷ সেকারণেই ইউএস অ্যাব্রাম ট্যাঙ্কগুলি খুব বেশি সফল হয়নি । যা ইউক্রেনকে আরও সংকটে ঠেলে দিয়েছে । অন্যদিকে রাশিয়ার দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্প বেশিরভাগ প্রতিরক্ষা চাহিদা পূরণ করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ৷ এইভাবে উত্তর কোরিয়া, ইরান এবং চিনও তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে দেশীয় শিল্পেই চাহিদা পূরণ করে ।

আরও পড়ুন:

হায়দরাবাদ: সালটা 2019 ৷ অক্টোবরে ডিআরডিও’র 41তম সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত বলেছিলেন, ‘‘ভারত বৃহত্তম অস্ত্র ও গোলাবারুদ আমদানিকারক ৷ স্বাধীনতার 70 বছর পরেও এই শিরোপা খুব একটা গর্বের নয় ।’’ তিনি সেদিন এও বলেছিলেন যে আমরা আত্মবিশ্বাসী, দেশীয় অস্ত্র ব্যবস্থা নিয়ে পরবর্তী যুদ্ধে লড়ব এবং জিতব ।’’

ওইদিনের প্রায় পাঁচ বছর পর গত সপ্তাহে, বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পাণ্ডে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী 2025 সালের মধ্যে 230টি চুক্তি পূরণ করতে 340টি দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে সহযোগিতা করছে । যাতে ব্যয় হবে 2.5 লক্ষ কোটি টাকা । ভারতীয় নৌবাহিনী গত বছর অক্টোবরে একটি বিবৃতি জারি করেছিল ৷ যাতে বলা হয়েছে, ‘‘2047 সালের মধ্যে ‘আত্মনির্ভরতা’ অর্জনের লক্ষ্যে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মাধ্যমে স্বদেশীকরণ বাড়ানোর জন্য একটি বিশদ রোডম্যাপে কাজ শুরু হবে ।’’ নৌবাহিনীর বর্তমান প্রধান অ্যাডমিরাল হরি কুমারের মুখেও একই কথা শোনা গিয়েছিল ৷

আত্মনির্ভরতায় বদলাচ্ছে প্রতিরক্ষার মানচিত্র...

প্রতিরক্ষা উৎপাদনে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর আমদানি শুরু হয় 2014 সালে ৷ গত কয়েক বছরে আস্তে আস্তে বদলেছে দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের সামগ্রিক চিত্র ৷ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের কর্পোরেটাইজিং পরিবর্তন থেকে ব্যক্তিগত মালিকানার আমদানি, বদলে গিয়েছে দেশের প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ল্যান্ডস্কেপটাই । তারপর থেকে ক্রমশ বেড়েছে গ্রাফটা ৷ ক্রমশ বেড়েছে প্রতিরক্ষা উৎপাদন । 2017 সালে যা ছিল 740 কোটি টাকা, 2023 সালে সেটাই গিয়ে দাঁড়িয়েছে এক লক্ষ কোটিরও বেশি ।

ক্রমাগত বাড়ছে প্রতিরক্ষা খাতে রফতানি...

2023 সালের মে মাসে প্রকাশিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার জানায় ক্রমশ বাড়ছে ভারতের প্রতিরক্ষা রফতানি ৷ 2013-14 অর্থবর্ষে যা ছিল 686 কোটি টাকা, 2022-23 অর্থবর্ষে সেটাই গিয়ে দাঁড়িয়েছে 16,000 কোটি টাকায় । গত বছরের নভেম্বরে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ তিনি জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছরে 35,000 কোটি টাকার রফতানি করবে ভারত ।

ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিদেশী উৎস থেকে প্রতিরক্ষা ক্রয়ও হ্রাস পেয়েছে ৷ 2018-19 সালে 46% থেকে 2022 সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে 36.7% । আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা খাতে 75% বাজেট দেশীয় খাত থেকে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৷ তার আগের বছর যা ছিল 68% । গত তিনটি অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা খাতে 122টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ৷ যার মধ্যে 100টি চুক্তি হয়েছে ভারতীয় সরবরাহকারীদের সঙ্গে ৷

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় প্রযুক্তির উপর আত্মনির্ভরতা বাড়াতে হবে ৷ অন্তত প্রতিরক্ষারর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আমদানির উপর ভরসা করা ‘গ্যাম্বলিং’ ৷ কারণ, কোনও কারণে আমদানিকৃত দেশ থেকে পণ্য (প্রতিরক্ষা পণ্য) আসা বন্ধ হয়ে গেলে বা তাতে দেরি হলে, দেশের সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে পড়বে ৷ এবং এই বিষয়ের সঙ্গে কোনওপ্রকার আপোষ চলে না ৷

প্রাসঙ্গিক রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত...

জেনারেল অনিল চৌহান, সিডিএস বলছেন, ‘‘আমরা অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে পারি না । রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে ৷ একটি জাতিকে অবশ্যই তার নির্দিষ্ট ভূখণ্ড এবং সুরক্ষার প্রয়োজনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে । ইউক্রেন প্রতিরক্ষা পণ্যের চাহিদার জন্য পশ্চিমের উপর নির্ভরশীল ৷ সেই পণ্য সরবরাহে ঘাটতি (নাকি পশ্চিমী কিছু দেশের অনিহা) তার যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির জন্য অনেকাংশে দায়ী ।

শুধু তাই নয়, পশ্চিমের দেশগুলি ইউক্রেনকে যে অস্ত্র সরবরাহ করে, তা অন্যত্র অপারেশনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে ৷ সেকারণেই ইউএস অ্যাব্রাম ট্যাঙ্কগুলি খুব বেশি সফল হয়নি । যা ইউক্রেনকে আরও সংকটে ঠেলে দিয়েছে । অন্যদিকে রাশিয়ার দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্প বেশিরভাগ প্রতিরক্ষা চাহিদা পূরণ করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ৷ এইভাবে উত্তর কোরিয়া, ইরান এবং চিনও তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে দেশীয় শিল্পেই চাহিদা পূরণ করে ।

আরও পড়ুন:

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.