কলকাতা, 17 নভেম্বর: পঞ্চায়েত সমিতির ন'টি কমিটির ন'জন স্থায়ী বিজেপি সদস্যকে বেআইনি ভাবে সরানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে ৷ তার জন্য অনাস্থা প্রস্তাব সংক্রান্ত বৈঠকও ডাকা হয়েছে । এমনই দাবি করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্থায়ী সমিতির সদস্যরা ৷ শুক্রবার এগরা 2 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির এই মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রবি কৃষণ কাপুরের বেঞ্চে ৷
এই মামলায় বিচারপতি সব পক্ষকে তাদের বক্তব্য হলফনামা দিয়ে আদালতে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন ৷ সেটি দেখার পর সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি ৷ আগামী 9 ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি ৷ একক বিচারপতির এই নির্দেশের বিরুদ্ধে বিচারপতি মধুরেশ প্রসাদ ও বিচারপতি সুপ্রতীম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছিলেন মামলাকারীরা ৷ সেখানেও সুরাহা মেলেনি ৷ আগামী 14 ডিসেম্বর এগরা 2 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির অনাস্থা প্রস্তাব সংক্রান্ত সভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ৷
মামলাকারীদের আইনজীবীরা আদালতে বলেন, পঞ্চায়েত আইনের 17(6)বি ধারায় সাবডিভিশনাল অফিসারকে এই ধরনের অনাস্থা প্রস্তাব ডাকার আগে যে সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের সমিতির দফতর এবং তাঁদের স্থায়ী ঠিকানায় চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানাতে হয় ৷ পাশাপাশি স্থায়ী সমিতির কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হলে পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ বা মহকুমা পরিষদের অন্তত তিনজন সদস্যের স্বাক্ষর লাগে ৷ এখানে সেটা হয়নি।
পাল্টা রাজ্যের বক্তব্য, কর্তৃপক্ষ আইন মেনেই এই নোটিশ দিয়েছে ৷ তারপর আই(এফ) নামে একটি ফর্ম সব সদস্যকেই দেওয়া হয়েছে ৷ সদস্যরা তা ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছেন ৷ ফলে আইনের বাইরে কিছুই করা হয়নি ৷ এই পরিস্থিতিতে অনাস্থা প্রস্তাবের সভার উপর যেন স্থগিতাদেশ জারি করা না হয় ৷
বিচারপতি রবি কৃষণ কাপুর সব দিক খতিয়ে দেখে নির্দেশ দেন, আদালতের কাছে এখনও পর্যন্ত কোনও কিছু বেআইনি হয়েছে বলে নজরে আসেনি ৷ তবে দু'পক্ষই তাদের হলফনামা দিয়ে বক্তব্য জানাক ৷ 9 ডিসেম্বর বিশেষভাবে শুনানির জন্য মামলাটি তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে ৷ ওই দিন ফের শুনানি হবে ৷
2023 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এগরা-2 পঞ্চায়েত সমিতির 24টি আসনের মধ্যে 12টিতে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল ৷ বাকি 12 আসন জিতেছিল বিজেপি ৷ লটারির মাধ্যমে সভাপতির আসন পায় তৃণমূল ৷ সহ-সভাপতির দায়িত্ব পায় বিজেপি ৷ কিন্তু স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচনে কাঁথির তৎকালীন সাংসদ শিশির অধিকারীর ভোট যায় বিজেপির পক্ষে ৷ তখনও তিনি খাতায়-কলমে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ এছাড়া মেদিনীপুরের তৎকালীন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ এবং উত্তর কাঁথির বিজেপি বিধায়ক সুমিতা সিংহের ভোটের ফলে সব ক’টি কমিটিরই দখল নিয়েছিল বিজেপি ৷
এর মধ্যে চলতি বছরের মে-জুন মাসে লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর থেকে জয়ী হন তৃণমূল সাংসদ জুন মালিয়া ৷ ক'দিন আগে ওই এগরা 2 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির ন'টি কমিটিতে ফের ভোটাভুটি হয় ৷ তৃণমূল সাংসদ জুন মালিয়ার ভোটে পঞ্চায়েত সমিতির ন'টি স্থায়ী কমিটির ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে তৃণমূল ৷ তারপরই ন'টি কমিটির 9 জন স্থায়ী সদস্যদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ এ নিয়েই দায়ের হয়েছে মামলা ।